সুপ্রিম কোর্টের সম্মতি নিয়ে ভারতের মহারাষ্ট্রে এক বাঘিনীকে হত্যা করেছে সেখানকার বন বিভাগ। গতকাল শুক্রবার রাতে রাজ্যের বোরাতি জঙ্গলে গুলি করে বাঘিনীটিকে হত্যা করা হয়। গত দুই বছরে এই বাঘিনী ১৩ ব্যক্তিকে হত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, হত্যার শিকার এই বাঘিনীর নাম অবনি। সরকারি নথিপত্রে এর পরিচয় ‘টি১’ হিসেবে। গত সেপ্টেম্বর মাসে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে জঙ্গলে বড় ধরনের অভিযান চালিয়েছিল বন বিভাগ। তবে সে যাত্রায় অবনিকে বশে আনা সম্ভব হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাঘিনীকে ধরার জন্য বিশেষ কৌশলের আশ্রয় নেয় বন বিভাগ। ড্রোনের মাধ্যমে বাঘিনীর রাত্রিযাপনের ঝোপ চিহ্নিত করা হয়। পরে সেই ঝোপের আশপাশে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা বিশেষ ধরনের পারফিউম ছিটিয়ে দেওয়া হয়। ওই পারফিউমের ঘ্রাণে আকৃষ্ট হয়ে অবনি ঝোপ থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে। এ সময় দক্ষ শিকারি আজগর আলীর গুলিতে এটি লুটিয়ে পড়ে। গুলি করার সময় অবনি ১০ মাস বয়সী দুটি শাবক দ্বারা বেষ্টিত ছিল বলে বন বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে।
বন বিভাগের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রায় তিন মাস ধরে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সঙ্গে নিয়ে ১৫০ জন কর্মী, হাতি, ট্র্যাকার বিশেষজ্ঞ ও শুটার এই বাঘিনীকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছিল। সর্বশেষ শুক্রবারের অভিযানে বন কর্মকর্তাদের একটি দল ট্র্যাপ ক্যামেরা, ড্রোন, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরের দল ও হ্যাং-গ্লাইডারের সহায়তায় অবনিকে খুঁজতে নামে। এই অভিযানে শিকারি শাফাত আলী খানকেও নিয়োগ দেওয়া হয়।
অবনিকে ২০১২ সালে প্রথম যভাতমলের জঙ্গলে দেখা যায়। গত দুই বছর ওই জঙ্গলে যে ১৩ ব্যক্তির মরদেহ পাওয়ার যায়—ডিএনএ টেস্টে জানা গেছে তার মধ্যে অন্তত পাঁচ ব্যক্তির মৃত্যু এই বাঘিনীর আক্রমণে হয়েছিল। তবে গত কয়েক বছর ধরে ওই এলাকায় জীববিজ্ঞানী ও বন বিভাগের কর্মকর্তারা একটি জরিপ চালায়। তাতে উঠে আসে ভিন্ন তথ্য। গবেষক দল জানিয়েছিলেন, জঙ্গলে একটি মাত্র বাঘ আছে, আর তা হলো একটি পুরুষ। ওই বাঘের ডিএনএ মানুষের মরদেহের সঙ্গে পাওয়া গিয়েছিল বলে জানানো হয়।
অবশ্য গত মাসে বোম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চ ভিন্ন একটি পিটিশনে সাড়া দেন। ওই পিটিশনে বাঘিনীকে হত্যা করার পরিবর্তে জীবিত ধরার পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু শুক্রবারের ওই অভিযানে নাগপুর বেঞ্চের সেই পর্যবেক্ষণ মানা হয়নি। বরং গত সেপ্টেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট টি১-কে দেখা মাত্রই গুলি চালানো যেতে পারে বলে যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন তারই প্রতিফলন ঘটল।