রনকের অপরাধ শীকার ছিনতাইয়ের সময় হত্যা করা হয় রাব্বিকে

রাজশাহী ব্যুরো ডাঃ মোঃ হাফিজুর রহমান (পান্না)

রাজশাহী সিটি কলেজের ছাত্র ফারদিন ইসনা আশারিয়া ওরফে রাব্বি (১৯) হত্যা মামলার আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকা-ে ব্যবহারিত দা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জনিয়েছে পুলিশ। ১৭/০৮/০১৯ শনিবার আদালতে আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। রাত আটটার দিকে রাজশাহী মহানগর পুলিশের এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। এই আসামির নাম মো রনক (২৩)। তার বাবার নাম কুদরত আলী। বাড়ি নগরীর হেতেমখাঁ ছোট মসজিদের পাশে ও বর্নালী হলের পিছনে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ৬ আগস্ট ভোর প্রায় সাড়ে ৫টার দিকে হেতেমখাঁ ছোটমসজিদ সংলগ্ন পুরাতন পাঁচতলা ভবনের এর সামনে পাকা রাস্তার ওপর মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে কলেজ ছাত্র ফারদিনকে হত্যা করা হয়। ফারদিন সেদিন ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছিলেন। তিতুমীর এক্সপ্রেস ট্রেন ধরার জন্য তিনি ভোরেই বের হয়েছিলেন। ঘটনার দিন রাতেই নগরীর বোয়ালিয়া থানায় এ ব্যাপারে ফারদিনের বোন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। পরের দিনই পুলিশ ৭ দশমিক ২ গ্রাম হেরোইনসহ মো রনককে গ্রেপ্তার করে এবং তাকে আদালতে সোর্পদ করে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে, এই হত্যা মামলার তদন্তকালে পুলিশ প্রাপ্ত তথ্য ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীর বর্ণনায় জানতে পারে যে, হেরোইনসহ ধরা পড়া আসামি রনক ওই হত্যাকা-ের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। পরের দিন ৮ আগস্ট তাকে ফারদিন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই দিনই তাকে রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়। গত বুধবার আদালত তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশ জানায়, নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদে আসামি রনক ওই হত্যা মামলার ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তার দেওয়া তথ্যমতে তার বাসার শয়ন কক্ষ থেকে হত্যাকা-ে ব্যবহƒত একটি ১৫ ইঞ্চি লম্বা ধারালো দা আলামত হিসেবে উদ্ধার করা হয়। শনিবার (১৭ আগস্ট) রনক রাজশাহী মহানগর হাকিম-৫ এর আদালতের বিচারক সেলিম রেজার কাছে হত্যার ঘটনা বর্ণনা করেন। তিনি স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আসামি রনক তার জবানবন্দিতে জানান, তিনি বিভিন্ন নেশায় আসক্ত। ঘটনার দিন একাই ছিনতাই করার উদ্দেশ্যে তার পরিহিত গোলগলা গেঞ্জির ভেতরে দা লুকিয়ে রাখেন। ভোর প্রায় সাড়ে ৫টার দিকে ঘটনাস্থলের কাছে আমরুর কনফেকশনারীর পাশে ছিনতাই এর উদ্দেশ্যে ওঁৎ পেতে থাকেন। ওই সময় ফারদিন তিতুমীর ট্রেন ধরার উদ্দেশে ঘাড়ে ও কাধে ব্যাগ নিয়ে পায়ে হেঁটে নগরের বর্ণালীর মোড়ের দিকে যেতে থাকেন। তখন আসামি রনক কলেজ ছাত্র ফারদিনের পথরোধ করে দা বের করে ছিনতাই এর চেষ্টা করেন। ফারদিন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। দুইজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এক সময় ফারদিন আসামি রনককে ফেলে দেন এবং চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন। এতে আসামি রনক রেগে গিয়ে পিছন থেকে ফারদিনের মাথায় দা দিয়ে সজোরে কোপ মারেন। এতে তারা মাথায় গুরুতর জখম হয়। তিনি মাটিতে পড়ে যান। আসামি রনক অবস্থা বেগতিক দেখে, আশেপাশের লোকজন ও মসজিদের লোকজনের হাতে ধরা পড়ার ভয়ে টাকা, ম্যানিব্যাগ, মোবাইল ও ব্যাগ না নিয়েই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। আসামি রনক হেরোইন কেনার টাকা সংগ্রহের জন্য একাকী দা হাতে ছিনতাই করতে গিয়ে এই হত্যাকা- ঘটান বলে তার জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন। আরো জানান, তিনি ওই কলেজ ছাত্রকে আগে তিনি চিনতেন না। ঘটনা ঘটার পর বিভিন্ন লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারেন তিনি রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের ছাত্র ছিলেন এবং মেসে বসবাস করতেন। ফারদিন রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার মোমিনপুর গ্রামে। তার বাবার নাম মোজাফফর হোসেন। তিনি চার বোনের একমাত্র ভাই ছিলেন। কিছুদিন আগে তার বাবা মারা গেছেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন