ঋণখেলাপির বিশেষ সুবিধা স্থগিতই থাকছে

ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা নীতিমালায় হাইকোর্টের স্থিতাবস্থার আদেশ আরও দুই মাসের জন্য স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। আজ সোমবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন।

আজ ‘প্রজ্ঞাপনের সুবিধাভোগীরা নতুন করে ঋণ পাবেন না’ মর্মে আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এ ছাড়া নীতিমালার বিষয়ে জারি করা রুল বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার মুনীরুজ্জামান। রিটকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

পরে মুনীরুজ্জামান বলেন, হাইকোর্টের আদেশ আরও ২ মাস স্থগিতের আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। তবে যারা ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টের সুবিধা নিবেন তারা নতুন করে ঋণ নিতে পারবেন না।

এর আগে গত ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করা হয়। জারিকৃত ওই সার্কুলারে বলা হয়, ঋণখেলাপিরা মাত্র দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়েই ঋণ পুনঃতফসিল করতে পারবেন। পুনঃতফসিল হওয়া ঋণ পরিশোধে তারা সময় পাবেন টানা ১০ বছর। এ ক্ষেত্রে প্রথম এক বছর কোনো কিস্তি দিতে হবে না।

পরে ঋণখেলাপিদের নিয়ে করা রিটের পক্ষের এক সম্পূরক আবেদনে গত ২১ মে বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন এক মাসের জন্য। এর পর গত ২৪ মে ওই সার্কুলারের কার্যকারিতার ওপর স্থিতাবস্থার আদেশ আরও দুই মাসের জন্য বৃদ্ধি করেন হাইকোর্ট। এই আদেশ স্থগিত চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন জানান।

অর্থ বিভাগের ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (০২ জুলাই) আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান হাইকোর্টের আদেশে স্থগিতাদেশ দেন। একই সঙ্গে সোমবার পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠানোর আদেশ দেন।

উল্লেখ্য, ব্যাংকিং খাতে অর্থ আত্মসাৎ, ঋণ অনুমোদনে অনিয়ম, প্রাইভেট ও পাবলিক ব্যাংকগুলোয় ব্যাংক ঋণের ওপর সুদ মওকুফের বিষয়ে তদন্ত এবং তা বন্ধে সুপারিশ প্রণয়নে কমিশন গঠন করার অনুরোধ জানিয়ে হিউম্যান রাউটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইআরপিবি) গত জানুয়ারিতে রিট করে।

রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে ঋণখেলাপির তালিকা দাখিলের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি নির্দেশ দিয়ে রুল জারি করেন।

পরে গত ১৬ মে হাইকোর্টের উপরি-উক্ত বেঞ্চ গত ২০ বছরে কোটি টাকার উপরে ঋণখেলাপিদের তালিকা, কী পরিমাণ ঋণের সুদ মওকুফ করা হয়েছে, ঋণের সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে যে অনিয়ম চলছে, তা বন্ধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তার তথ্য আগামী ২৪ জুনের মধ্যে দাখিল করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেন। এ অবস্থায় ওই দিনই (১৬ মে) বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে একটি নীতিমালা জারি করে।

আপনি আরও পড়তে পারেন