সমালোচনার মুখে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন: হবে না আইয়ুব বাচ্চু চত্বর, বসবে শুধু রূপালী গিটার

বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত চট্টগ্রাম শহরের প্রবর্তক মোড়ের নাম বদলে ‘আইয়ুব বাচ্চু চত্বর’ করার ঘোষণা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। গণমাধ্যমে এই খবর প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

তবে চসিকের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবর্তক মোড়ের নাম পাল্টানোর কোনো সিদ্ধান্ত তাদের নেই। মোড়ে শুধু আইয়ুব বাচ্চুর রূপালী গিটার স্থাপনের মাধ্যমে ‘ইয়ং এনভায়রনমেন্ট’ তৈরি করা হবে।

চট্টগ্রামের মুসলিম ইনস্টিটিউট হল ভেঙ্গে যে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স তৈরি হচ্ছে সেটি আইয়ূব বাচ্চুর নামে করার প্রাথমিক ঘোষণাও এসেছিল। তবে ঐতিহ্যবাহী মুসলিম হলের নাম পরিবর্তন নিয়ে সমালোচনার মুখে সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে যেতে হয় চসিকের।

এরপর সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের স্থায়ী কমিটি ও মাসিক সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, নগরীর সৌন্দর্যবর্ধনের চলমান কার্যক্রমের আওতায় ব্যস্ত এলাকা প্রবর্তক মোড়ে স্থাপন করা হবে বাচ্চুর রূপালী গিটার। সেই মোড়কে আইয়ুব বাচ্চু চত্বর হিসেবে গড়ে তোলা হবে বলেও সিটি করপোরেশনের বরাতে খবর এসেছে গণমাধ্যমে। সিটি করেপারেশনের প্রণীত নকশায়ও লেখা আছে ‘আইয়ুব বাচ্চু চত্বর’।

এর সমালোচনা করে নগরীর সৌন্দর্য্যবর্ধনে যুক্ত চারূশিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য্য ফেসবুকে লেখেন, ‘আইয়ুব বাচ্চুর শুধু রূপালী গিটার কেন? কেন শ্রদ্ধেয় শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু ভাইয়ের পূর্ণাঙ্গ স্ট্যাচু নয়? আর একজনকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে, স্মৃতিময় করে রাখতে গিয়ে, একটি ঐতিহ্যময় জায়গার নাম পরিবর্তন করতে হবে কেন? আমাদের সম্মানীতদের সাম্প্রদায়িক ভয়ঙ্কর চেহারা মাঝে মাঝে মুখোশ ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ফজলে এলাহী লিখেছেন, ‘প্রবর্তক মোড়ের নাম কেন পাল্টাতে হবে? ওই মোড়ের নাম প্রবর্তক মোড় রেখেও ওখানে আইয়ুব বাচ্চুর স্ট্যাচু ও রূপালী গিটারের ভাস্কর্য হতে পারে। ভুলে গেলে চলবে না, প্রবর্তক মোড় চট্টগ্রাম শহরের ইতিহাসেরই অংশ।’

ফেসবুকজুড়ে এই ধরনের সমালোচনামূলক অংসখ্য স্ট্যাটাস এবং এর সঙ্গে মন্তব্যের বিষয় নিয়ে বক্তব্য জানতে চাওয়া হয় চসিকের নগর পরিকল্পনাবিদ রেজাউল করিমের কাছে। তিনি জানিয়েছেন, প্রবর্তক মোড়ের নাম ঠিক থাকবে। আইয়ুব বাচ্চু চত্বর হবে না। শুধু রূপালী গিটার স্থাপন করা হবে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘প্রবর্তক মোড় একটি ঐতিহ্যবাহী জায়গা। এর নাম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত করপোরেশনের নেই। এই ব্যাপারে ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ নেই। নাম পরিবর্তন সিটি করপোরেশনের সিদ্ধান্তে হয় না। এটি মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন হয়ে আসতে হয়।’

গিটারের আদলে ভাস্কর্য করা হলেও আইয়ুব বাচ্চুর পূর্ণাঙ্গ ভাস্কর্য স্থাপনের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদ রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘ভাস্কর্য বানালে সেটি রাখতে পারব না। ভেঙ্গে দেবে। বাঘের ভাস্কর্য বানিয়েছি, সেগুলোই তো রাখতে পারছি না।’

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রকৌশল বিভাগ এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থার সঙ্গে সড়কটি উঁচু করবে। গোল চত্বরে রুপালি গিটার থাকবে। এলাকাটিকে করা হবে সবুজায়ন ও নান্দনিক। প্রবর্তক মোড়ে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্যাম্পাস, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও প্রবর্তক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজকে ঘিরে একটি শিক্ষার পরিবেশ বিরাজমান। আর চট্টগ্রামের কৃতী সন্তান আইয়ুব বাচ্চুর রূপালী গিটার থাকলে এ পরিবেশ আরো বেশি নান্দনিকতা পাবে।

উল্লেখ্য, গত বছর ১৮ অক্টোবর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন গুণী এই শিল্পী। ২০ অক্টোবর তাকে সমাহিত করা হয় চট্টগ্রাম নগরীর চৈতন্য গলি কবরস্থানে।

ব্যান্ড সংগীতের কিংবদন্তি আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর পর তার নামাজের জানাজায় অংশ নিয়ে চট্রগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন আইয়ুব বাচ্চুর স্মৃতি সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই ঘোষণার অংশ হিসেবে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ প্রবর্তক মোড়কে আইয়ুব বাচ্চু চত্বর হিসেবে গড়ে তোলা হবে বলে সম্প্রতি জানানো হয়।

গত বছরের ১৮ আগস্ট চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের গোলপাহাড় মোড় থেকে প্রবর্তক মোড় পর্যন্ত চার লেন বিশিষ্ট সড়কটির সৌন্দর্যবর্ধন, সবুজায়ন ও আধুনিকায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। অডিওস ইঙ্ক ও স্ক্রিপ্ট যৌথ উদ্যোগে এ সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়।

সেই চুক্তি মোতাবেক সৌন্দর্যবর্ধনের আওতায় প্রবর্তক মোড়ে বসানোর কথা আইয়ুব বাচ্চুর সেই রুপালি গিটারের আদলে একটি গিটার। এরই মধ্যে অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নিচু এলাকায় পানি জমার আশঙ্কার কারণে প্রবর্তক মোড়ে আপাতত কাজ স্থগিত রয়েছে। এই এলাকার ড্রেনের কাজ সম্প্রসারণ করার পর বাকি অংশের কাজ শুরু করা হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন