চরমাঝারদিয়া বিপুলসংখ্যক গরু মহিষ ঢুকছে, খাটালে ‘গলাকাটা’ অর্থ আদায়

 রাজশাহী বু্যুরো ডাঃ মোঃ হাফিজুর রহমান (পান্না)

কোরবানির ঈদ সামনে রেখে রাজশাহীর পবা উপজেলার চরমাঝারদিয়া সীমান্ত বিট খাটাল হয়ে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক গরু মহিষ ঢুকছে বাংলাদেশে। প্রতিদিন এই পথেই বাংলাদেশে ঢুকছে এক থেকে দেড় হাজার ভারতীয় গরু মহিষ। মাস দেড়েক ধরে এভাবেই ভারতীয় গরু ঢুকছে বাংলাদেশে। বন্যা শুরু হওয়ার পর গরু আসার হার আরো বেড়ে গেছে। গত ১৬ জুলাই প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভায় দেশি পশুর ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে ঈদের আগে ভারতীয় গরু আনায় নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর পরও চরমাঝারদিয়া বিট খাটালটি দিয়ে দেদার আনা হচ্ছে ভারতীয় গরু মহিষ। ফলে দিনে কোটি টাকার বেশি অবৈধ লেনদেন হচ্ছে এই বিট খাটালে। জানা গেছে, রাজশাহী সীমান্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত বিট খাটাল রয়েছে ছয়টি। তবে ভারত থেকে গুরু-মহিষ আসছে শুধুমাত্র চরমাঝারদিয়া বিট খাটালে। অন্য বিট খাটাল মালিকদের অভিযোগ, চরমাঝারদিয়া বিট খাটালের মালিক স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অপর খাটালগুলোতে গরু-মহিষ যেতে দিচ্ছেন না। এ সুযোগে তিনি প্রতিটি গরু মহিষ থেকে রাজস্ব হিসেবে ৫০০ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার কথা থাকলেও নেয়া হচ্ছে ছয় থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা করে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসিবুল ইসলাম, ইয়ানুস আলী, সাহিদ হোসেন, মোহর আলী, জহুরুল ইসলাম, হুমায়ন আলী ও ফারুক হোসেনসহ ১০ থেকে ১২ জন ব্যবসায়ী চরমাঝারদিয়া বিট খাটাল দিয়ে গরু-মহিষ আমদানি করে থাকেন। মাস খানেক ধরে প্রতিজন ব্যবসায়ী দিনে এক থেকে দেড়শো গরু-মহিষ আমদানী করে। তবে তাদের কাছ থেকে গলাকাটা অর্র্থ আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তারা। গরু ব্যবসায়ী হাসিবুল ইসলাম জানান, শনিবার ভোরে তার ১৮ জোড়া (৩৬টি) গরু এসেছে। বিট খাটাল মালিক প্রতি জোড়া গরুর জন্য ১২ হাজার ৬০০ টাকা করে নিয়েছেন। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী প্রতি জোড়া গরুর জন্য এক হাজার ১০ টাকা নিতে পারবেন। এর মধ্যে শুল্ক এক হাজার ও বিট খাটাল ফি ১০০ টাকা। কিন্তু বাড়তি টাকা দিতে রাজি না হলে সন্ত্রাসী ও বিজিবি দিয়ে তাদের হয়রানি করা হয় বলে জানান এই গরু ব্যবসায়ী। তবে তার বিট খাটালে কর্মরত এক কর্মচারি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিভিন্ন সংস্থাকে টাকা দিতে হয়। গরু-মহিষ যাতে সীমান্ত পেরিয়ে নির্বিঘেœ যেতে পারে সেজন্য বিজিবি, পুলিশ ও কাস্টমস বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে টাকা পাঠাতে হয়। রাজশাহী বিভাগের শুল্ক ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার মজিবুর রহমান জানিয়েছেন, সীমান্তপথে আসা ভারতীয় গরু খাটালে আনার পর প্রতি গরু থেকে ৫০০ টাকা শুল্ক এবং খাটাল ব্যবস্থাপনা কমিশন বাবদ গরুপ্রতি ২০-৫০ টাকা আদায়ের বিধান রয়েছে। এই হিসাবে প্রতি জোড়া গরু থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ১০০ টাকা আদায় করা যেতে পারে। এর বেশি আদায় করা হলেই আইনের লঙ্ঘন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের খাটাল অনুমোদন নীতিমালা-২০১৪তেও এ কথাই বলা আছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন