প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই শেষ ৫৭ কোটি টাকা

কাগজে কলমে প্রকল্পটি শুরু হয়েছে ১৪ মাস আগে, কিন্ত প্রকল্পের কোনো কাজই শুরু হয়নি। এমন কি প্রকল্পের এলাকাও নির্বাচন করা হয়নি। এরই মধ্যে ৫৭ কোটি টাকা খরচ হয়ে গেছে। মোটা অংকের এ টাকায় প্রকল্পের কর্মকর্তারা বিদেশে একাধিক প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন। আড়াই কোটি টাকায় পাঁচটি গাড়ি কিনেছেন এবং প্রতি মাসে ১০ লাখ টাকায় আরও পাঁচটি গাড়ি ভাড়া নিয়েছেন।

বন ব্যবস্থাপনা ও বনাঞ্চলনির্ভর পেশাজীবীদের অন্যত্র জীবিকার সংস্থান এবং বসবাসের সমন্বয় করার জন্য ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার এ প্রকল্প চালু করা হয়েছিল গত বছর জুলাইয়ে।এ প্রকল্পের আওতায় ৬০০ গ্রামের ৭৬ হাজার হেক্টর জমিতে গাছ লাগানো এবং ৪০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল।কিন্তু প্রকল্প শুরুর ১৪ মাস চলে গেলেও কর্মএলাকা নির্ধারণই সম্ভব হয়নি। প্রকল্প কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে ৫৭ কোটি টাকা ব্যয় করলেও প্রকল্পের কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির কথা বলতে পারেননি।

টেকসই বন ও জীবিকা নির্বাহ শীর্ষক প্রকল্পটি এই সময়ের মধ্যে কাজের কিছুই না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জাতীয় সংসদের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

কমিটির সদস্যরা এটাকে নিছক অবহেলা আর অপচয় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। গত শনিবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন একাধিক সদস্য।

জাতীয় সংসদ ভবনে বৈঠক শেষে স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, গত ১৪ মাসে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি কিছু হয়নি। কর্মকর্তারা প্রকল্প এলাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করেননি। প্রকল্পের অগ্রগতি আমাদের প্রত্যাশা থেকে অনেক দূরে।

বৈঠক উপস্থিত কমিটির একজন সদস্য জানান, প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ যেমন প্রশিক্ষণ মডিউল প্রস্তুত করা, প্রশিক্ষক বাছাই এবং প্রকল্পের এলাকা নির্বাচন সম্পন্ন হয়নি। তবে প্রকল্পের কর্মকর্তারা গাড়ি কিনেছেন আবার ভাড়াও নিয়েছেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নিখুঁত অবহেলা দৃশ্যমান।

তিনি বলেন, প্রকল্পের তহবিল ব্যবহার করে প্রশিক্ষণের জন্য গত বছরের জুনে বন বিভাগের নয়জন কর্মকর্তা ভারত ও নেপাল সফর করেছিলেন। এটি গ্রহণযোগ্য নয়। বৈঠকে কমিটির সদস্যরা এজন্য হতাশা প্রকাশ করেন। পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বিশ্বব্যাংকের ঋণ থেকে আসবে এবং বাকি অর্থ সরকারি তহবিল থেকে সংগ্রহ করা হবে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে প্রকল্প পরিচালক জহির উদ্দিন আহমেদ জানান, তারা আড়াই কোটি টাকায় পাঁচটি গাড়ি কিনেছেন এবং প্রতি মাসে আড়াই লাখ টাকায় আরও পাঁচটি গাড়ি ভাড়া নিয়েছেন। প্রকল্পের কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি এখন শুরু হয়েছে।

প্রকল্প কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ সম্পর্কে তিনি বলেন, অভিজ্ঞতা অর্জন ও শেখার জন্য প্রশিক্ষণ নিতে তারা সেখানে গিয়েছিলেন। প্রশিক্ষণ থেকে শিখে আসা পদ্ধতি তারা প্রয়োগ করবেন। প্রকল্পকে কার্যকর করে তোলার জন্য তারা বিদেশি বিশেষজ্ঞদের অধীনে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন