নাটোর-১: ঐক্য নেই ঐক্যফ্রন্টে, ব্যাপক প্রচারণায় আ’লীগ-জাপা

নাহিদ হোসেন নাটোর প্রতিনিধি:

বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত মনজুরুল ইসলাম বিমল ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনয়ন নিয়ে হঠাৎ করেই চমকে দেন নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের নেতা-কর্মীদের। কিন্তু তার এই চমক এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষক শ্রমিক জনতালীগে যোগদিয়ে ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনয়ন পেলেও ঐক্য নেই স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সাথে। নির্বাচনী প্রচারনার বেশ কয়েকদিন পার হলেও তার পক্ষে গণসংযোগে বিএনপি নেতা-কর্মীদের দেখা যায়নি। যার কারনে চরম অস্বস্তিতে রয়েছে বিমল। আদোও বিএনপি নেতা-কর্মীদেও তার পক্ষে টানতে পারবে কিনা, তা জানা যাবে দু’একদিনের মধ্যেই, এমনটিই বলছে বিমল। এরআগে এই আসন থেকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান পটলের সহধর্মীনি কামরুন্নাহার শিরনকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। কিন্তু মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে শিরিনের পরিবের্ত শ্রমিক জনতালীগের মুনজুরুল ইসলাম বিমলকে দলীয় মনোনয়ন দেয় ঐক্যফ্রন্ট। এরপর থেকে ক্ষুদ্র লালপুর-বাগাতিপাড়া আসনের বিএনপি নেতা- কর্মীরা। এদিকে, বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয় জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বকুলকে। বকুলকে মনোনয়ন দেওয়ার পর আরেকটি চমক দেখে এই আসনের ভোটাররা। বকুল মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে ভোটারদের মাঝে ব্যাপক গণসংযোগ করছেন। বর্তমানে ভাল অবস্থানে রয়েছে তিনি। তার পক্ষে ভোট চাইতে মাঠে নেমেছেন দলের মনোনয়ন বঞ্চিত আবুল কালাম আজাদ। তবে আওয়ামীলীগ এই আসন থেকে বার বার পরাজিত হওয়ার কারনে ২০০৮ সালে জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেয়। বিএনপির হেভিওয়েট নেতা ও প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান পটলকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে সংসদ সদস্য হন জাতীয় পার্টির নেতা আবু তালহা। তবে জোটগত ভাবে নির্বাচন হলেও আবু তালহা জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনী গণসংযোগ করছেন। প্রতিদিনই ছুটছেন ভোটাররে দ্বারে দ্বারে। দিন রাত এক করে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন তিনি। কিন্তু ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী মনজুরুল ইসলাম বিমল গণসংযোগ করলেও মাঠে নেই বিএনপি ও অঙ্গসংঠন। তার নিজ এলাকা গোপালপুর পৌর শহরে পোস্টার লাগানো ও গণসংযোগ করতে দেখা গেছে। কিন্তু বিভিন্ন ইউনিয়ন পর্যায়ে ও বাগাতিপাড়া উপজেলায় তার প্রচারণা নেই বললেই চলে। বিএনপির অসহযোগীতার কারনে ও কর্মী না থাকার কারনেই এমন ঘটনা ঘটছে বলে একাধিক বিএনপি সমর্থকরা জানান। এদিকে, অসহযোগীতার কথা স্বীকার করে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করে বলেন, এ আসন বিএনপির ঘাঁটি। কিন্ত যে আসনে আওয়ামীলীগ কখনোই নৌকা প্রতীক নিয়ে জয় লাভ করতে পারেনি। সে আসনে বিএনপির প্রার্থী মনোয়ন না দিয়ে প্রার্থী দেওয়া হয়েছে বিএনপি থেকে বহিষ্কার হওয়া এক নেতাকে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই মনে হয় বিরল ঘটনা দল থেকে বহিষ্কার করা নেতাকে মনোয়ন দেওয়া হয়। যে বিএনপি থেকে বার বার নির্বাচিত জনপ্রিয় নেতা ফজলুর রহমান পটলের স্ত্রী প্রার্থী, যেখানে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক ও সাবেক ছাত্র নেতা তাইফুল ইসলাম টিপুর মতো মনোয়ন প্রত্যাশী সেখানে কি করে বহিষ্কৃত নেতাকে মনোয়ন দেওয়া হয়। বিএনপির সাথে ঐক্য না থাকার কথা স্বীকার করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী মনজুরুল ইসলাম বিমল মুঠোফোনে বলেন, তিনি এমনিতেই দেরিতে নির্বাচনি প্রচারনায় এসেছেন। দুই-তিন দিনের মধ্যে বিএনপির নেতা কমীরা তার পক্ষে এক যোগে নির্বাচনি প্রচারনায় মাঠে কাজ করবে। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি তারিকুল ইসলাম টিটু বলেন, নাটোর- ১ আসন বিএনপিকে না দিয়ে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়ে দল ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। তিনি আরও বলেন, আসনটিতে বাগাতিপাড়া উপজেলা থেকে আ’লীগের প্রার্থী দেয়া হয়েছে, সেই উপজেলার বিএনপির প্রর্থী হিসেবে দল থেকে তাকে মনোনিত করলে ভোট যুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে আনা সহজ হতো। তবুও কেন্দ্রের হাই কমান্ডের অপেক্ষায় আছেন। নির্দেশনা পেলেই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার সাথে ধানের শীষ প্রতিকের পক্ষেই মাঠে নামতে প্রস্তুত আছেন তারা। বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত কামরুন্নাহার শিরিন বলেন, দল থেকে প্রথমে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়, কিন্তু হঠাৎ করেই পরিবর্তন করে বিএনপি থেকে বহিস্কার হওয়া এক নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আমার মনোনয়ন বাতিল করায় নেতা-কর্মীরা ক্ষুদ্ধ। আমি দলের হাই কমান্ডের কাছে জবাবদিহিতা চাইবো। কেন তার মনোনয়ন বাতিল করা হল। নেতা-কর্মীরা ক্ষুদ্ধ হওয়ার কারনেই বিমলের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারনায় নামছে না কেউ। এবিষয়ে লালপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ পাপ্পু বলেন, আমরা সব নেতা-কর্মীদের মধ্যে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী মনজুরুল ইসলাম বিমলের পক্ষে মাঠে নামার জন্য ম্যাসেজ দিয়েছি। আগামী দু’চার দিনের মধ্যে এই ধরনের সমস্যা দুর হবে। নাহিদ হোসেন

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment