ওসিরা বিচার বসায় কেমনে

সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানার ওসি মামলা না নিয়ে সালিশ-মীমাংসার প্রস্তাব দেওয়ার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, ওসিরা রাতে কোর্ট বসান। তারা কি সালিশ করতে বসেছেন? তারা নিজেরা বিচার বসান কেমনে? এত সাহস তারা পান কোথায়?

ওই ঘটনা চ্যালেঞ্জ করে এক রিট আবেদনের শুনানিকালে গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ এ প্রশ্ন রাখেন।

গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো রিটটির শুনানি শুরু হলে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ সাইফুল আলম বেঞ্চকে জানান, শ্যামনগর থানার ওসির বিরুদ্ধে মামলা না নেওয়ার অভিযোগের আংশিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তখন আদালত উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ওসি মামলা নিলেন না কেন? আমরা রুল দিয়ে দেখি কেন তিনি মামলা নিলেন না।

আদালত আরও বলেন, সুবিধামতো হলে মামলা নেন, না হলে নেন না। আবার টাকা ছাড়া থানায় একটা জিডিও হয় না। ১৩ হাজার পুলিশ যারা থানায় বসেন, তাদের জন্য গোটা বাহিনীর বদনাম হতে পারে না। অনেক পুলিশ সদস্য খুব কষ্ট করে জীবনযাপন করেন। অথচ অনেকের দেখি ৪-৫টা করে বাড়ি। দেশটা কি চোরের দেশ হয়ে গেছে? জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে শ্যামনগর থানার সোরা গ্রামের ফজলুর করিমের বাড়িতে হামলা চালায় ইউসুফ আলীসহ কয়েকজন।

ফজলুরের অভিযোগ, তাকে মারধর করে দুই লাখ টাকা, ৮০ হাজার টাকা মূল্যের দুটি স্বর্ণের চেইন ও ৫০ হাজার টাকার মালামাল লুট করা হয়। এ সময় ফজলুর শ্যামনগর থানার ওসিকে ফোন দিলে তিনি বলেন, অন্য কাজে তিনি ব্যস্ত আছেন, পরে বিষয়টি দেখবেন। এর পর ফজলুর কালিগঞ্জ সার্কেলের এএসপিকে ফোনে বিষয়টি জানানোর পাশাপাশি ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চাইলে শ্যামনগর থানার এএসআই ঘটনাস্থলে যান। ততক্ষণে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।

ওই এএসআইর ফোনে ফজলুরকে শাসিয়ে ওসি বলেন, ওপর মহলে নালিশ করিস, তোর মামলা হবে না। কোর্টে মামলা কর। তখন ফজলুরের বাবা অনুনয়-বিনয় করলে ওসি বলেন, কাল সকালে আবার তদন্ত হবে। পরদিন এসআই মনিরুজ্জামান ওই বাড়িতে গিয়ে তদন্ত করে বলেন, মামলা হবে না। পারলে চেয়ারম্যানের সঙ্গে বসে মীমাংসা করতে। ফজলুর এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। পরে তিনি অভিযোগ করলে ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সুপার শ্যামনগর থানার ওসিকে ব্যবস্থা নিতে লিখিত নির্দেশ দেন। এর পরও ওসি ব্যবস্থা না নেওয়ায় তা চ্যালেঞ্জ করে ৩ মার্চ হাইকোর্টে রিট করেন।

রিটকারীর আইনজীবী শামসুল হক কাঞ্চন বলেন, এ আবেদনের ওপর ১০ মার্চ প্রথম দিনের শুনানি হয়। আদালত আগামী রবিবার পরবর্তী শুনানির দিন রেখেছেন। সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ স্বর্ণালঙ্কার লুট, হামলা, দরজা ভাঙার প্রমাণ পায়নি। কিন্তু পাঁচিল ভাঙার প্রমাণ পেয়েছে। এটা জেনে আদালত বলেন, আংশিক সত্যতা তো পাওয়া গেছে। তা হলে পুলিশ কেন মামলা নেবে না।

১৩ হাজার পুলিশের দুর্নীতি নিয়ে আদালত কী বলেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি সমীক্ষা তুলে ধরে আদালত বলেছেন, পুলিশ সদস্যদের মধ্যে মাত্র ১৩ হাজার দুর্নীতিগ্রস্ত। তাদের জন্য দুই লাখ পুলিশ সদস্যের সুনাম ক্ষুণœ হতে পারে না।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment