কুমিল্লায় বাড়ছে ক্যান্সার রোগী: চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল

কুমিল্লায় দিন দিন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। যা আশঙ্কাজনক পর্যায়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন- ধূমপান, মদপান, দূষিত খাবার আর দূষিত পরিবেশের কারণে ক্যান্সার বাড়ছে। এদিকে কুমিল্লায় নেই ক্যান্সার চিকিৎসার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। ব্যয় বহুল হওয়ায় অনেকে চিকিৎসা না নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। সরকারি যে পরিমাণ অনুদান তা দিয়ে একটা থেরাপি দিলেই টাকা শেষ হয়ে যায়। তাছাড়া চিকিৎসা ব্যয় হিসেবে এই সামান্য টাকা আসতে আসতে রোগী মারাও যায়।

কুমিল্লা জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের হিসেব মতে, ২০১৩-১৪ অর্থ বছর থেকে ক্যান্সার,কিডনি জটিলতার,লিভার সিরোসিস,স্ট্রোকে প্যারালাইজড ও জন্মগত হৃদরোগের আক্রান্তদের অনুদান দেয়া শুরু হয়। সেই থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৬৬৮ জন অনুদান পেয়েছেন। তার মধ্যে অধিকাংশ ক্যান্সার রোগী। চলতি বছর আবেদন পড়েছে শতাধিক।

চিকিৎসকদের সূত্র জানায়,ক্যান্সার চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কুমিল্লায় নেই। ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যয় বহুল। এজন্য রোগীদের ঢাকা ও বিদেশে যেতে হয়। তবে যাদের সামর্থ্য নেই তারা বিনা চিকিৎসায় কষ্ট পেয়ে মৃত্যুবরণ করেন। অনেকে অনুদান দেয়ার বিষয় ও প্রক্রিয়া জানেন না। সরকার যে অনুদান দেয় তাও খুবই কম।

কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার মনপাল গ্রামের নুরুল হক ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে সম্প্রতি মারা যান। তার দুই ছেলে চার মেয়ে। টানাটানির সংসার। তিনি মাছ বিক্রি করে পরিবার চালাতেন। মৃত্যুর দেড় মাস আগে মুখ দিয়ে রক্ত যেতে দেখে চিকিৎসকের নিকট যান। চিকিৎসক জানান,তার ক্যান্সার হয়েছে। জায়গা-জমি বিক্রি করে দেড় লাখ টাকা খরচ করে চিকিৎসা করেছেন। তার বোন রুচিয়া বেগম জানান,মৃত্যুর এক মাস আগে অনুদানের আবেদন করেছি। তবে এখনও কোনো সাড়া পাইনি।

মনপাল গ্রামের আলী আকবর মোল্লা বলেন,এই গ্রামের উত্তর পাড়ার হোসেন আহমেদও ক্যান্সারে আক্রান্ত। অনুদানের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। কৃষক মানুষ। চিকিৎসা করাতে না পেরে কষ্ট পাচ্ছেন।

কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা.মুজিবুর রহমান বলেন, কুমিল্লায় ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা সংরক্ষণ করা হয়নি। তবে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা আশংকাজনক। অনুদানের জন্য আমরা রোগীদের আবেদনপত্রে সুপারিশ করে সমাজ সেবা কার্যালয়ে পাঠাই।

সমাজ সেবা কার্যালয় কুমিল্লার উপ-পরিচালক জেড এম মিজানুর রহমান বলেন,দিন দিন ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সরকার তাদের ৫০হাজার টাকা করে অনুদান প্রদান করেন। তাদের অনুদানের আবেদন পাওয়ার পর আমরা দ্রুত ঢাকায় পাঠিয়ে দেই। ক্যান্সার সোসাইটি কুমিল্লার সভাপতি ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর হোসেন ভূঞা বলেন, ক্যান্সারের চিকিৎসা ব্যয় বহুল। প্রথম দিকে রোগ শনাক্ত হলে আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা থাকে।

কুমিল্লায় কোথাও কেমো থেরাপির মেশিন নেই। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এটি স্থাপন করা হলে রোগীরা সেবা নিতে পারতেন। তিনি বলেন, ধূমপান,মদপান বন্ধ এবং বিশুদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে ক্যান্সার অক্রান্তের হার কমবে। তিনি পান না খেতেও পরামর্শ দিয়েছেন। ক্যান্সার সচেতনতা বৃদ্ধি করতে তারা স্কুল পর্যায়ে কাজ করবেন বলেও জানান।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment