বিএনপি’র দুর্গ হলেও, শক্ত অবস্থানে আ.লীগ বগুড়া-৫ শেরপুর-ধুনট আসনে আওয়ামীলীগ -বিএনপির লড়াই হবে দুই সাংসদের

শেরপুর (বগুড়া)প্রতিনিধি:

আসছে ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) এ আসনটি বিএনপি’র দূর্গ নামে পরিচিত হলেও ৯ম ও ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দখলে রেখেছে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ। এবারও নির্বাচনে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চায় আওয়ামীলীগ, তবে বিএনপি’র দুর্গ পুনরুজ্জীবিত করতে একট্টায় অবতীর্ণ হয়েছেন প্রাক্তন সাংসদ ধনাঢ্য জিএম সিরাজ। তবে তিনি দীর্ঘদিন পরে এলাকায় মনোনয়ন নিয়ে বিএনপি’রদলীয় প্রার্থী হলেও অনেকটা অভ্যন্তরীন কোন্দল মেটাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে তাকে। তাছাড়া একইভাবে ক্ষমতাসীন আ.লীগ প্রার্থীকে নিয়ে অভ্যন্তরীন কোন্দলে তৃণমুল নেতাকর্র্মীরা অভিমানেও রয়েছে বলে একাধিকসুত্রে জানা গেছে। দু’দলের অভিমানী নেতাকর্মীদের মান-অভিমান ভাঙ্গাতে পারলেই এ নির্বাচনে দুই সাংসদের লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। একদিকে আওয়ামীলীগের বর্তমান এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব হাবিবর রহমান অপরদিকে বিএনপির ৪ বারের সাবেক এমপি আলহাজ্ব গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ। সবাই বলছে লড়াই হবে সেয়ানে সেয়ানে। তবে এ নির্বাচনে কে জিতবে নৌকা না ধানের শীষ তা নিয়েই এখন জনসাধারনের মাঝে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা ও হিসাব নিকাশ। এখনো এই নির্বাচন নিয়ে দুই দলের মাঝেই রয়েছে আভ্যন্তরীন কোন্দল। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি খ্যাত বগুড়া-৫ আসনটি সব সময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। এই আসনে আস্তে আস্তে জামায়াতে ইসলামীর ভোট বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই তাদের ভোটও ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে বলে অনেকেই মনে করছেন। শেরপুর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন এবং ধুনট উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে এই আসনটি গঠিত। এই আসনের বর্তমান ভোটার রয়েছেন ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৭ জন। গ্রামগঞ্জে পাড়া মহল্লার চা ষ্টলে এখন একটাই আলোচনা কে জিতবে এই আসনে। এছাড়া চুলচেরা বিশ্লেষন করা হচ্ছে কোন প্রার্থী কেমন, তাদের আগামি দিনের কার্যকলাপ হবে কেমন এই বিষয়গুলো। আওয়ামীলীগের প্রার্থীর পক্ষে নেতা কর্মীরা গ্রামগঞ্জে উঠোন বৈঠক সহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করলেও বিএনপি এখনো তেমনভাবে মাঠে নামতে পারেনি। ফলে সব কিছু উপেক্ষা করে কিভাবে মাঠে নামবে বিএনপি এখন সেটাই বড় বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী সাংবাদিক আমানউল্লাহ্ধসঢ়; খান নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৭৯ সালে বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান, ১৯৮৬ সালে আওয়ামীলীগের প্রার্থী ফেরদৌস জামান মুকুল, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট শাহজাহান আলী তালুকদার নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী, ১৯৯৬ সালের আরেকটি নির্বাচন হয় এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে পর পর চার বার বিএনপির প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ এমপি নির্বাচিত হন। কিন্তু তিনি ২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে সংস্কারপস্থী নেতা হিসাবে পরিচিতি পাওয়ায় তাকে বাদ দিয়ে ২০০৮ সালে জানে আলম খোকাকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী জানে আলম খোকা আওয়ামীলীগের প্রার্থী সাবেক পুলিশ সুপার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব হাবিবর রহমানের কাছে পরাজিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ গ্রহন না করায় আবারও হাবিবর রহমান বিনা- প্রতিদ্ব›িদ্ধতায় এমপি নির্বাচিত হন। এদিকে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী মনে করেন পরপর দুইবার এই আসনটি আওয়ামীলীগের দখলে থাকায় বিএনপির শক্ত ঘাঁটিতে নিজেদের একটি শক্ত অবস্থান তৈরী করেছে আওয়ামীলীগ। গত দশ বছরে এলাকার অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড করে এখনও আওয়ামীলীগের জনপ্রিয়তা সর্বত্র রয়েছে বলে দাবি করেন নেতাকর্মীরা। আওয়ামীলীগের বর্তমান এমপি মুক্তিযোদ্ধা হাবিবর রহমান বলেন, স্বাধীনতার পর শেরপুর-ধুনট এলাকায় এই সরকারের আমলে যত উন্নয়ন হয়েছে তা বিগত কোন সরকার করতে পারেনি। সেই উন্নয়ন আওয়ামীলীগ সরকারের একজন এমপি হয়ে আমি তা করতে পেরেছি। আগামীতে আবারও এমপি নির্বাচিত হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ি গ্রামকে শহরে পরিনত করব। তাই আসন্ন এই নির্বাচনে আবারও নৌকার বিজয় হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অপরদিকে বিএনপির চার বারের সাবেক এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজেরও রয়েছে পুরানো জনপ্রিয়তা। সেই সাথে বিএনপির নিজস্ব ভোট ব্যাংক যুক্ত হয়ে নির্বাচনে জয়ের পাল্লা তাদের দিকেই ঝুকবে বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা। তারা মনে করেন ২০০৮ সালে সামান্য ভোটের ব্যবধানে হারলেও ১৪ সালে নির্বাচনে অংশগ্রহন করলে বিএনপিই জয়লাভ করতো। তাছাড়া সরকারের অন্যায় অত্যাচার এবং সাধারন মানুষের পরিবর্তনমুখী মনোভাব অবশ্যই ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করবে। মনোনয়ন বঞ্চিত বগুড়া জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও শেরপুর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক জানে আলম খোকা বলেন, তিনি ধানের শীষের পক্ষেই কাজ করবেন। কেননা তিনি সব সময় দলের আদর্শকে বড় মনে করেছেন। তাছাড়া দলের এই দুঃসময়ে দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে নির্বাচনে জয়লাভের বিকল্প নেই। এবিষয়ে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সাবেক এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, দলের মধ্যে কোন কোন্দল নেই, তবে মান অভিমান রয়েছে, যা অচিরেই দুর হয়ে যাবে। তাই সাবাইকে সাথে নিয়েই ধানের শীষের পক্ষে কাজ করব এবং বিজয় নিশ্চিত হবে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ও বিএনপি’র তৃণমুলের পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে মান- অভিমান ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে নিতে পারলেই এ আসনে উভয় প্রার্থীর(দুই সাংসদ)এর মাঝে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি এমনটাই ধারণা করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাধারণ ভোটাররা।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment