কুনুনকে সাদরে গ্রহণ করলো কানাডা

নিজের অতিরক্ষণশীল পরিবার ছেড়ে পালানো সৌদি তরুণী রাহাফ মোহাম্মদ আল-কুনুনকে সাদরে গ্রহণ করেছে কানাডা।

কানাডা তাকে আশ্রয় দিতে রাজিত হওয়ার পর শনিবার কানাডার টরেন্টোতে পৌঁছান কুনুন। সেখানে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড দু’হাত প্রসারিত করে বুকে টেনে নেন কুনুনকে।

এর আগে ১৮ বছর বয়সী কুনুন নীল ক্যাপ ও ধূসর হুডি পরে টরেন্টোর বিমানবন্দরে নামেন। তার হুডিতে ‘কানাডা’ শব্দটি লেখা ছিল।

বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানবন্দরে উষ্ণ অভ্যর্থনা পাওয়ার পর কুনুন কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবির জন্য পোজ দেন। তবে এ সময় কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।

তবে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড। তিনি বলেন, ‘কুনুন চেয়েছিল যে কানাডিয়ানরা দেখুক সে এখানে এসেছে, সে ভালো আছে এবং এখানে তার নতুন বাড়িতে সে অনেক অনেক সুখী।’

বিমানবন্দরে কুনুনের কাঁধে হাত রেখে ফ্রিল্যান্ড বলেন, ‘সে (কুনুন) অনেক লম্বা সফর করে এসেছে এবং এখন খুবই ক্লান্ত। তাই এ মুহূর্তে সে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চাইছে না।’

তবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি না হলেও বিষয়টি নিয়ে টুইট করেছেন কুনুন, যেখানে তিনি তার কানাডায় আসা নিয়ে একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। সঙ্গে মন্তব্য লিখেছেন, ‘আমি কানাডাকে ভালোবাসি, আমি তোমাদের সবাইকে ভালোবাসি।’

এদিকে কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘কোস্টি’ নামে টরেন্টোভিত্তিক শরণার্থীদের একটি সংস্থা বিমানবন্দর থেকে কুনুনকে নিয়ে গেছে।

ওই মুখপাত্র জানান, বিমানবন্দরে নামার পর কুনুন কিছু গরম কাপড় কেনার জন্য অন্টারিওর কেন্দ্র যান। সেখানে তার পরিচিত কিছু মানুষ আছে, তাদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেন।

প্রসঙ্গত, গত ৫ জানুযারি কুনুন পরিবারের সঙ্গে কুয়েত যাওয়ার পথে ব্যাংককে পালিয়ে আসেন। ব্যাংকক বিমানবন্দরে আটক হওয়ার পর তিনি দাবি করেন, তার কাছে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা রয়েছে এবং তিনি এখান থেকে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে কানেকটিং ফ্লাইট ধরবেন। কিন্তু সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরে তার পাসপোর্ট একজন সৌদি কূটনীতিক কেড়ে নিয়েছেন।

পরে কুনুন ব্যাংককের একটি হোটেল কক্ষে নিজেকে অবরুদ্ধ রেখে আলোচনায় আসেন। থাই কর্তৃপক্ষ যাতে তাকে তার পরিবারের কাছে ফেরত পাঠাতে না পারে সে জন্য তিনি হোটেল কক্ষে নিজেকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন দাবি করে কুনুন ওই সময় জানান, তিনি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করায় তার জীবন হুমকির মুখে। তার পরিবার তুচ্ছ অপারাধেও তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এছাড়া সৌদি আরবে ধর্মত্যাগের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এসব কারণে তিনি পরিবারের কাছে ফিরতে চান না।

কুনুন আরও জানান, ব্যাংকক থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তিনি। তবে থাই কর্তৃপক্ষ তাকে কুয়েতে অবস্থানরত তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিল।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কুনুনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে তাকে ‘বৈধ শরণার্থী’ হিসেবে আশ্রয় দিতে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে অস্ট্রেলিয়ার প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। পরে কানাডা কুনুনকে আশ্রয় দিতে রাজি হয়।

এ বিষয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, ‘বিশ্বে মানবাধিকার ও নারী অধিকার রক্ষায় সব সময়ই পাশে দাঁড়ায় কানাডা। জাতিসংঘ তাকে আশ্রয় দেওয়ার অনুরোধ করেছিল; আমরা তা গ্রহণ করেছি।’

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী কয়েকদিন ‘কোস্টি’ নামের সংস্থাটির প্রতিনিধিরা কুনুনকে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার পাশাপাশি প্রশাসনিক বিভিন্ন কাজে সহায়তা দেবেন। পরে তারা কুনুনের বসবাসের জন্য একটি স্থায়ী বাসাও খুঁজে দেবেন। তবে অন্তর্বর্তী সময়ে তিনি ‘কোস্টি’র তত্ত্বাবধানে থাকবেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment