হাটে হাঁটাই দায়

মইনুল ইসলাম পেশায় ব্যবসায়ী, বাস করেন রাজধানীর ধানমন্ডিতে। ঝিগাতলা অস্থায়ী পশুর হাটের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। জানা গেল, হাটে প্রবেশ না করেই ফিরে যাচ্ছেন তিনি। কেন? বললেন, সকালে ও দুপুরে বৃষ্টি হওয়ায় হাটে পানি জমে গেছে। এর মধ্যে ইজারাদার সেখানে বালু ফেলায় পানি-বালু মিশে হয়ে গেছে কাদা, তা-ও প্রায় হাঁটু সমান।

এর মধ্যে গরুর গোবর আর চারপাশের নানা ময়লা আবর্জনা মিলে সেই কাদাপানির যাচ্ছেতাই দশা। তাই মইনুল ইসলাম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, হাটে প্রবেশ করে নাজেহাল হওয়ার চেয়ে ফিরে যাওয়াই উত্তম। শুধু মইনুল ইসলামই নন এবং শুধু ঝিগাতলা পশুর হাটই নয়; অধিকাংশ নগরবাসীই গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর হাটগুলোয় গিয়েও ভেতরে প্রবেশ করেননি হাটের ভেতরে যাচ্ছেতাই অবস্থার কারণে। আর যারা হাটে প্রবেশ করেছেন, তাদের অবস্থা ছিল খুবই সঙ্গীন। শুধু তাই নয়, বৃষ্টিতে জলে কাদায় হাটের পশুর অবস্থাও ছিল খুবই করুণ।

হাটের স্থান নির্ধারণ করে নগর কর্তৃপক্ষ। যথার্থ পরিবেশে হাট বসছে কিনা এবং হাট বসার পর পরিবেশ যথার্থ থাকছে কিনাÑ এসব দেখভালের বিষয়টিও নগর কর্তৃপক্ষের ওপরই বর্তায়; কিন্তু গতকালের বৃষ্টিতে হাটগুলোর অবস্থা যখন যাচ্ছেতাই, তখন ইজারাদারের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা লক্ষ করা গেছে সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বক্তব্যে।

রাজধানীর অস্থায়ী পশুর হাটগুলোতে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের যথার্থ ব্যবস্থা না থাকায় কাদা-জলে নোংরা আবর্জনা আর গোবরে সয়লাব হয়ে গিয়েছিল গতকাল। ঝিগাতলা হাটে লেদার টেকনোলজি কলেজের দেয়াল ঘেঁষে প্রায় হাঁটু সমান পানি জমে ছিল। মাঝখানের রাস্তাটিতেও পানি জমে
যাওয়ায় মানুষ চলাফেরা করতে পারছিল না। বৃষ্টি প্রতিরোধক ত্রিপল দিয়ে ছোট ছোট শামিয়ানা তৈরি করা হলেও কাজ হয়নি। গরু আসছে, নতুন নতুন জায়গায় সেগুলোর থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু শুকনো জায়গা নেই বললেই চলে। এতে করে গরু ব্যাপারীদের চোখে মুখেও ছিল রাজ্যের হতাশা।

তারা বলছেন, এ ভাবে ঈদের আগে যদি আবারও বৃষ্টিপাত হয় তা হলে তাদের পথে বসতে হবে। কারণ সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। মানুষ এ নিয়ে উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে যদি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে তা হলে হাটের এহেন বাজে পরিবেশে ক্রেতা আসবেন খুবই কম। কাজেই বিক্রিও কমে যাবে। সে ক্ষেত্রে তাদের আর্থিক ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে। বৃষ্টিতে শুধু ক্রেতাদের ভোগান্তির পাশাপাশি গরু ব্যবসায়ীদের ভুগতে হয় অনেক বেশি।
গাবতলীর স্থায়ী হাটের অবস্থাও তথৈবচ। সেখানেও বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাকে ট্রাকে করে গরু নিয়ে আসছেন ব্যাপারীরা। কিন্তু গরু দাঁড়ানোর মতো শুকনো জায়গা পাননি তারা হাটের কোথাও। পরে বাধ্য হয়ে নোংরা কাদা পানিতে গরু দাঁড় করিয়ে রাখতে বাধ্য হয়েছেন। দূরদূরান্ত থেকে আসা পশুগুলো বসে বিশ্রাম পর্যন্ত নিতে পারছিল না।

গবাতলী হাট পরিচালনাকারী দলের সদস্য রাকিব ইমরান বলেন, আমাদের হাটের প্রায় সব গরু এসে গেছে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে পানি জমায় গরু ব্যাপারীরা যারপরনাই ভোগান্তিতে পড়েছেন। কিছু গরু সরিয়ে রাস্তায় নেওয়া হয়েছে। সারাদিন বৃষ্টির কারণে বেচাকেনা হয়নি বললেই চলে। আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে হাটের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে।

কমলাপুর, উত্তরা, মিরপুর, আফতাবনগরের অস্থায়ী পশুর হাট ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে। এসব হাটে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যাপারীরা তাদের আর সঙ্গে আনা পশুর দুর্ভোগে কাবু হয়ে পড়েছেন। দিনভর বৃষ্টির কারণে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজতে হয়েছে অনেককে। পশুগুলোকে দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়েছে পানিতে।

এসব সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খন্দকার মো. নাজমুল হুদা শামীম বলেন, সুষ্ঠুভাবে হাট পরিচালনার দায়িত্ব ইজারাদারদের। হাট শেষ হলে ঈদের পর সেটি সাফসুতরো করে আগের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের।
হাট থেকে পানি সরে যাওয়ার ব্যবস্থা না রাখা কিংবা যেখান থেকে পানি সরে যায় না, সেখানে হাট বসানোর দায় কি ইজারাদারের? এমন প্রশ্নে প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা বলেন, যে হাট যে অঞ্চলে, সে অঞ্চলের আঞ্চলিক কর্মকর্তা আছেন, হাট দেখভালের কমিটি আছে, ভ্রাম্যমাণ আদালত আছেন। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। ইজারাদার নিয়ম না মানলে জরিমানা করবেন।

প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তার এ পাশ কাটানো বক্তব্য মানতে নারাজ সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেছেন, নগর কর্তৃপক্ষ হাটের স্থান নির্ধারণ করার সময় এর পরিবেশ যাচাই এবং পয়নিষ্কাশনসহ অন্য বিষয়াদি বিবেচনা করে দেখবে। এসব বিষয়ে যারা তিন দিনের জন্য হাটের ইজারা পেয়েছেন, তাদের ওপর দায় চাপিয়ে দেওয়া অন্যায়; কিন্তু এমন চর্চা অহরহই চলছে এ নগরীতে।

আপনি আরও পড়তে পারেন