তোকে নুসরাতের মতো আগুনে পুড়িয়ে মারবো: ছাত্রলীগ নেতা

নাজমা খাতুন নামে মহিলা যুবলীগের এক ওয়ার্ড সভাপতিকে নুসরাতের মতো আগুনে পুড়িয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছেন কয়রা থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন। আল আমিনের মামাদের সঙ্গে নাজমার পরিবারের জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে তার বাড়িতে গিয়ে এ হুমকি দেয়া হয় বলে আশাশুনি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং ২৩৮) করেছেন নাজমা খাতুন।

শুক্রবার সকালে খুলনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে নাজমা খাতুন নিজের নিরাপত্তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। এসময় লিখিত বক্তব্যে তিনি আল আমিনের বিরুদ্ধে ছাত্র শিবির থেকে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ, নিজের ভাইকে দিয়ে সুন্দরবনে ডাকাত দল পরিচালনা, সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করে বাড়ি ছাড়া করা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করা হয়।

নাজমা খাতুন জানান, তিনি সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড মহিলা যুবলীগের সভাপতি।

নাজমার পরিবারের ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি আল আমিনের মামারা জোরপূর্বক দখলে নিয়ে ভোগ করছে। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ দিন বিরোধ চলছে। আল আমিনের প্রভাবে তার মামারা ২০ মে নাজমার পরিবারের সদস্যদের কুপিয়ে জখম করলে ২৩ মে আশাশুনি থানায় মামলা (মামলা নং-২৪) হয়। ওই মামলার পর থেকেই আল আমিন বেপরোয়া আচরণ ও হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।

নাজমা অভিযোগ করেন, গত ২৮ মে সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন ইসলাম, তার মামাত ভাই আল আমিন হোসেন ও মামা ফারুক হোসেন ২০/২৫ জনের সন্ত্রাসী দল নিয়ে হঠাৎ করে নাজমার বাড়িতে হাজির হয়। এসময় তাদের দেখে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলে তারা বাইরে থেকে হুমকি দেয় যে, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা তুলে না নিলে তাকে অপহরণ ও হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলবে। ছাত্রলীগের প্রভাব খাটিয়ে নাজমা, তার স্বামী-সন্তান ও পরিবারের সবাইকে ভিটে ছাড়া করবে।

এসময় ছাত্রলীগ নেতা আল আমিন বলেন, তোকে নুসরাতের (ফেনির সোনাগাজিতে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা) মতো করে পুড়িয়ে মারবো। তোর কোন বাপ আছে ঠেকাতে বলিস। নুসরাতকে তো আগুন লাগানোর আগে হত্যা করেনি, তোকে আগে টুকরো টুকরো করে তার পর আগুনে পোড়াবো। পরে তোর লাশের ছাইও পাওয়া যাবে না, গুম করে দেব।

আল আমিনের বিরুদ্ধে ছাত্র শিবির থেকে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশের অভিযোগ করে নাজমা বলেন, আল আমিন ২০০৮ সাল পর্যন্ত কয়রা সুন্দরবন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রশিবিরের কর্মী ছিল। তার আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে প্রায় সবাই বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে জড়িত। অনুপ্রবেশ করে একমাত্র আল আমিন একটি পদ পায়।

নাজমার মামলার ১ নং আসামি আবুল হোসেন চিহ্নিত জামায়ত কর্মী, ছোট মামা ৩ নং আসামি ফারুক হোসেন বিএল কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক ও মামাত ভাই ৬ নং আসামি আল আমিন শিবির কর্মী ও সাঈদি মুক্তি পরিষদের গোকুলনগর গ্রামের সভাপতি।

নাজমা খাতুন বলেন, অন্যদিকে জামায়াত অধ্যুষিত এলাকার মধ্যেও আমার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমি নিজে মহিলা যুবলীগের রাজনীতি করি, আমার আপন দেবর আছাদুল ইসলাম যুবলীগের ওয়ার্ড সভাপতি ছিলেন (বর্তমানে ঢাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন), আমার ছোট দেবর পলাশ মাহমুদ জাহাঙ্গীরনগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। পরে ঢাকার মহানগর ল’ কলেজে আওয়ামী আইন ছাত্র পরিষদের দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। আমার ননদ ফিরোজা বেগম (সালমা) সাতক্ষীরা সদরের বকচরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক, ননদের স্বামী আব্দুল ওহাব আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন সহ-সভাপতি, আমার মামাশ্বশুর কেরামত আলী গাজী কয়রা থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক।

নাজমা অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগ নেতা আল আমিনের মেজ ভাই আব্দুস সালাম বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে নিরুদ্দেশ। তিনি বিএনপি সরকারের সময়ে সুন্দরবনে ডাকাত দল আকরাম বাহিনীর সদস্য ছিলেন। বর্তমান সরকার ডাকাত নির্মূল শুরু করলে আল আমিন ভাইকে রক্ষা করতেই ছাত্রলীগে যোগ দেয়। পরবর্তীতে আল আমিনের প্রভাবে আব্দুস সালাম আবারও ‘সালাম বাহিনী’ নামে ডাকাত দল গঠন করে সুন্দরবনে ডাকাতি করছে।

এছাড়া ইতিপূর্বেও আল আমিনের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে তারই এলাকার ৫টি সংখ্যালঘু পরিবার। সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর নির্যাতন চালিয়ে এক প্রকার দেশছাড়া করা ও মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ছিল যে বাড়িতে সেই বাড়িওয়ালার ওপরও নির্যাতনের অভিযোগ করে কয়রা সদর ইউনিয়নের ৩নং কয়রা গ্রামের প্রভাষ চন্দ্র সরদার।

২০১৭ সালের ২৭ এপ্রিল কয়রা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে প্রভাষ চন্দ্র সরদার, কৃষ্ণপদ মন্ডল, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য সঞ্জয় কুমার বৈদ্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিপুল বাছাড় আল আমিনের বিরুদ্ধে মাছের ঘেরের জন্য চাঁদা দাবি, ঘের দখল, জমির ধান লুট করে নেয়া, নির্যাতন করে ভারতে পাঠিয়ে দেয়ার হুমকিসহ নানা অভিযোগ করেন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় ৯নং সেক্টরের নারায়ণ মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প ছিল প্রভাষ চন্দ্র সরদারের বাড়িতেই।

এ বিষয়ে কয়রা উপজেলা ছাত্রলীগের সম্পাদক আল আমিন বলেন, তিন বছর আমি নাজমাদের বাড়িতে যাইনি। জমিজমা নিয়ে মামা খালাদের মধ্যে সমস্যা আছে। সেখানে আমার যাওয়ার কোনো বিষয় নেই। নাজমা সংবাদ সম্মেলনে যা বলেছে তা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ছাড়া আর কিছু নয়। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের খুলনা জেলা সভাপতি পারভেজ হাওলাদার বলেন, আমরা এখনও কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

আপনি আরও পড়তে পারেন