১৮ তলার অনুমোদনে ২৩ তলা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিলো এফ আর টাওয়ারঃরাজউক

১৮ তলার অনুমোদনে ২৩ তলা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিলো এফ আর টাওয়ারঃরাজউক

রাজধানীর বনানীতে এফ আর টাওয়ারের আগুনে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ৭০ জন। আহতরা রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের ১৭ নম্বর রোডের ২৩ তলা ভবনে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ২২ টি ইউনিট দীর্ঘক্ষণ কাজ করার পর বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

এদিকে এফ আর টাওয়ার রাজউকের অনুমোদিত নকশা লঙ্ঘন করে তৈরি করা। একথা জানিয়েছেন রাজউকের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান। বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউর এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগার পরই এই ভবনের কাগজপত্র যাচাই করে দেখেন রাজউক কর্তৃপক্ষ।

সংস্থার চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, ‘আজকে আগুন লাগার পর আমরা যখন তথ্য ঘাঁটতে গেছি, তখন আমরা এটা পেয়েছি।’

গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, “যে ভবনটিতে আগুন লাগে, সেটির ফাইল আমি যতটুকু দেখেছি, ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর এটিকে একটি ১৮ তলা ভবন হিসেবে করার জন্য নকশা অনুমোদন করা হয়। কিন্তু এই ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে ২৩ তলা। শুধু তাই নয়, রাজউকের অনুমোদিত নকশা থেকে এই ভবনের নকশায় আরও অনেক বিচ্যুতি রয়েছে।”

রাজউকের চেয়ারম্যান আরও জানিয়েছেন, ‘এফ আর টাওয়ারের মালিকপক্ষ ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজউকের কাছে আরেকটি নকশা পেশ করে যার সঙ্গে রাজউকে সংরক্ষিত নকশার কোন মিল নেই। এতে বুঝা যায়, ২০০৫ সালে যে নকশা তারা সাবমিট করেছিল সেটা বৈধ নকশা ছিল না। শুধু তাই নয়, ১৯৯৬ সালের যে মূল নকশা রাজউকের অনুমোদন পেয়েছিল, সেটির সঙ্গেও নির্মিত ভবনটির অনেক বিচ্যুতি রয়েছে’। এ ব্যাপারে ২০০৭ সালে রাজউক একটি রিপোর্টও তৈরি করে।

রাজউক বলছে, নকশা না মেনে নির্মাণ করা হয় ভবনটি এই ভবন নির্মাণের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তাদের সবারই শাস্তি হওয়া উচিৎ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ভবনটি এ কারণেই অনিরাপদ ছিল কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমাদের নকশা থেকে বিচ্যুতির কারণে ভবনটি অবশ্যই অনিরাপদ হতে পারে। কারণ আমাদের নকশায় অগ্নি-নিরাপত্তা থেকে শুরু করে সব নিরাপত্তার বিষয়টি দেখা হয়।’

ঢাকা শহরে বিগত কয়েক দশকে যে শত শত বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মিত হয়েছে, সেগুলোর কত শতাংশ এরকম ঝুঁকির মধ্যে আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এরকম হয়তো আরো অনেক থাকতে পারে। আমরা জানি না।’
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটের দিকে বনানীর ১৭ নম্বর রোডের ওই ভবনটির ৯ তলা থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। পরে এ আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে।

ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডে এক শ্রীলঙ্কান নাগরিকসহ অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে সাতজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে এতে ৭০ জন আহত হয়েছেন। তবে হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে।

নিহতরা হলেন- শ্রীলঙ্কান নাগরিক নিরস (কুর্মিটোলা হাসপাতাল), গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার বালুগ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে পারভেজ সাজ্জাদ (৪৭) (বনানী ক্লিনিক), দিনাজপুর জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার আবুল কাশেমের ছেলে মামুন (ইউনাইটেড হাসপাতাল), আমিনা ইয়াসমিন (৪০) (এ্যাপোলো হাসপাতাল), আবদুল্লাহ ফারুক (ঢাকা মেডিকেল), মাকসুদুর (৬৬) ও মনির (৫০)। পরবর্তীতে ওই ভবন থেকে উদ্ধার হওয়া বাকিদের নাম জানা যায়নি।

ফায়ার সার্ভিসের ২২টি ইউনিট দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টার পর বিকাল বিকাল পৌনে ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে আগুন এখনও পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের ডিউটি অফিসার মিজানুর রহমান।

আগুন লাগার ঘটনায় স্থানীয় এমপি আকবর হোসেন পাঠান (চলচ্চিত্র অভিনেতা ফারুক), ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ঘটনাস্থাল পরিদর্শন করেছেন।

জানা গেছে, ভবনটিতে দ্যা ওয়েভ গ্রুপ, হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেস, আমরা টেকনোলজিস লিমিটেড ছাড়াও অর্ধশতাধিক অফিস রয়েছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment