গরমে ওষ্ঠাগত প্রাণীকুল

দুষ্টু বালকের তাড়নায় সকাল গড়ালেই হুংকার ছেড়ে ঘুরে ঘুরে পায়চারিতে ব্যস্ত থাকত বনের রাজা সিংহ। তার সাম্রাজ্যে চিরশত্রু বাঘ মামার তর্জন-গর্জনেরও কমতি ছিল না। আর খাঁচাবন্দি মাংসাশী এসব বন্যপ্রাণীর তামাশা দেখে উৎফুল্ল থাকত শিশু-কিশোর। কিন্তু বনের রাজারা সিংহাসন ছেড়ে আজি ঘুমের রাজ্যে! মেঘ নেই, বৃষ্টিও নেই।

গ্রীষ্মের সূর্যের গনগনে তাপে পুড়ছে সারাদেশ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গতকাল ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ৪ থেকে ৩৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তখন মিরপুর চিড়িয়াখানায় প্রাণীকুলের এমন হাঁসফাঁস। পানি উত্তপ্ত হয়ে যাওয়ায় মিঠাপানির কুমিররাও ডাঙায় উঠে পড়েছে।

চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখা গেছে, সারাক্ষণ প্রাণচাঞ্চল্য থাকা বানরের দল লোহার রেলিংয়ের দুপাশে পা ছেড়ে ঘুমোচ্ছে। পেখমহীন হয়ে দিগ্বিদিক ছোটাছুটিতেই ব্যস্ত বর্ষারানি ময়ূর। অস্ট্রেলিয়া-আফ্রিকার হিমশীতল আবহাওয়ার বাসিন্দা ইমু পাখির অবস্থা তো আরও ভয়াবহ। খাঁচার ভেতরে গাছের ডালে বসে ঝিমিয়ে ছিল বকের দল। নগরবাসীর মতো গাছপালাঘেরা পুরো চিড়িয়াখানার বাসিন্দারও যেন খরতাপে নাভিশ্বাস।

তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, গরম আসার আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন তারা। প্রতিদিনই খাবার পানির সঙ্গে স্যালাইন, প্রয়োজনীয় ভিটামিন মিশ্রিত খাবার দেওয়া হচ্ছে এসব প্রাণীকুলকে। বুধবার ভরদুপুরে অন্য প্রাণীদের যখন হাঁসফাঁস অবস্থা, তখন ব্যতিক্রম ছিল কেবল ‘তারা মিয়া’। এশিয়ার উন্মুক্ত বনে ঘুরে বেড়ানো এই কালো ভল্লুক একাই পায়চারি করে আনন্দ দেয় দর্শনার্থীদের। কিছু সময় তাকে সঙ্গ দেয় তারই প্রতিবেশী ভল্লুক ‘সূর্য’। তাই অবসরে পরিবার বা প্রিয়জনকে নিয়ে আসা দর্শনার্থীরা তাদের পাশেই বেশি সময় কাটান। পাশাপাশি ঘোড়া, জিরাফ, শিম্পাঞ্জির খাঁচার পাশেও ভিড় জমান। ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা মোহাম্মদপুরে আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে এসেছে আবির রায়হান দম্পতি। বাড়ি ফেরার আগে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এসেছেন।

জিরাফকে সঙ্গে নিয়ে সেলফি তুলছিলেন তারা। কথা প্রসঙ্গে আবির বলেন, ‘বাসায় প্রচণ্ড গরম। দু-একদিনের মধ্যে বাড়ি ফিরে যাব। তার আগে চিড়িয়াখানায় পশুপাখি দেখতে এলাম। কিন্তু মানুষের মতো তারাও গরমে অস্বস্তিতে রয়েছে।’ চিড়িয়াখানার লেকতীরে মিঠাপানি ও লোনাপানির কুমিরের বাস। অন্য সব দিনের চলাফেরার অভ্যাস বদলে গতকাল মিঠাপানির কুমির ইট-পাথরের ইমারতে উঠে আসে। আর লোনা পানির কুমিরগুলো কেবল নাক ভাসিয়ে ডুবেছিল খাঁচার পানিতে। পাখির খাঁচাগুলোয়ও কিচিরমিচির ডাকাডাকি নেই।

ঢাকা চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. এসএম নজরুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, ‘এ সময়টাতে পশুপাখিরা একটু অস্বস্তিতে থাকে। এ জন্য সকালে বাঘ, সিংহের খাঁচার চারপাশে পানি ছিটানো হয়। যাতে ফ্লোরটা অন্তত ঠাণ্ডা থাকে। পাখিদের বেলায় পানিতে ইলেক্টোলাইট স্যালাইন মেশানো হয়। গরমে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় ইমু ও উটপাখিদের। এ জন্য তাদের খাবারে গরমের তীব্রতা প্রতিরোধক প্রয়োজনীয় ভিটামিন দেওয়া হয়। একইভাবে প্রতিটি পশুপাখি-প্রাণী যার ক্ষেত্রে যেমন সুরক্ষা দেওয়া প্রয়োজন আমরা তেমনটিই চেষ্টা করছি।’ মাংসাশী প্রাণী শাখার কর্মকর্তা গোলাম আজম বলেন, ‘গরমে সবচেয়ে বেশি ওষ্ঠাগত হয় আফ্রিকার প্রাণীকুল। সেসব দেশে সাধারণত বাঘ-সিংহরা তীব্র গরমে গাছের ছায়ায় আশ্রয় নেয়। এ জন্য আমাদের এখানেও এরা খাঁচার এক কোণে একটু ঝিমিয়ে বা ঘুমিয়ে থাকে। বাঘ-সিংহের খাঁচায় পানির চৌবাচ্চা রয়েছে। তীব্র গরমে এরা তাতে গা ভিজায়।’

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment