আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক

রাত পোহালেই দেশজুড়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সুশৃঙ্খল, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী; রাজধানীসহ সারাদেশে গ্রহণ করা হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা। নির্বাচনের দিন প্রতিটি কেন্দ্রে তাদের ১০-১৭ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। এর মধ্যে পুলিশের সদস্য থাকবে ১-৫ জন পর্যন্ত। অন্যরা আনসার ও গ্রামপুলিশ সদস্য।

এ ছাড়া র‍্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আর্মড পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে মোবাইল টিমে, টহল কার্যক্রম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে। সেনা সদস্যরা বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা দিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যে টহল শুরু করেছেন। সন্দেহজনক ব্যক্তি ও যানবাহনে চলছে তল্লাশি।

আগামীকাল অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশনা মেনে নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর, বিশেষ করে ভোটকেন্দ্রগুলো ঘিরে। আজ থেকেই ভোটকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে গতকাল সেনা সদস্যদের টহল দিতে দেখা যায়। এ ছাড়া বিজিবি ও র‍্যাবকে দেখা যায় যৌথ নিরাপত্তা তল্লাশিচৌকি পরিচালনা করতে। গতকাল ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন। তদুপরি ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে ইতোমধ্যে ঢাকা ছেড়েছেন অনেকেই। তাই তুলনামূলকভাবে ফাঁকা ঢাকায় এদিন যান চলাচল ছিল খুবই কম।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সারাদেশে দেড় লাখ পুলিশ সদস্য ও ১০ হাজার র্যাব সদস্য নির্বাচনের দিন দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে ৮০ হাজার ১৬৬ পুলিশ সদস্য ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া ১০১৬ প্লাটুন বিজিবি সদস্য স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নির্বাচনের দিন মাঠে থাকবেন। আর প্রায় ৪ লাখ ৭০ হাজার আনসার-ভিডিপি ভোটকেন্দ্রগুলোয় পুলিশের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের সঙ্গে আরও থাকছে গ্রাম পুলিশ ও দফাদার।পুলিশ বাহিনী বলছে, একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিতে তারা বদ্ধপরিকর। তবে নির্বাচনের দিন সহিংসতার আশঙ্কাও তারা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। সেটি মাথায় রেখেই নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে প্রয়োজনে সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থান গ্রহণেও তারা বদ্ধপরিকর। উপকূলীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা নিশ্চিতে সজাগ থাকবেন কোস্টগার্ড সদস্যরা।এদিকে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো (কেপিআইভুক্ত) ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, গণভবন, সচিবালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দপ্তর ও অন্যান্য স্থাপনাসহ সব ধরনের রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাকে বিশেষ নজরে রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান আমাদের সময়কে বলেন, ইসির নির্দেশনা মেনে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে র‍্যাব।আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো সারাদেশে নিরাপত্তা পরিস্থিতির খবর-কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, জেলার ৪টি আসনেই টহল শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী; চলছে পুলিশ, বিজিবি ও সেনা টহল। জেলা নির্বাচনী অফিসার বশির আহমেদ জানান, ইতোমধ্যে ব্যালট পেপার ও বাক্স পৌঁছে গেছে। এসব উপকরণ উপজেলা কেন্দ্রে সরবরাহ করা হচ্ছে। কক্সবাজার জেলার রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, সেনাবাহিনীর ৪০০, বিজিবির ২ হাজার ২১, কোস্টগার্ডের ১১৬ সদস্য এবং ২ কোম্পানি র‍্যাব সদস্য কক্সবাজারে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি রয়েছেন ৪৫ ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি আরও জানান, প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, কুতুবদিয়া, মহেশখালীর জন্য তিনি হেলিকপ্টার চেয়েছিলেন, যা সম্ভবত বরাদ্দ পাওয়া যেতে পারে।বান্দরবান প্রতিনিধির পাঠানো খবরে বলা হয়, জেলার নির্বাচনসংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ইতোমধ্যে বিভিন্ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে জেলা নির্বাচন অফিস থেকে জেলার ৭ উপজেলা দুটি পৌরসভা ও ৩৩ ইউনিয়নে এসব সামগ্রী পাঠানো শুরু হয়। এ ছাড়া দুর্গম হওয়ায় বান্দরবানের থানচি উপজেলার ৬টি, রুমার ৩, রোয়াংছড়ির ২ ও আলীকদমের ২টি মোট ১৩টি দুর্গম ভোটকেন্দ্রে হেলিকপ্টারে করে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সব সামগ্রী পাঠানো হয়েছে।পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, ঢাকা থেকে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ইতোমধ্যে সরবরাহকৃত ব্যালট পেপার, বাক্স, অমোচনীয় কালি, সিলসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি গতকাল দুপুর থেকে প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পাঠানো হয়।নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী জানান, নির্বাচনী প্রচারকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটলেও রাজশাহীর ৬টি সংসদীয় আসনে এমন কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এ পর্যন্ত ঘটেনি। গতকাল ব্যালট পেপার ও বাক্সসহ ভোটের অন্যান্য সরঞ্জাম উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এসব সরঞ্জাম আজ শনিবার সকাল ১০টা থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ভোটকেন্দ্রে পৌঁছাবে। রাজশাহীর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদের জানান, জেলার চরাঞ্চল ও দুর্গম এলাকাগুলোতেও ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধির পাঠানো খবরে বলা হয়, জেলার সিরাজদিখান উপজেলার কাছারি মোড় এলাকায় গতকাল বিকাল ৪টায় চেকপোস্ট বসিয়ে নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর নজরদারি করতে দেখা যায় সেনা সদস্যদের। লেফটেন্যান্ট মাইদুলের নেতৃত্বে চেকপোস্ট ও টহল কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্রতিটি গাড়ির লাইসেন্স চেক করা হয়। পাশাপাশি নিরাপত্তাসংক্রান্ত তল্লাশি কার্যক্রম চালানো হয়।শিবচর প্রতিনিধি জানান, মাদারীপুর জেলার সর্বউত্তরের এ উপজেলায় গতকাল সেনাবাহিনী ঝটিকা অভিযান ও তল্লাশি চালায়। এদিন বিকালে ক্যাপ্টেন আদনানের নেতৃত্বে সেনা সদস্যদের মাদারীপুর-১ (শিবচর) আসনের পৌরসভা মোড়ের স্বাধীনতা চত্বর সড়ক, প্রেসক্লাবের সামনের সড়ক, শ্যামলীর মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে টহল দিতে দেখা যায়। সেনা সদস্যরা এ সময় বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালান।এ ছাড়া মোটরসাইকেলের কাগজপত্র, হেলমেটসহ বিভিন্ন যানবাহনেও তাদের অভিযান চালাতে দেখা যায়। ক্যাপ্টেন আদনান জানান, নির্বাচন উপলক্ষে তাদের ঝটিকা অভিযান অব্যাহত থাকবে। তবে কখন, কোথায় এসব অভিযান চলবে, তা অভিযানের স্বার্থেই বলা যাবে না।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment