হিজাব পরে বক্সিং প্রতিযোগিতায় তরুণী

আন্তর্জাতিক বক্সিং সংগঠন (এআইবিএ) গত ফেব্রুয়ারিতে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে ফাইটারদের হিজাব পরা ও শরীর কাপড় দিয়ে আবদ্ধ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়। এর মধ্য দিয়ে ১৮ বছর বয়সী মুসলিম তরুণী সাফিয়া সাইদ যিনি হিজাব পরেন, এখন তার বক্সিংয়ের প্রতি প্রেম আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে পারবেন।

যুক্তরাজ্যের ব্র্যাডফোর্ড শহরের সাফিয়া গত বছর বক্সিং শুরু করেন। সে সময় তিনি অ্যানোরেক্সিয়া ও বুলিমিয়া (ক্ষুধামন্দা ও খাবারের প্রতি অনীহা) রোগে ভুগছিলেন। অসুস্থ থাকাকালীন তিনি বক্সিংয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা নিয়ে লিখালিখিও করেন।

সেই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসে বক্সিংয়ে আসার যাত্রা নিয়ে সাফিয়া বলেন, ‘আমি দেখাতে চেয়েছিলাম যে, চেষ্টা করলেই আপনি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এড়াতে পারবেন এবং আপনার শরীরের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে পারেন।’

এখন সাফিয়া স্বপ্ন দেখেন, জাতীয় প্রতিযোগিতায় প্রথম মুসলিম নারীদের মধ্যে একজন হওয়ার। আশা করেন অলিম্পিকের বক্সিংয়ে অংশ নেবেন। আর এ জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে তিনি ইতিমধ্যেই দিনে দুবার ট্রেনিং নিচ্ছেন।

সাফিয়া বলেন, ‘আমি প্রথমে চিন্তিত ছিলাম, একজন হিজাবি মেয়ে বক্সিং জিমে যাবে। এ বিষয়ে মানুষ অভ্যস্ত নন। কিন্তু সবাই আমার প্রতি খুব মনোরম ও সহায়ক আছেন। আমার রিংয়ে হিজাব পরে প্রবেশ করা নিয়ে কারও কোনো আপত্তি ছিলো না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটি আমার বক্সিংয়ে কোনো প্রভাব ফেলেনি। অনেকে মনে করেন, হিজাব পরে চলাচল করা খুব কষ্টকর কিন্তু আমি ভুলেই যাই হিজাব পরেছি।’

সাফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পাশাপাশি একটি মানসিক স্বাস্থ্য সংস্থায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন। সেখানে একসঙ্গে নারীপুরুষ মিলে কাজ করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার এখনও সেই প্রথম ব্যক্তিকে মনে আছে, যিনি আমাকে হিজাবে দেখে কটাক্ষ করেছিলেন। তিনি বুঝতেই পারেননি আমি এতে কষ্ট পেয়েছি। কারণ বিষয়টি আমি প্রকাশ করিনি, কেননা আমার কোচ বলেছেন কখনও কারো সামনে নিজের আবেগ প্রকাশ না করতে। তারা কখনোই আমার প্রতি সহজ হন না। কিন্তু আমি সবসময়ই বলি, “আমি মেয়ে বলে আমাকে নিয়ে ভিন্ন কিছু ভাববেন না।”’

সাফিয়া যখন ক্ষুধামন্দায় ভাগছিলেন তখন তাকে পুরোপুরি বিশ্রামে থাকতে বলেন চিকিৎসকরা। সে সময় তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন, তিনি সুস্থ হলেই বক্সিং শুরু করবেন। তিনি বলেন, ‘আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে, অসুস্থ হওয়ার দুই বছর যথেষ্ট ছিল। জীবনে যা যা করতে হবে এমন অনেক কিছু লিখে একটি তালিকা করলাম।’

‘বক্সিং ওই তালিকায় ছিলো এবং আমি যতদ্রুত সম্ভব আমি সুস্থ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা করা শুরু করলাম। আমি মানুষকে দেখাতে চেয়েছিলাম যে, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা আপনাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে পারবে না।’

বক্সিংতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় হিজাব পরা নিষিদ্ধকরণ অতীতের অনেক মুসলিম মুষ্টিযোদ্ধাদের প্রভাবিত করেছে। এই নিষিদ্ধকরণের কারণে ১৮ বছর বয়সী আমাইয়া জাফর ২০২০ সালে অলিম্পিক থেকে বাদ পড়েন। তবে সম্প্রতি এই নিষিদ্ধকরণ উঠিয়ে নেওয়ার কারণে তিনি ২০২৪ সালের অলিম্পিকে অংশ নিতে পারবেন।

কে জানে, হয়তো সাফিয়াও সেই প্রতিযোগিতায় তার সঙ্গ নিতে পারেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment