পত্রিকা বিক্রী করে চলছে ঝুমু রানী দাসের জীবন  ।

উজ্জল চক্র বত্তী রাজবাড়ী প্রতিনিধী ঃ

রাজবাড়ী শহরের নিউ কলোনী এলাকার বাসিন্দা ঝুমু রানী দাস জীবিকার তাগিদে আর একমাত্র সন্তানকে মানুষ করতে বাই সাইকেলআর পত্রিকা নিয়ে ছুটে চলছেন শহরের এক প্রান্ত থেকে আর অন্য প্রান্তে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পত্রিকা বিক্রির পাশাপাশি করছেন সংসারের কাজ। বলছি রাজবাড়ী শহরেরএক সময়ের নাম করা পত্রিকা বিক্রেতা জীবন দাসের স্ত্রী ঝুমু রানী দাসের কথা।
বিয়ের পর তিনি কোন দিন রাজবাড়ী শহরে যাননি। যানতেন না কিভাবে পুরুষের সাথে তালমিলিয়ে চলতে হয়। এমনকি কোনদিন ভাবেনও নি বাই সাইকেল কিভাবে চালাতে হয়।চিকিৎসাধীন থাকতে জীবনই তাকে এ পেশা ধরে রাখতে বলেছিল। এরপর চলতি বছরের ২৫ জুন মারা যান স্বামী জীবন দাস। তারপর থেকেই জীবিকার সন্ধানে এই ছুটে চলা।
জানাগেছে, ২০০২ সালের ৫ জুন রাজবাড়ী শহরের নিউ কলোনী এলাকার বাসিন্দা পত্রিকা বিক্রেতা জীবন দাসের সাথে বিয়ে হয় তার। বিয়ের পর শশুর শাশুরী আর স্বামীকেনিয়ে সুখেই ছিলেন তিনি। বিয়ের দুই বছর পর ফুটফুটে একটি সন্তান আসে তাদের পরিবারে। তার নাম রাখা হয় অরন্য দাস। ছেলেটি এখন অস্টম শ্রেনীতে পড়াশোনা করে।২০১৭ সালে হঠাৎই জীবনের কিডনীর অসুখ ধরা পড়ে। স্বামীর কিডনীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে সঞ্চিত সব টাকা ব্যয় হয়ে যায়। চলতি বছর জানুয়ারিতে চিকিৎসার জন্য জীবনকেঢাকায় নেয়া হয়। কিন্তু অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারেননি। জীবন অসুস্থ হওয়ার পর ছেলে অরণ্য কিছুদিন পত্রিকা সরবরাহ করতো। কিন্তু এতে তার পড়াশোনার ব্যাঘাতঘটতো প্রচন্ডভাবে।
ঝুমু রানী দাস জানান, প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে ছেলের জন্য নাস্তা তৈরি করে ছেলেকে প্রাইভেট পড়তে পাঠিয়ে সকাল সারে ৫ টার সময় পত্রিকা বিক্রির উদ্দেশ্যে বেরহই। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পত্রিকা বিক্রি শেষে বাজার সদাই করে বাড়ি ফিরি আবার দুপুরের খাবার তৈরি করার পর বিকেলে কালেকশনের জন্য বের হই।তিনি আরো জানান, স্বামী বেছে থাকতে কখনও বুঝতে পারিনি জীবন সংগ্রাম কি? স্বামী অসুস্থ্য হবার পর ছেলেটা ব্যবসার হাল ধরে। এতে তার স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। চিকিৎসাধীনঅবস্থায় স্বামী বলেন আমি হাসপাতালে থাকি তুমি বাড়ি গিয়ে ব্যবসাটা ধরো। আর ছেলেটা পড়াশোনা করাও। এরপরই আমি ব্যবসার হাল ধরি। প্রথম প্রথম অনেকে কটু কথাবলতো। খারাপ কথা বলতো আমি হাল ছাড়িনি পত্রিকা নিয়ে ছুটে চলেছি শহরের এক প্রান্ত থেকে  অন্য প্রান্তে। ।
রাজবাড়ী আর  জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকির আব্দুল জব্বার বলেন, আমাদের সকলের উচিৎ শ্রমজীবি মানুষকে সম্মান জানানো।লা পরিষদ থেকে সকলপত্রিকা বিক্রেতাকে এক হাজার টাকা করে সহযোগিতা করা হয়েছে। ঝুমু রানী দাসের কাজে সন্তুুষ্ট হয়ে জেলা পরিষদ থেকে এর আগে সহযোগিতা করা হয়েছে। পত্রিকা বিক্রিটাশুধু ব্যবসা না এটি একটি সেবামূলক কাজ। এই ধরনের কর্মঠ নারীদের পাশে সমাজের বিত্তবানদের দাড়ানো উচিৎ। শহরের বড়পুল এলাকার বাসিন্দা খায়রুল আলম জানান,রাজবাড়ীতে জীবন দাসের স্ত্রী ঝুমু রানী দাস নারী জাগরনের আর একটি দিক। তার এই কাজকে স্যালুট জানান তারা। তারা আরো মনে করেন নারীরা এভাবে সব কাজে অংশগ্রহন করলে দেশ এগিয়ে যাবে সমাজ থেকে দুর হবে কুসংস্কার।রাজবাড়ী পত্রিকা এজেন্ট মোহাম্মদ কুদ্দস জানান, ভোর বেলা যখন শহরের বড়পুল এলাকায় পত্রিকার গাড়ি আসে তখন পত্রিকা গোছানোসহ সকল কাজে আমরা তাকেসহযোগিতা করি। রাজবাড়ীর অনেক পত্রিকা বিক্রেতা রয়েছে। নারী পত্রিকা বিক্রেতা হিসেবে তার ব্যবহার চলাফেরা খুবই ভালো। তিনি এভাবে ব্যবসাটি চালিয়ে গেলে এক সময়ভালো কিছু করতে পারবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment