মোবাইল চুরির স্বীকারোক্তি আদায়ে শিশুদের গরম লোহার ছ্যাঁকা

নিউজ ডেস্ক : ঝালকাঠির রাজাপুরে হারিয়ে যাওয়া একটি মোবাইল ফোনের জন্য চার শিশুকে নির্মমভাবে নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মোবাইলের মালিক ওই শিশুদের চুরির অপবাদ দিয়ে স্বীকারোক্তি আদায় করতে প্রথমে পিটিয়ে ও পরে লোহা গরম করে হাত-পা ঝলসে দিয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছে নির্যাতনের বিচার না পেয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে দরিদ্র পরিবারগুলো। আজ রবিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন শিশুদের স্বজনরা। উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের সাউথপুর গ্রামে গত শুক্রবার (১০ মে) রাতে এ ঘটনা ঘটে।

নির্যাতিত শিশুরা হলো সাউথপুর মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. ওয়াহিদুল হাওলাদার (১০), তৃতীয় শ্রেণির মো. নিরব গোমস্তা (৮), রাজাপুর মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির মো. আবদুল্লাহ্ (১১) ও তৃতীয় শ্রেণির মো. সগীর হাওলাদার (৮)।

শিশুদের অভিভাবকরা জানায়, গত ২৭ এপ্রিল স্থানীয় প্রভাবশালী মো. তৈয়ব আলী সরদারের নাতি ও মৃত ফরিদ খানের ছেলে মো. শাওন খানের মোবাইল ফোনটি সাউথপুর মাদরাসার মাঠ থেকে হারিয়ে যায়। এর ১৪ দিন পর শুক্রবার বিকালে মাদরাসা মাঠে খেলা করার সময় শাওন শিশুদের কাছে মোবাইল সম্পর্কে জানতে চায়। শিশুরা মোবইলটি পুকুর ঘাটে দেখেছিল বলে জানায়। এরপর শিশুদের চুরির অপবাদ দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করে শাওন। প্রথম দফার নির্যাতনে শিশুদের কাছ থেকে কোনো স্বীকারোক্তি আদায় করতে না পেরে ওই দিন সন্ধ্যায় মসজিদে ইফতারি করার সময় শিশুদের ধরে নিয়ে যায় শাওন ও তার সহযোগী এনামুল হোসেন এবং আল আমীন।

শিশু আবদুল্লাহ জানায়, আমাদের ধরে নিয়ে শাওন তাদের রান্নাঘরে আটকে রাখে। পরে শাওনের নানি শাহ বানু লোহা গরম করে এনে দিলে একে একে আমাদের সবার হাত ও পায়ে গরম লোহা দিয়ে পুড়িয়ে দেয় শাওন। এ সময় আমরা সবাই মোবাইল নিইনি বলে অনেক অনুনয়-বিনয় করলেও তা শোনেনি তারা। পরে এ ঘটনা কাউকে না বলার জন্য আমাদের নিষেধ করে শাওন ও তার পরিবার।

শিশু নীবর গোমস্তা জানায়, আমরা ওই দিন যখন মাদরাসার মাঠে খেলছিলাম তখন পুকুর ঘাটে একটি মোবাইল দেখেছি। কিন্তু আমরা তা নিইনি। যার মোবাইল সে এসে নিয়ে যাবে ভেবে আমার আবার খেলায় মন দেই। পরে খেলা শেষে পাশের মসজিদে ইফতারি করতে যাই।

শিশু আবদুল্লার মা লাভলী বেগম জানায়, শুক্রবার রাতে আমাদের সন্তানদের নির্যাতন করার সময় তাদের চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা আমাদের খবর দেয়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় শিশুদের উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসি। বিষয়টি আমরা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. তরিকুল ইসলামকে জানিয়েছিলাম। তবে কোনো বিচার পাইনি।

জানতে চাইলে ইউপি সদস্য তরিকুল ইসলাম বলেন, শনিবার সকালে আমার কাছে অভিযোগ করেছেন শিশুদের অভিভাবকরা। আমি বিষয়টি দেখব বলেছি। তারা অপেক্ষা না করে শুনেছি থানায় গিয়েছেন। এখন আইন যে ব্যবস্থা নেয় নেবে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শাওনকে খুঁজে না পাওয়ায় তার কোনো মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে শাওনের নানা মো. তৈয়ব আলী সরদারের কাছে জানতে চাইলে মুঠোফোনে তিনি বলেন, বাড়িতে এনে ওদের (শিশুদের) শুধু ভয় দেখানো হয়েছে। শাওন ও আমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা। আগুনে ঝলসে যাওয়া শিশুদের শরীরের দাগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওগুলো ওরা নিজেরা করেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহাগ হাওলাদার বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য ওসি সাহেবকে বলা হয়েছে।

রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহিদ হোসেন বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হবে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment