কাদেরের মতো চিকিৎসা পাওয়ার ‘অধিকার খালেদারও আছে’

কাদেরের মতো চিকিৎসা পাওয়ার ‘অধিকার খালেদারও আছে’

ঢাকা, ০৬ মার্চ- কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ‘চিকিৎসার অভাবে ধুকছেন’ অভিযোগ করে তার জন্যও ওবায়দুল কাদেরের মতো উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।

তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কাদেরের যেমন উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার আছে, তেমনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদারও সেই অধিকার আছে।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত রোববার সকালে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে এনজিওগ্রামে তার হৃদপিন্ডের রক্তনালীতে তিনটি ‘ব্লক’ ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটি ব্লক স্টেন্টিংয়ের মাধ্যমে অপসারণ করেন চিকিৎসকরা। অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলে সোমবার বিকালে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার আম্বুলেন্সে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সিঙ্গাপুরে। সেখানে ওবায়দুল কাদেরের অবস্থার উন্নতি হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে দলীয় প্রধানের চিকিৎসার জন্যও এ রকম ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন বিএনপির অন্তত দুজন নেতা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “আজকে বিনা চিকিৎসায় নির্জন কারাগারে দিনের পর দিন তাকে (খালেদা জিয়া) তিলে তিলে শেষ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। আজকে আমরা দেখতে পাই, মন্ত্রীরা যদি অসুস্থ হয় বিদেশ থেকে ডাক্তার আসে এবং কীভাবে বিদেশে পাঠিয়ে দিতে হয় সেই ব্যবস্থা করা হয়। আর তিনবারের প্রধানমন্ত্রী যিনি ন্যূনতম চিকিৎসা পাওয়ার যোগ্য নেই চিকিৎসাটুকু দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের প্রত্যেকের স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া আমাদের সাংবিধানিক অধিকার।”

বিএনপি নেতাদের দাবির মুখে খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে এনে চিকিৎসা করানো হবে বলে মঙ্গলবারই জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তবে তাতে সন্তুষ্ট নন বিএনপি নেতারা।

নেত্রীকে বিশেষায়িত বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করার দাবি জানিয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, “আমাদের নেত্রী বার বার বলেছেন যে, সরকারি হাসপাতালে গিয়ে তিনি চিকিৎসা পাচ্ছেন না। বিএসএমএমউতে অতীতে আনা হয়েছিল, কোনো চিকিৎসা হয় নাই। আবার আমরা শুনছি সেই হাসপাতালেই আনা হবে। আমাদের দাবি ছিল, আমাদের নেত্রী চেয়েছিলেন যে, এই বাংলাদেশে ঢাকাতে কোনো না কোনো একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে তার চিকিসা হোক। এটা বড় কোনো দাবি নয়। এটা তার অধিকার। কিন্তু এই অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।”

চিকিৎসার জন্য খালেদাকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়ে এই বিএনপি নেতা বলেন, “বাংলাদেশে আজকে যিনি প্রধানমন্ত্রী তার বেলায় উদাহরণ আছে। তিনি যখন কারাগারে বন্দি ছিলেন, চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়ে তিনি বিদেশে গিয়েছেন। তাই আমাদের প্রথম দাবি- তাকে মুক্তি দিতে হবে যাতে করে তিনি বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন বা তার পছন্দমতো এবং যেই জায়গায় তিনি বিশ্বাস করেন সেই জায়গায় তিনি চিকিৎসা নিতে পারেন।

“অথবা বেগম খালেদা জিয়া যতদিন না মুক্ত হবেন ততদিন তাকে বেসরকারি একটি হাসপাতালে, নেত্রীর যেখানে বিশ্বাস আস্থা রয়েছে সেই হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হবে।”

ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা খালেদার জন্যও নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেবের আশু রোগমুক্তি কামনা করেই বলতে চাই, উনার যেমন চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার আছে, দেশনেত্রীরও সুচিকিৎসার পাওয়ার অধিকার আছে। তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। অন্য কথায় আমি মনে করি, তাকে অন্য উপায় ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশনেত্রীর যদি কিছু হয় এর জন্য দায়ী থাকবে আজকের এই সরকার।”

সরকার ‘ক্ষমতা হারানোর ভয়’ থেকে খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে ‘ভয় পাচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মানববন্ধনে তিনি বলেন, “দেশনেত্রী অসুস্থ। তার চিকিৎসা পাওয়া তার মৌলিক সাংবিধানিক অধিকার। সেই অধিকারটুকু পাচ্ছেন না। আজকে তাকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আমরা বার বার বলেছি, তাকে তার যেটা পছন্দ বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক।

“কিন্তু এই সরকার এটা করছে না, করতে ভয় পাচ্ছে। তারা মনে করে যে, দেশনেত্রী এই চিকিৎসা নিতে হলেও বোধ হয় তারা ক্ষমতা হারাবে। এই একটি কারণে, একটি ভয়ে তারা আজকে দেশনেত্রীকে আটকে রেখেছে।”

খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনের বিকল্প নেই মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে আমাদের সময় এসেছে আমরা আমাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করে জনগণের দৃঢ় ঐক্য তৈরি করে আমরা দুর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে সরকারকে বাধ্য করব।

“আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই জনগণকে নিয়ে, আমরা দেশনেত্রীর ‍মুক্তি-চিকিৎসা এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার যে লড়াই, সেই লড়াইয়ে অবতীর্ণ হই।”

একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এই নির্বাচন আমরা মানি না, প্রত্যাখ্যান করেছি। এই নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করতে হবে এবং পুনরায় নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আবার নির্বাচন দিতে হবে। এটা দিতে হবেই।”

খালেদা জিয়াকে ‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে’ একটার পর এটা মামলা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, “এটার একটাই উদ্দেশ্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের মানুষের কাছে গণতন্ত্রের মাতা হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছেন। যখনই দেশ গণতন্ত্রের সমস্যায় ভোগে দেশনেত্রী তিনি সামনে এসে অকুতভয়ে আপসহীনভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেছেন। এই ইতিহাস দেশবাসীর জানা।

“আজকে শুধু প্রতিহিংসার কারণে তাকে আটক করে রাখা হয়েছে। গত কয়েক বছরে দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে তাদেরকেও মিথ্যা মামলা দিয়ে মিথ্যা অজুহাতে আটক করে রাখা হয়েছে। আপনারা অনেকে জানেন, বাংলাদেশে সম্ভবত প্রায় ৯৮ হাজারের মতো মামলা দেওয়া হয়েছে। আসামির সংখ্যা ২৫ লাখের উপরে। এভাবে দখলদারী, অবৈধভাবে বেআইনি সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাচ্ছে, একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে।”

প্রেস ক্লাবের সামনের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে মহাসচিবের নেতৃত্বে বিএনপির কয়েকশ নেতা-কর্মী এই মানববন্ধনে অংশ নেন। বেলা সাড়ে ১২টা থেকে এক ঘণ্টার এই কর্মসূচিতে দলের স্থায়ী কমিটির অন্যান্য সদস্যও ছিলেন।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, “চরম একটি ফ্যাসিস্ট ‍নিষ্ঠুর অমানবিক সরকারের কারণে বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের চরম অবনতি ঘটেছে। তাদের এই অবহেলা ও তাদের নিষ্ঠুর আচরণের কারণে আজকে আমরা সবাই উদ্বিগ্ন।

আদালতের গঠিত মেডিকেল বোর্ড তার চিকিৎসার জন্য সুপারিশ করেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ সরকার বাস্তবায়ন করে নাই।

“এখন তারা (সরকার) বলছেন, জেল কোডে যেটা লেখা আছে সেই অনুযায়ী তার (খালেদা জিয়া) চিকিৎসা হবে- এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। জেল কোডে এ কথাও লেখা আছে- কোনো কারাবন্দি যদি আগে কোনো চিকিৎসকের দ্বারা চিকিৎসা করিয়ে থাকেন সেই চিকিৎসকদের মাধ্যমেই তার চিকিৎসা করাতে হবে। তারা চান, আমাদের নেত্রী যাতে আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন, আরও দুর্বল হয়ে পড়েন যাতে করে তিনি নেতৃত্ব দিতে না পারেন- এটা তাদের হীন ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্র জনগণ কখনোই গ্রহণ করবে না।”

আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ‘আপ্রাণ’ চেষ্টা করার কথা জানিয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, “বহুবার আমরা তার জামিনের চেষ্টা করেছি। আজকে কুমিল্লার মামলায় তাকে ৬ মাসের জামিন দিয়েছে। কিন্তু তারপরেও আমরা তাকে মুক্ত করতে পারে নাই। কারণ সরকারের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণেই জামিনযোগ্য মামলায় একজন আসামি জামিন পাচ্ছেন না, এই সরকারের হিংস্র নীতির কারণেই আমরা আমাদের নেত্রীকে মুক্ত করতে পারছি না। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি তার জামিনের জন্য।

“আমি বলব, দেশনেত্রীর মুক্তি আসবে রাজপথের মাধ্যমে। আন্দোলন ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নাই।”

মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির ঢাকা মহানগর নেতা কাজী আবুল বাশার, যুব দলের মোরতাজুল করীম বাদরু, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, ছাত্র দলের আকরামুল হাসান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ ও সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের পরিচালনায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, শিরিন সুলতানা, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, শামীমুর রহমান শামীম, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, হারুনুর রশীদ, মফিজুল হাসান তৃপ্তি, সেলিম রেজা হাবিব, অধ্যক্ষ সোহরাবউদ্দিন, আহসানউল্লাহ হাসান, শফিউল বারী বাবু, হেলেন জেরিন খান, তাবিথ আউয়াল, বাবুল আহমেদ, শাইয়রুল কবির খান, শাহিনুল ইসলাম শায়লা, জাকির হোসেন রোকন, আবুল কালাম আজাদ, ইশতিয়াক উলফাত, মামুন হাসান, নুরুল ইসলাম নয়ন, এসএম জাহাঙ্গীর, রফিকুল ইসলাম মাহতাব ও রাজীব আহসানসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মহানগর বিএনপি, ‍যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, মহিলা দল, ছাত্রদলসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে শ্লোগান দেন। এই কর্মসূচি উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৯টা থেকেই প্রেস ক্লাবের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

সূত্র: বিডিনিউজ

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment