প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নিয়েই অভিশপ্ত হলো মহিনের জীবন।

 শারমিন আক্তার (ভোলা প্রতিনিধি)

“সকলের তরে সকলে আমরা,প্রত্যেকে আমরা পরের তরে”। এই কথা গুলো যেন বর্তমান সময়ে কেবল বইয়ের পাতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বলতে যাচ্ছি এক অভাগার জীবনের বাস্তবময় করুণ কাহিনী। ভাগ্য যাকে বার বার ঠকিয়েছে নানা কৌশলে। তার প্রথম পাঁপই যেন হলো,সে প্রতিবন্ধী নামক অভিশাপে অভিশপ্ত হয়ে এই পৃথিবীতে এসেছে। আর প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেয়াটাই হলো তার জীবনের সব চাইতে বড় কাল! ভোলা সদর উপজেলায়,আলীনগর ইউনিয়নের, ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা-নাম মহিন, পিতা- মোঃনুরুল ইসলাম ও মাতা -রুমা বেগমের ঘরে জন্ম নেয় এই অভাগা।প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেয়ার কারণে তার পিতামহের কাছে জন্মের শুরু থেকেই অপছন্দের সে। মহিনের বয়স যখন তিন বছর তখন তার বাবা মার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। একেই বলে ভাগ্যের লেখন,একে তো শারীরিক প্রতিবন্ধী তার উপর আবার পরিবারে এমন ভাঙ্গন! বিচ্ছেদের পর থেকে মহিনের বাবা মহিনের কোন খোঁজ খবর নেন নি। মা দারিদ্র্যতার তাগিদে, মহিনকে তার নানা-নানীর কাছে রেখে পারি দিলেন ঢাকা শহর। পেটের ক্ষুধা সে তো কারো কথা শুনে না। জন্মের পর থেকে বিছানায় পরে থাকা মহিন,এরপর থেকে একটু একটু করে নানা-নানীর কাছে বড় হতে লাগলো। নানা মোঃ মিন্টু রিক্সা গ্যারেজের মেকানিক।যার তিন বেলা ভাতের জোগার করতেই হিমশিম খেতে হয়, সে কি করে মহিনের মতো শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধীকে সঠিক চিকিৎসা করাবেন! তার কাছে মহিন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি অশ্রুভেজা চোখে বলেন- আমি গরিব হতে পারি,হয়তো ভালো কোন ডাক্তার দেখাতে পারি না। কিন্তু মহিনের সামান্য জ্বর হলে ঘরের বাজার না করে আমি আগে নাতীর জন্য ঔষধ আনি। নানির আদরের মহিনকে বুকে জরিয়ে বিবি হালিমা (নানি) বলেন,বেঁচে থাকতে আমি শুধু আমার মহিনকে একটু ভালো আশ্রয়স্থলে রেখে যেতে চাই। সে এক স্পর্শকাতর পরিবেশ! নানা রকম দুঃখ,দুর্দশার মধ্য দিয়ে নানির স্নেহের মহিন এখন ১০ বছরে পা দিলো।পেলো না বাবার সৌহার্দ্য,কপালে জুটলো না মায়ের ভালোবাসা। শেষ অবলম্বন নানা-নানি, যারা নিজেদের সবটুকু দিয়ে মহিনকে বাঁচিয়ে রাখার যুদ্ধ করে যাচ্ছেন বছরের পর বছর। সমাজের বিত্তবানদের একটু সাহায্যের প্রতিক্ষায় মহিন ও তার পরিবার। তবে এতো সব কষ্টের মধ্যে আশার আলো দেখালেন স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এবং আওয়ামীলীগের নির্বাহী সদস্য মোঃ বশির আহম্মেদ। তিনি মহিনকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেবার জন্য সকল প্রকার সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ভোলা সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোঃ কামাল হোসেন জানান-মহিন ও তার পরিবারকে সরকারি সকল প্রকার সাহায্যের জন্য তিনি তাদের পাশে আছেন।সব রকম বাঁধা-বিপত্তি পেরিয়ে আজও যারা মহিনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ক্রমাগত লড়ে যাচ্ছেন, তাদের দুঃখের দিন যাতে খুব দ্রুত লাঘব হয় এই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment