উৎসবমুখর পরিবেশে ডাকসুর মনোনয়নপত্র জমা

আগামী ১১ মার্চ অনুষ্ঠেয় ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণেচ্ছু প্রার্থীরা গতকাল মঙ্গলবার নিজ নিজ হলে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদিন ক্যাম্পাসে স্বতন্ত্রসহ সব প্যানেলের প্রার্থী ও সমর্থকদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। আসন্ন এ নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাসজুড়ে এখন বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের অবস্থানে গতকাল সরগরম ছিল মধুর ক্যান্টিনও।

ডাকসু ও হল সংসদের প্রার্থীরা গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট আবাসিক হলের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. এসএম মাহফুজুর রহমান জানান, ডাকসুর সব পদে ২৩৭টি এবং ১৮টি হলের বিভিন্ন পদের বিপরীতে ৫৯৪টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। ডাকসু ও হল মিলিয়ে মোট ৮৩১টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে।

গতকালই দুপুর ২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে মনোনয়নপত্র বাছাই প্রক্রিয়া শুরু হয়। আজ  বুধবার হলের নোটিশ বোর্ড এবং ফঁপংঁ.ফঁ.ধপ.নফ ওয়েবসাইটে প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে।

ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে এজিএস প্রার্থী সাদ্দাম হোসাইন গতকাল বলেন, ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ক্যাম্পাসে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনন্দময় উত্তেজনা কাজ করছে। ছাত্র সংগঠনগুলো অবাধে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাসে একটা সৃজনশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, ছাত্রলীগ সঠিক অবস্থানে ছিল এবং আছে। তিনি বলেন, আমাদের যে স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার প্রত্যয়, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার মাধ্যমে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা একধাপ এগিয়ে গেলাম। আমাদের লড়াই শেষ হয়নি। ১১ মার্চ সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর আমরা মনে করব শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব কিছুটা হলেও পালন করতে পেরেছি।

ছাত্রদল প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের বেশ কয়েকজন অভিযোগ করেছেন তাদের বিভিন্ন রকম হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়েছে বলে। এ কারণে হল সংসদে আমাদের প্যানেলের কয়েকজন মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। মেয়েদের অনেকেই দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু হুমকি-ধমকির কারণে বেশিরভাগ মেয়েই মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। তবে তিনি এও জানান, ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি মোটামুটি সন্তেুাষজনক। পরিবেশও উৎসবমুখর। মোস্তাফিজুর রহমান যোগ করেন, প্রচার শুরু করার পর প্রকৃতই বোঝা যাবে, আসলে কতটা সহাবস্থান সম্ভব হয়েছে।

বামজোটের ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী বলেন, ভালোভাবেই আমরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। সময় স্বল্পতার কারণে তাড়াহুড়ো করতে হয়েছে। তিনি বলেন, ফজলুল হক হলে আমাদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় প্রশাসনিকভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। এ রকম বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া মনোনয়নপত্র জমা দান নিয়ে অপ্রীতিকর কোনো পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি।

লিটন নন্দী বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক রাখতে যা যা করা দরকার, তা করাই এখন উচিত হবে প্রশাসনের।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্যানেল থেকে ভিপি প্রার্থী নুরুল হক নুর বলেন, আজ (মঙ্গলবার) বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনসহ আমরা সবাই মিলে দলবদ্ধভাবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছিল; আমরা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হইনি এবং এমন ঘটনার কথা শুনিনি।

এ ছাড়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল, আম্বিয়া), জাসদ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীসহ আরও বেশ কয়েকটি সংগঠনের প্যানেলের প্রার্থীরা গতকাল মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ ছাড়া জাতীয় কবিতা পরিষদের সদস্য আলীম হায়দার ভিপি পদে এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী এআরএম আসিফুর রহমান জিএস পদে তাদের গঠন করা স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

বিভিন্ন পদে প্রার্থী পরিবর্তন
এদিকে বিভিন্ন কারণে ঘোষিত ডাকসু ও হল সংসদের কয়েকটি পদে প্রার্থীর পরিবর্তন এনেছে ছাত্রলীগ। এ ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে শামস ই নোমানের পরিবর্তে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসিফ তালুকদার, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে রাকিব হাওলাদারের পরিবর্তে শামস ই নোমানকে প্রার্থী করা হয়েছে। সদস্য পদে ইশাত কাশফিয়া ইরার পরিবর্তে কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদা পারভীনকে আনা হয়েছে।

এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল সংসদে ছাত্রত্ব না থাকা সত্ত্বেও আবদুল্লাহ সুবাইলকে ভিপি পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি সান্ধ্যকালীনে ভর্তি হতে না পারায় সর্বশেষ তার পরিবর্তে শাকিলকে ভিপি পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এদিকে ভোটার তালিকায় নাম না আসায় বামজোটের প্যানেলে জিএস পদপ্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজিরের পরিবর্তে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের আহ্বায়ক ফয়সাল মাহমুদকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়।

ফের অনশনে ওয়ালিদ আশরাফ
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র হলের পরিবর্তে একাডেমিক ভবনে করা এবং ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক সহাবস্থান নিশ্চিত করাসহ ৪ দফা দাবি পুনর্বিবেচনার দাবিতে ফের অনশনে বসেছেন ওয়ালিদ আশরাফ। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে অনশনে বসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সান্ধ্যকালীন কোর্সের এই শিক্ষার্থী। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন করার ঘোষণা দেন তিনি।

উপরোল্লিখিত দুটি দফা ছাড়াও তার চার দফা দাবির অন্য দুটি হচ্ছে-ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থিতার বয়সসীমা ৪০ বছর করা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রচারের স্বার্থে নির্বাচন দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়া।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় একই দাবিতে একই স্থানে অনশনে বসেছিলেন ওয়ালিদ আশরাফ। রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ‘নিরাপত্তাজনিত’ কারণ দেখিয়ে তাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment