আরও শক্তিশালী হচ্ছে ‘ফণী’, সমুদ্রবন্দরে বিপদ সংকেত

বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ শক্তি সঞ্চয় করে আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ কারণে চার সমুদ্রবন্দরে স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া বিভাগের বিশেষ বুলেটিনে জানানো হয়েছে, পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় (১৫.৬ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৪.৩ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর/উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ স্বাক্ষরিত ওই বুলেটিনে জানানো হয়েছে, এটি আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।

আবহাওয়া বিভাগ আরও জানায়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার যা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে যাতে স্বল্প সময়ের নোটিশে তারা নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।

ফণী ভারতের উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানার পর কিছুটা দুর্বল হয়ে ৪ মে সকালে বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।

বুধবার বিকেলে সচিবালয়ে ‘ফণী’ মোকাবেলায় জরুরি প্রস্তুতি সভা শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় দেশের উপকূলীয় ১৯ জেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি উপকূলীয় সেনা ক্যাম্পগুলোকে সতর্ক রাখা হয়েছে।

ইতিমধ্যে মাইকিং করে প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু হয়েছে। উপকূলীয় জেলার ডিসিদের দুইশ মেট্রিক টন চাল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে; জেলা প্রশাসকদের পাঁচ লাখ করে টাকা দেওয়া আছে জরুরি সহায়তার জন্য।

এ ছাড়া ৪১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ওই ১৯ জেলায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে এনামুর রহমান বলেন, ‘আমি মনে করি আমরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পেরেছি।’

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে থাকা এলাকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাপ্তাহিক ছুটি এবং অন্যান্য ছুটি বাতিল করে তাদেরকে কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সব শাখা বুধবার থেকে অব্যাহতভাবে খোলা রাখা হয়েছে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য। সেই সঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অব্যাহতভাবে অফিসে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২৪ এপ্রিল সৃষ্ট নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’তে রূপ নেয় ২৭ এপ্রিল। এদিকে ‘ফণী’র আশঙ্কায় শুক্রবার পদ্মা সেতুতে ১২তম স্প্যান বসানোর পরিকল্পনাও স্থগিত করা হয়েছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment