হিংসে করার মতো এক রেকর্ড শোভা পাচ্ছিল স্পেনের নামের পাশে। ২০০৩ সাল থেকে নিজেদের মাটিতে অপরাজিত স্পেনের রথ থামাল ইংল্যান্ড। ১৫ বছর ধরে নিজেদের লালন করা রেকর্ডের পরিসমাপ্তি ঘটল বেনিতো ভিয়ামেরিনের মাঠে। শেষ পর্যন্ত মরিয়া লড়াই করে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা বৃথা গেছে। অধিনায়ক সার্জিও রামোসের আরও একটি যোগ করা সময়ের গোলও স্পেনকে বাঁচাতে পারেনি। উয়েফা নেশনস লিগে কাল ৩-২ গোলে ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছে স্পেন।
বছরের হিসাবে ১৫ বছর, আর দিনের হিসাবে ৫৬০৯ দিন। নিজেদের মাটিতে কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে হেরে যাওয়ার অভিজ্ঞতা স্পেনের এই দলের কারও ছিল না। সর্বশেষ ২০০৩ সালে হারের মুখ দেখতে হয়েছিল স্পেন দলকে, সার্জিও রামোসেরই অভিষেক হয়েছিল এর দুই বছর পর। ইউরো বাছাইপর্বে গ্রিসের বিপক্ষে সেই হারের পর নিজেদের মাটিতে তিনটি প্রীতি ম্যাচে হারলেও তারা অপরাজিত ছিল ৩৮টি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে। সেই যাত্রাই থেমে গেল কাল। শুধু তা-ই নয়, নিজেদের ১০০ বছরের ফুটবল ইতিহাসে নিজেদের মাটিতে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে এই প্রথম তিন গোল হজমও করতে হলো। বার্সেলোনা কোচ থাকার সময় লুইস এনরিকের রক্ষণকৌশল নিয়ে অনেকবার প্রশ্ন উঠেছে। জাতীয় দলের কোচ হয়ে ফেরা এনরিকে আবারও স্প্যানিশ মিডিয়ার তিরে বিদ্ধ হচ্ছেন।
শুরুতেই ইংল্যান্ডকে চেপে ধরেছিল স্পেনই। কিন্তু জর্ডান পিকফোর্ডের গোলকিপিংয়ের কাছে বারবার পরাজিত হতে হয়েছে অ্যাসেনসিও, রদ্রিগো, আসপাসকে। ১৬ মিনিটের মাথায় মার্কাস রাশফোর্ডের বাড়ানো বলে গোল করে সূচনা করেন রহিম স্টার্লিং। ২০১৫ সালের ইউরো বাছাইয়ের পর এই প্রথম ইংল্যান্ডের জার্সিতে গোল করলেন এই ফরোয়ার্ড। তাঁর এই গোলটি ছিল ৩১ বছর পর স্পেনের মাটিতে ইংল্যান্ড প্রথম গোলও। গ্যারি লিনেকার ছিলেন জাতীয় দলের হয়ে স্পেনে গোল করা সর্বশেষ ইংলিশ। সেটা ছিল ইংল্যান্ডের সর্বশেষ জয়ও।
এসব রেকর্ডের কারণেই পরিষ্কার ফেবারিট ছিল স্পেন। কাল জিতলে নতুন চালু হওয়া টুর্নামেন্ট নেশনস লিগের সেমিফাইনালে প্রথম দল হিসেবে উঠে যেত তারা। স্টার্লিংয়ের গোলের পরও স্পেন বোঝেনি, কী ঝড় আসতে চলেছে। পরের দুই গোলে অবদান ছিল অধিনায়ক হ্যারি কেনের। ২৯ ও ৩৮ মিনিটে আরও দুই গোল হজম করে প্রথমার্ধেই তারা ৩-০ গোলে পিছিয়ে! পরের গোল দুটি মার্কাস রাশফোর্ড ও রহিম স্টার্লিংয়ের। স্টার্লিং ম্যাচে জোড়া গোল করেছেন।
দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের ফেরানোর চেষ্টা করলেও ততক্ষণে বড্ড দেরি হয়ে গেছে। নতুন করে নিজেকে খুঁজে পাওয়া পাকো আলকাসের মাঠে নামার পরেই দৃশ্যপট বদলাতে শুরু করে। ৫৮ মিনিটে পাকো আলকাসের ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে এই মৌসুমে ৬ ম্যাচে ১০ গোল করে ফেললেন। বার্সেলোনা থেকে ধারে বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডে চলে যাওয়া আলকাসের স্পেনের গত ৬ গোলের ৪টিতেই অবদান রেখেছেন। ৩ গোল ও ১ অ্যাসিস্ট করে। শেষ মিনিটে অধিনায়ক সার্জিও রামোস গোল করেছেন, যোগ করা সময়ে গোল করায় সুখ্যাতি আছে যাঁর। কিন্তু তাতে ব্যবধান ৩-২ হয়েছে, হার আর এড়াতে পারেনি স্পেন।
ইংল্যান্ড মধুর প্রতিশোধ নিয়েছে। এক মাস আগেই ইংল্যান্ডের নিজেদের মাটিতে ২৪ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিল স্পেন।