সোশ্যাল মিডিয়ার ছোবলে জাতি হতে পারে মেধা শূন্য

 মোবাইল ব্যবহার,গুগল, ইউটিউব, ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারের একটা নির্দিষ্ট বয়স এবং ওয়েবগুলোর কিছু সাইডে প্রবেশ সংরক্ষিত করা উচিত নয় কি? তা না হলে আমরা ও আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যে মেধাশূন্য হয়ে পড়বে! আমরা যারা ফেসবুক চালাই বা ব্যবহার করি তাদের বেশির ভাগই বিকৃত রুচির পর্যায়ে চলে গেছে।আমরা ভালো কিছুকে ভালো বলতে জানি না! দুঃখের পোস্টেও ওয়াও লিখি,লাইক দেই, লাভ সিম্বল দেই।সুন্দরী মহিলার ছবি দেখলে হামলে পড়ি। ওয়াও, ওয়াও বলে জীবনটা শেষ করে দিতে পারলেও বোধহয় পিছপা হতাম না! যাদের ফ্রেন্ডলিস্টে ৪-৫ হাজার ফ্রেন্ড রয়েছে তারা যদি একটা সামাজিক,মানবিক লেখা দেয় তাহলে দেখাযায় ৪-৫ হাজার বন্ধুর মধ্য থেকে ২০-২৫ জন হয়ত লেখাটা পড়বে, আলোচনা বা সমালোচনা করবে।সেখানে একটা ন্যুড ছবি বা একটা বয়স্ক মহিলার ছবি হলে দেখা যায়,আহ্ উহ্,কি সুন্দর বলার স্টাইলে হতভম্ব হয়ে যেতে হয়।অবাক হয়ে ভাবি, কোথায় যাচ্ছি আমরা? সেদিক থেকে বিচার করলে বিবেকবান, নৈতিকতাবোধ, মনুষ্যত্ববোধ সম্পন্ন মনুষের শতকরা হার কততে গিয়ে দাঁড়িয়েছে? শতকরা ১ জন ও মনুষ্যত্ববোধ,বিবেকবান, নৈতিকতাবোধ সম্পন্ন মানুষ নেই! এই যদি হয় বর্তমান প্রেক্ষাপট তাহলে আমরা ২০-৫০ বছর পরে গিয়ে কোন মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ পাবো? কেনো সামাজিক অবক্ষয় হচ্ছে? এ বিষয়ে আমার মতামত হলো- এই অবক্ষয়ের কারণ আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া।সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহারের ফলে,কোমলপ্রাণ বা কোমলমতি ছাত্র শিক্ষার্থীরা এবং ছেলেমেয়েরা ওই নোংরামীটাকেই সত্য বলে ধরে নিচ্ছে এবং ওগুলোই গিলছে। এই গেলার ফলে তারাও উদ্ভ্রান্তের মতো দৌঁড়াচ্ছে-এর পিছনে। কারণ এদের ভাল-মন্দ,খারাপ ভালো, যাচাই-বাছাই করার মতো বয়স হয়নি। সুতরাং, ওই ন্যুড ছবি উচ্ছৃঙ্খল পোশাকআশাক-ই তাঁদের কাছে অমৃত ও সত্য। এজন্য দায়ী কারা? এ জন্য শুধুই সমাজকে দায়ী করলে চলবে না। এজন্য দায়ী সরকারের একটা অংশ এবং বাবা মা। যেটাকে আমরা বলি তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ। একটা সিনেমা যখন প্রেক্ষাগৃহে আসে। তখন তার মান যাচাই-বাছাই করে সেটাকে সামাজিক প্রেক্ষাপট বিচার বিশ্লেষণ করে মুক্তি দেয়া উচিৎ। নোংরা ড্রেস পরে নৃত্যরত নায়িকা ও তার সঙ্গী-সাথী নিয়ে ধুম ধারাক্কা নৃত্যটাকে সংশোধন করে।এই নৃত্য দেখে কিশোরদের মনে কি প্রভাব পড়তে পারে,এতে সামাজিক অবক্ষয় কতটা হতে পারে তা বিচার বিশ্লেষণ না করে সেটাকে প্রেক্ষাগৃহে দেখানোর অনুমতি দিয়ে দেন।এছাড়াও এমন কোনো সিনেমা এখন তৈরি হচ্ছে না।যেখানে ধর্ষণের দৃশ্য নেই! তাহলে আমরা কি শিখছি, আমাদের সংস্কৃতি আমাদের কি শিখাচ্ছে! আমাদের মা-বাবারা কি করছেন? ছোটবেলায় আমাদের মা-বাবা,কাকা-কাকি,দাদা-দাদিরা শোনাতেন গল্প। আমাদের গল্প শুনিয়ে খাওয়াতেন এবং ঘুম পাড়াতেন। যেমন-ডালিম কুমারের গল্প,ঠাকুর মার ঝুলি,বুদ্ধিমান কৃষক,শিয়াল ও কাক,রাক্ষস – ক্ষোক্কস, আরো কত কি গল্প শোনাতেন!যে গল্পের মধ্যে ছিলো বুদ্ধির খেলা,মানবিক চেতনা জাগ্রত করার গল্প! গল্পের শেষে গিয়ে আমাদের বলা হতো কি শিখলাম এই গল্পের মাধ্যমে!আর এখনকার ডিজিটাল যুগের মায়েরা মোবাইলে ভিডিও দেখিয়ে খাওয়ান আর ভিডিও দেখিয়ে ঘুম পাড়ান।যেখানে ভিডিও দেখে একটা বাচ্চা ঘুমায়,খাওয়াদাওয়া করে,মোবাইল দিয়ে তাঁদের কান্না থামানো হয়।সেখানে ওই শিশুটা ভিডিও থেকে কি শিখছে? আজকাল ৪-৫ বছরের একটা বাচ্চা মোবাইলে চ্যাটিং করে।ওয়েব-সাইটে প্রবেশ করে ইউটিউবসহ নানা ফাংশন অপারেটিং করতে পারে সে।আপনারা সবাই অবগত আছেন যে, ইউটিউবে এমন ভিডিওও আছে, বোনের সঙ্গে ভাই সেক্স করছে।মায়ের সঙ্গে ছেলে সেক্স ভিডিও, দেবরের সঙ্গে ভাবি এবং শিক্ষক ও মাওলানাদের সঙ্গে ছাত্রী বা মায়ের সেক্স ভিডিও ।এটা লেখা থাকে তবে আদৌ এটা সত্য কি-না সেটি কেউ বিবেচনা করে না। যা লেখা থাকে সেটাকেই সত্য বলে মেনে নিয়ে তারা ওইভাবেই নোংরা কাজগুলো অনুসরণ করছে। এরথেকে পরিত্রাণ পেতে হলে অবশ্যই সর্বাগ্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।যদিও ইতোমধ্যে সরকারের ডাক ও টেলি যোগাযোগ বিভাগ কয়েক হাজার পর্নো সাইট ব্লক করেছে। ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ চালানো ও দেখার ক্ষেত্রে একটা নিয়ম নীতি চালু করা প্রয়োজন।বয়সের একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিতে হবে। তা না হলে এমন এক সময় আসবে যেদিন এই সমাজ থেকে ড. ওয়াজেদ আলী, ডা. ওয়াহাব,ডা. প্রাণ গোপাল,ডা. বেলায়েত হোসেন,ডা. সাফকাত খন্দকার, ডা. টি এ চৌধুরী,ডাঃরুহুল হক তৈরি হবে না। কোহিনূর রহমান কেয়া লেখক ও শিক্ষক

আপনি আরও পড়তে পারেন