টিউবওয়েলের পাইপ দিয়ে উঠছে গ্যাস

ভোলায় টিউবওয়েলের পাইপ ও ডোবা থেকে উঠছে প্রাকৃতিক গ্যাস। গত দুই-তিন মাস ধরে সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সুলতানী গ্রামের বিভিন্ন টিউবওয়েলের পাইপ দিয়ে এ গ্যাস বের হতে দেখেন স্থানীয়রা।

ইতোমধ্যে স্থানীয়রা ম্যাচ দিয়ে আগুন ধরিয়ে গ্যাস পুড়ছে। অনেক টিউবওয়েল থেকে গ্যাস বের হওয়ায় স্থানীয়রা ভয়ে টিউবওয়েল ও পাইপ উঠিয়ে গর্ত ভরাট করে দিয়েছে।

এদিকে বিষয়টি জানাজানি হলে এক নজর দেখার জন্য ভিড় জমাচ্ছেন কৌতুহলী মানুষ। সরকারিভাবে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে ওই গ্যাস উঠানোর দাবী করছেন স্থানীয় গ্রামবাসী।

সরেজমিনে গিয়ে ওই এলাকার বাসিন্দা সাহে আলামের সাথে কথা বলে জানাযায়, গত কয়েক মাস ধরে ওই এলাকার বিভিন্ন টিউবওয়েলের মধ্যে গড় গড় শব্দ শুনতে পায় তারা। কিন্তু প্রথমে বিষয়টি তারা গুরুত্ব দেয়নি। পরবর্তীতে গত দেড় মাসে ওই এলাকার দেড় কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ৩ টি সেলো টিউবওয়েল জন্য পাইপ বসানো হলে সেখান থেকে প্রবল বেগে পানি উঠতে থাকে এবং একটি গন্দও পায় তারা।

টিউবওয়েল শ্রমিকদের কাছে বিষয়টি সন্দেহ হলে তারা পাইপের মুখে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তখন পাইপ থেকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে। এ ঘটনা মুহুর্তের মধ্যে পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পরলে স্থানীয়রা এ দৃশ্য দেখার জন্য ভিড় জমাতে থাকে। পরে টিউবওয়েল শ্রমিকরা ওই বাড়ির মালিককে গ্যাসের বিষয়টি জানান।

ওই এলাকার জমাদ্দার বাড়ির আজিজুর রহমান জমাদ্দার জানান, গত রমজান মাসের ২ দিন আগে আমার বাড়িতে একটি সেলো টিউবওয়েল বসানোর সিদ্ধান্ত নেই। শ্রমিকরা মাটিতে ২৫ ফিট পাইপ বসানোর পরেই প্রবল বেগে পানি উঠতে থাকে এবং একটি গন্দ বের হতে থাকে। আমরা গ্রথমে বিষয়টি বুঝতে পারেনি। কিন্তু শ্রমিকদের সন্দেহ হলে তারা পাইপের সামনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে। তখন তারা আমাকে জানায় এখানে গ্যাস আছে। পরবর্তীতে তাদেরকে অন্যস্থানে কল বসানোর জন্য বলি। সেখানেও একই ঘটনা ঘটে।

একই এলাকার ব্যাপারী বাড়ির সাইফুল ব্যাপারী জানান, গত ১ মাস আগে তিনি তার বাড়ির উঠানে একটি সেলো টিউবওয়েল বসান। শ্রমিকরা চলে গেলে টিউবওয়েল থেকে গড় গড় শব্দ ও গন্দ বের হতে থাকে। তখন তারা ভয় পায়। তার এক ছোট ছেলে কল শ্রমিকদের সাথে আলাপ করলে তারা আগুন জ্বালিয়ে দিতে বলে। তাদের কথা মত আগুন জ্বালিয়ে দিলে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে। এসময় সাইফুল ব্যাপারী ভয়ে তার টিউবওয়েলের পাইপ বের করে ফেলে। তারপরও শব্দ ও গন্দ বের হলে গর্তে মাটি ও বালু দিয়ে চাপা দিয়ে দেয়।

স্থানীয় বাচ্চু মিয়া জানান, এ এলাকায় প্রায় ২ মাস ধরে টিউবওয়েল ও ডুবা থেকে গ্যাস বের হচ্ছে। স্থানীয়রা আগুন ধরিয়ে দিয়ে আনন্দ করছে। আমাদের গ্রামের মাটির নিচে গ্যাস রয়েছে এটা আমাদের জন্য একটি সু খবর। এগ্যাস যদি সরকারিভাবে উত্তোলনের উদ্যোগ নেয়া হয় তাহলে আমাদের গ্রাম অনেক উন্নত হবে।

রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান খান জানান, গ্যাস উঠার বিষয়টি আমি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তারা দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়াও গ্যাসের দ্রুত পরীক্ষার জন্য সরকারের কাছেও দাবী জানান তিনি।

এব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক জানান, আমরা বিষয়টি জেনেছি। সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাসহ একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি দেখছেন। আমরা এটি পরীক্ষা ও নিরীক্ষার করার জন্য মন্ত্রনালয়ে একটি চিঠি পাঠাবো। তখন মন্ত্রনালয়ে থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে।

প্রসঙ্গত, ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা ও সদর উপজেলার ভেদুরিয়া এলাকায় দুইটি গ্যাস ফিল্ড রয়েছে। এগুলো থেকে ইতোমধ্যে বাণিজিকভাবে গ্যাস উত্তলন করা শুরু হয়েছে। রাজাপুরের চর সুলতানী গ্রামে যদি গ্যাসের মজুদ পরিপূর্ণ থাকে তাহলে এটা নিয়ে জেলায় মোট তিনটি গ্যাস ফিল্ড হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন