প্রেম করে বিয়ে, দুলাভাইকে খুন করল শ্যালিকা ও স্বজনরা

বাগেরহাটের কচুয়ায় শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে আজিম (২৫) নামের এক যুবক খুনের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে নারীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে নিহত আজিমের স্ত্রী রুবিনা বেগমকে পুলিশ এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি।

তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার ছোট চরকাঠি গ্রামে মাটির নিচে পুতে রাখা নিহত আজিমের দেহাবশেষ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

দেহাবশেষের মধ্যে পাওয়া গেছে তার ব্যবহৃত কালো রংয়ের একটি জিন্সের প্যান্ট, কিছু হাড় ও চুল। উদ্ধার হওয়া এসব দেহাবশেষ নিহত আজিমের বলে ধারণা করছে পুলিশ। এগুলো ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে।

এই ঘটনায় কচুয়া থানার এসআই আবুল হাসান বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃতরা হলেন মো. বিপ্লব মোল্লা (২৫), তার স্ত্রী রিনা বেগম (২০) ও তার কিশোর শ্যালক। তাদের বাড়ি পাবনার সদর উপজেলার মিনদাহ গ্রামে।

নিহত আজিম (২৫) সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার কাউকান্দি গ্রামের মনজুল হকের ছেলে। তিনি ঢাকায় একটি পোশাক কারখানার কর্মী ছিলেন।

প্রায় এক বছর আগে আজিম বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার ছোট চরকাঠি গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে খুন হন।

সোমবার (৩ জুন) দুপুরে বাগেরহাটের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ জানায়, প্রায় এক বছর আগে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে হত্যার শিকার হন আজিম। তাঁকে কচুয়া উপজেলার ছোট চরকাঠি গ্রামে বসে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। পরে তাঁর লাশ গুম করতে বাড়ির পাশে মাটির নিচে পুতে রাখেন তাঁরা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ কথা স্বীকার করেছেন গ্রেফতার তিনজন। এই ঘটনায় কচুয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবুল হাসান বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন।

বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায় সাংবাদিকদের বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কচুয়ার এই হত্যার ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুলিশের একাধিক দল তদন্তে নামে। প্রথমে তিনজন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মাটির নিচে থেকে একজনের দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এই দেহাবশেষ নিহত আজিমের। ফরেনসিক প্রতিবেদন হাতে পেলে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে। এই হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি নিহতের স্ত্রী রুবিনা বেগম পালিয়ে যাওয়ায় তাঁকে গ্রেফতার করা যায়নি।

পঙ্কজ চন্দ্র রায় আরও বলেন, প্রায় সাড়ে চার বছর আগে ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় পোশাক কারখানায় কাজের সূত্রে সুনামগঞ্জের আজিমের সঙ্গে বাগেরহাটের কচুয়ার রুবিনার পরিচয় হয়। এক সময় তাঁরা দুজন বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন পর থেকে তাদের বনিবনা হচ্ছিল না। তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ লাগত। বিরোধ মেটাতে বিভিন্ন সময়ে আত্মীয়-স্বজনেরা সালিস বৈঠক করে। এরপরও বিরোধ না মেটায় নিহত আজিমের স্ত্রী রুবিনা বেগম ও তাঁর স্বজনেরা তাঁকে (আজিম) হত্যার পরিকল্পনা করেন।

পুলিশ সুপার বলেন, আজিমকে ঢাকা থেকে বাগেরহাটে তার শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসতে বলা হয়। আজিম শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গেলে ওই দিন আজিমের ছোট ভায়রা বিপ্লব, শ্যালিকা রিনা ও কিশোর শ্যালক খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ান। এতে তিনি অচেতন হয়ে পড়লে লাঠি দিয়ে মাথাসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে তাঁকে হত্যা করে আসামিরা। পরে তাঁর লাশ গুম করতে বস্তায় ভরে বাড়ির পাশে বাগানে মাটির নিচে পুতে রাখা হয়।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন