মিয়ানমারের দুই অঞ্চলে সেনা অভিযান স্থগিত

মিয়ানমারের সহিংসতাকবলিত উত্তর–পূর্বাঞ্চলে চার মাসের জন্য সব ধরনের সেনা অভিযান স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। গত শুক্রবার এই ঘোষণা দেওয়া হয়। পর্যবেক্ষকেরা বলেছেন, জাতিগত বিদ্রোহী গ্রুপগুলোকে দেশটির ভঙ্গুর শান্তি আলোচনা প্রক্রিয়ায় আনতে এই অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ কাজে দেবে।

মিয়ানমারের উত্তর–পূর্বাঞ্চলে দুটি প্রদেশ কাচিন ও শান। চীন, লাওসসহ কয়েকটি দেশের সীমান্তে অবস্থিত এই প্রদেশ দুটি। এখানে জাতিগত বিদ্রোহীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায়ই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে থাকে। ৭০ বছর আগে যুক্তরাজ্য থেকে মিয়ানমার স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই দেশটির সীমান্ত এলাকায় সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। বেশ কিছু সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী নিজেদের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে।

তবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর এই একপক্ষীয় যুদ্ধবিরতির আওতায় পড়বে না মিয়ানমারের পশ্চিম উপকূলীয় প্রদেশ রাখাইন। গত বছরের আগস্টে পশ্চিম রাখাইনে সেনাবাহিনীর নৃশংস অভিযানের মুখে পালিয়ে প্রায় ৭ লাখ ২০ হাজার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘের তদন্ত কর্মকর্তারা এই অভিযানকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

মিয়ানমারের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সহিংসতাকবলিত এলাকার ১০ হাজার লোক তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এসব অঞ্চলে সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন শান্তি আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে কম–বেশি ১০টি জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী। তবে কিছু গোষ্ঠী ওই শান্তি আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

গত শুক্রবার মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর কমান্ডার–ইন চিফের কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে ঘোষণা দেওয়া হয়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সব ধরনের সেনা অভিযান স্থগিত রাখবে সেনাবাহিনী। আলোচনা কার্যকর করতে এই একপক্ষীয় যুদ্ধবিরতি অনতিবিলম্বে কার্যকর হবে এবং ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সেটা চলবে। যদি প্রয়োজন পড়ে, তাহলে সেনাবাহিনী সহিংসতায় পুনরায় নিজেদের যুক্ত করার অধিকার রাখে।

শান প্রদেশের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর একটি তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) সেনাবাহিনীর এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। টেলিফোনে টিএনএলএর সাধারণ সম্পাদক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তার ফোনে কিয়াও বলেন, ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই পদক্ষেপকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। তবে তারা (সেনাবাহিনী) যদি পুরো দেশে এ রকম যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে, তাহলে সেটা হবে সবচেয়ে ভালো।’

মিয়ানমারে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি ও ত্রাণ সমন্বয়কারী অ্যান্ড্রু কির্কউড সেনাবাহিনীর এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। সেনাবাহিনীর এই পদক্ষেপকে সুযোগ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘বৈরিতা সমাপ্তির জন্য এই সুযোগ সব পক্ষকে কাজে লাগানো জন্য আমরা তাদের উৎসাহিত করছি।’

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment