লর্ডসেই কি বিদায় বলছেন মাশরাফি?

চলতি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের আর পাওয়ার কিছু নেই। শুক্রবার (০৫ জুলাই) লর্ডসে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি নিছক নিয়মরক্ষার ম্যাচ হয়ে দাঁড়িয়েছে টাইগারদের জন্য।

মাশরাফির কারণে গুরুত্বহীন ম্যাচটিতেও দৃষ্টি থাকবে ক্রিকেট বিশ্বের। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) ঐতিহ্য আর আভিজাত্যের লর্ডসে যখন বাংলাদেশ দল অনুশীলনে ব্যস্ত তখন বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিল মাশরাফির অবসরের গুঞ্জন।

এ ম্যাচ শেষেই নাকি আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন বাংলাদেশ কিকেটের দিন বদলের এই দলপতি। লর্ডসের এই ম্যাচটি শেষে বিশ্বকাপের মঞ্চ থেকেই নাকি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া এই সংগ্রামী ক্রিকেটার!

ক্রিকেটের এই প্রাণভ্রমরার বয়সটা কোটা ৩৫ পেরিয়ে ৩৬ এর কাছাকাছি হওয়ায় অনেকের মনে এমনটা কৌতূহল আসতেই পারে এই ম্যাচই হচ্ছে মাশরাফির জীবনের শেষ ম্যাচ।

সব ভালো কিছুরই কখনও না কখনও শেষ হতে হয়। সেই একই নিয়মে খেলাধুলার জগৎ থেকেও বিদায় নেন কিংবদন্তি সব তারকা। তাদের তুলনা তারা নিজেই। অন্য কোনও কিছু দিয়েই সেসব কিংবদন্তির অভাব পূরণ হওয়ার নয়। যেমন অভাব পূরণ সম্ভব নয় পেলে-ম্যারাডোনার, তেমনি চাইলেও আরেকজন ডন ব্রাডম্যান, শচিন টেন্ডুলকার কিংবা ব্রায়ান লারাকে খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। বাংলাদেশ ক্রিকেটে মাশরাফি বিন মর্তুজা তেমনই একজন, যার অভাব পূরণ অসম্ভব।

বৃহস্পতিবার ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনেও সবার অপেক্ষা ছিল মাশরাফির জন্য। কিন্তু নিজের শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচের আগে অনুশীলন কিংবা সংবাদ সম্মেলন কোথাও দেখা গেল না মাশরাফিকে। সংবাদ সম্মেলনে না আসাটা রীতিমতো রহস্যজনক! সে রহস্যর জট খোলা মুশকিল। একমাত্র মাশরাফিই পারেন সে রহস্য ভেদ করতে।

অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তাকে পাওয়া গেল মুঠোফোনে। প্র্যাকটিস শেষে টিমবাসে করে হোটেল রুমে যাওয়ার পর এ প্রতিবেদকের ফোন ধরে কথা বললেন মাশরাফি। তবে পুরোটাই অনানুষ্ঠানিক। ‘অফ দ্য রেকর্ড। না লেখার শর্তে।’

না না, অফ দ্য রেকর্ড শুনে আবার অন্যরকম রহস্যের গন্ধ খুঁজে বেরিয়েন না? টিমবাসে করে প্র্যাকটিসে এসেও অনুশীলন না করা আর প্রেস কনফারেন্সে অংশ না নেয়ার কারণ, জানতে চাইলে ছোট্ট জবাব, ‘নাহ বিশেষ কিছু না। তেমন ভালো লাগেনি তাই প্র্যাকটিস করিনি। মিডিয়া সেশনেও যাইনি সে কারণেই।’

কথা হলো টাইগার কোচ স্টিভ রোডস। কথা বললেন মাশরাফির বিদায় নিয়ে। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য মাশরাফিকে সময় দিতে বললেন রোডস।

তিনি বলেন, বোর্ডের সঙ্গে বসে মাশরাফি নিজে সিদ্ধান্ত নেবে অবসরের ব্যাপারে। আমার মতে, এটা তাদের হাতেই ছেড়ে দেয়া উচিত। আমি এও জানি, এটা মিডিয়ার জন্য অনেক বড় খবর। কিন্তু তার প্রতি একটু সম্মান দেখানো উচিত। সে কী করতে চায় কিংবা কী করতে চায় না, সেটা তাকেই ঠিক করতে দিন।

শ্রীলঙ্কা সফরে মাশরাফিকে পাওয়া যাবে কিনা জানতে চাইলে রোডস বলেন, সে আমাদের নেতা। যদি সে শ্রীলঙ্কা সফরে যেতে চায়, তবে ভালো। যদি সে অন্য কিছু চিন্তা করে, তা-ও ভালো। আমরা এগিয়ে যাব।

পরে নিজের কথার ব্যাখ্যা দিয়ে বাংলাদেশ কোচ আরও বলেন, যদি সে শ্রীলঙ্কা সফরে না যায়, তার পরও আমরা এগিয়ে যাব। আমাদের এগিয়ে যেতেই হবে। বাংলাদেশকে মাশরাফিকে ছাড়াই কোনও একদিন এগিয়ে যেতে হবে। সেটা হতে পারে এ টুর্নামেন্টের পরই, এক বছর পর কিংবা অন্য কোনও সময়। কিন্তু বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অন্য সব দেশের মতোই। আমাদের সেটা করতে হবে। অবশ্যই তার তুলনা সে নিজেই। তার অভাব পূরণ কঠিন। কিন্তু আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

আজই মাশরাফির শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচ। তা দলের খেলোয়াড়দের আবেগতাড়িত করছে কিনা? রোডস বলেন, খেলোয়াড়রা মাশরাফিকে খুবই শ্রদ্ধা করে। আমি তাকে নিয়ে প্রায়ই যোদ্ধা শব্দটা ব্যবহার করি। সে দলের জন্য যুদ্ধ করা খেলোয়াড়। মানুষ এ কারণে তাকে শ্রদ্ধা করে, বুঝতে পারে। তারা তাকে ভালোবাসে। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড়রাও ম্যাশকে ভালোবাসে।

সাম্প্রতিক সময়ে মাশরাফির অবসর নিয়ে যে গুঞ্জন, তা দলের মাঝে কোনও প্রভাব ফেলছে না বলেও জানান তিনি, না, এটা দলের ওপর কোনও চাপ তৈরি করছে না। দল এসব চাপ সামলাতে অভ্যস্ত। অনেক মিডিয়া ও সোস্যাল মিডিয়ার হেডলাইন দেখতে দেখতে তারা এখন অভ্যস্ত। এটা তাদের ওপর প্রভাব ফেলছে না।

সেমিফাইনালে যেতে না পারার হতাশা থাকলেও বিশ্বকাপ নিয়ে সন্তুষ্ট রোডস। তিনি বলেন, আমরা সেমিফাইনালে যেতে পারিনি। এটা হতাশাজনক। কিন্তু জয়গুলো খুব ভালো ছিল। শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ও তারপর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানো দুর্দান্ত ছিল। এরপর আফগানিস্তান ম্যাচ। তারা প্রতিপক্ষ হিসেবে আমাদের জন্য একটু অন্য রকম। তাদের বিপক্ষে পেশাদার পারফরম্যান্স দরকার ছিল, তা আমরা পেরেছি। যদি পাকিস্তানকে হারাতে পারি, তবে বিশ্বকাপটা আমাদের জন্য বেশ ভালো হবে। এছাড়া আমরা বড় দলগুলোর সঙ্গে কাছাকাছি গিয়ে হেরেছি। অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মতো দলকে আমরা চাপে ফেলেছি।

আপনি আরও পড়তে পারেন