দূর্গাপূজাকে সামনে রেখে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ১২৬টি মন্দিরে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ

রিমন রাজভর, গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি:

শরৎ এসেছে। দুলছে কাশফুল। ফুটেছে শেফালী আর পদ্ম। সাড়া পড়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের পাড়ায় পাড়ায়। আসছেন মা দূর্গা, মেতে ওঠো শারদীয় দূর্গোৎসবে। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা শারদীয় দুর্গোৎসবের জন্য মন্দিরে মন্দিরে চলছে শেষ সময়ের প্রস্ততি। এ বছর গাইবান্ধা জেলার ৭টি উপজেলায় ৬৬৫টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। শারদীয় পূজা উপলক্ষে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলার সর্বত্র নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পূজাকে সামনে রেখে বিভিন্ন মন্দিরে প্রতিমা তৈরির পাশাপাশি চলছে আলোকসজ্জা ও ছাউনি তৈরির কাজ। প্রতিমা শিল্পীরা দিন-রাত জেগে কাদা-মাটি, খড়-কাঠ আর সুতলি দিয়ে তৈরি করছেন দূর্গা, লক্ষ্মী, স্বরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, অসুর, মহিষ, সিংহের মৃন্ময় মূর্তি প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ১৪ অক্টোবর দেবীর বোধনের মধ্যদিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এ মহোৎসব শুরু হবে। সূত্র জানায়, জেলার ৭টি উপজেলায় এ বছর ৬৬৫টি মন্দিরে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। ৭টি উপজেলার মধ্যে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ১২৫টি, সুন্দরগঞ্জে ১৪৯টি, গোবিন্দগঞ্জে ১২৬টি, সাদুল্যাপুরে ১০৯টি, পলাশবাড়িতে ৬৮টি, সাঘাটায় ৭০টি এবং ফুলছড়িতে ১৮টি মন্দিরে পূজার আয়োজন করা হচ্ছে। গোবিন্দগঞ্জ শহরের গোলাপবাগ কেন্দ্রীয় মন্দিরে প্রতিমা শিল্পী রনজিত বর্মণ জানান, দূর্গা পূজার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে দূর্গা প্রতিমা। আর এই প্রতিমা তৈরির জন্য আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকেন বিভিন্ন মন্দিরের পূজা আয়োজক কমিটি। তাই মনোমুগ্ধকর ও নিখুঁতভাবে কাজ ফুটিয়ে তুলতেই সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়ে কাজ করছেন তারা। শহরের ঠাকুরবাড়ী মন্দিরের প্রতিমা শিল্পী জানান, এখন প্রতিমা তৈরিতে মাটির কাজ চলছে। এবার তিনি ১২টি প্রতিমার কাজ হাতে নিয়েছেন। ১২ অক্টোবরের মধ্যে সবগুলো প্রতিমার কাজ শেষ করতে হবে। বিভিন্ন মন্দিরে গিয়ে আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের একটি প্রতিমা তৈরিতে শিল্পীদের ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত মজুরি দিতে হচ্ছে। এছাড়া আলোকসজ্জা, তোরণ ও প্যান্ডেল তৈরিতে বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয় হবে। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্রী তয়ন কুমার দে জানান, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় এ বছর ১২৬টি মন্ডপে পূজার প্রস্তুতি চলছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর সদর উপজেলায় ২টি পূজা বেশি হবে। আশা করছি শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপিত হবে। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর প্যানেল মেয়র রিমন কুমার তালুকদার জানান, এ বছর উপজেলায় ১২৬টি মন্ডপে শারদীয় দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে, তবে আমরা ১২৪টি পূজা মন্ডপের কাগজ হাতে পেয়েছি, আরো ২টি এখনও হাতে পাইনি তবে দু একদিনের ভিতরের এই দুইটা পূজা মন্ডপের কাগজ হাতে পাব। প্রশাসন আমাদের যেভাবে সহযোগিতা করছেন তাতে পূজা সুন্দর ভাবে পালিত হবে। ১৪ অক্টোবর দেবী বোধনের মাধ্যমে শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হবে। ১৮ অক্টোবর নবমী ও ১৯ অক্টোবর বিজয়া দশমী প্রতিমা বিসর্জনে মধ্যে দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনের শারদীয় এই উৎসব। এ ব্যাপারে গাইবান্ধা পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান মিয়া জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দুর্গা পূজা উদযাপনের জন্য জেলা ও উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে। প্রতিমা তৈরি কালীন যাতে প্রতিমার কোনো প্রকার ক্ষতি না হয় সেজন্য আয়োজক কমিটিকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে এবং পুলিশ প্রশাসন সতর্ক রয়েছে। তিনি আরও বলেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তাদের ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করতে পারেন সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আশা করছি প্রতি বছরের মতো এবারও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment