অবশেষে দেশে ফিরলেন সেই সুমি

অবশেষে দেশে ফিরলেন সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে উদ্ধারে আকুতি জানানো সেই সুমি আক্তার। বিমানবন্দরে অবতরণের পর তারা পঞ্চগড়ের পথে রওনা হয়েছেন। তবে একই ফ্লাইটে সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার আরও ৯১ নারীর দেশে ফেরার কথা থাকলেও তারা কেউ ফেরেননি।

শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টায় এয়ার এরাবিয়ার জি৯-৫১৭ নম্বর ফ্লাইটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান সুমি।

বিমানবন্দরে সুমিকে গ্রহণ করেন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক (প্রশাসন ও উন্নয়ন) উপসচিব মো. জহিরুল ইসলাম। এসময় প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপস্থিত থেকে বিমানবন্দরের আনুষ্ঠিকতা সারতে সহযোগিতা করেন সুমিকে। তবে এসময় তাকে কারও সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়‌নি। বিমানবন্দরে সুমিকে গ্রহণের জন্য উপস্থিত ছিলেন তার স্বামী স্বামী নুরুল ইসলাম এবং দুই সন্তান রিফাতুল ইসলাম ও সিফাতুল ইসলাম। তাদেরও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়নি।

পরে কঠোর গোপনীয়তার ম‌ধ্য দিয়ে সকাল সোয়া ৮টার দিকে সু‌মিকে ভিআইপি টার্মিনাল দিয়ে বের করা হয়। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সুমিকে নিয়ে পঞ্চগড়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে একটি টিম। সেখানে সুমিকে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে তার মা-বাবার কাছে হস্তান্তর করা হবে।

ব্র্যাকের মাইগ্রেশন কর্মসূচির তথ্য কর্মকর্তা মো. আল-আমিন (নয়ন) বলেন, সকালে এয়ার এরাবিয়ার ফ্লাইটে করে সুমি দেশে ফিরেছেন। প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের সহায়তায় তাকে তার বাড়ি পঞ্চগড় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় তিনি বাড়ি যাচ্ছেন।

আল-আমিন (নয়ন) আরও জানান, সুমিকে দেশে ফিরিয়ে এনে বাড়িতে পাঠানোর পুরো প্রক্রিয়াটি সমন্বয় করেছেন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম।

গত ৩০ মে ‘রূপসী বাংলা ওভারসিজ’ নামে একটি এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরব যান আশুলিয়ার চারাবাগ এলাকার নুরুল ইসলামের স্ত্রী সুমি আক্তার (২৬)। সেখানে পৌঁছানোর সপ্তাহখানেক পর থেকেই তাকে মারধর, যৌন হয়রানিসহ নানা ধরনের নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে ফেসবুকে এক ভিডিওতে তিনি তার ওপর অকথ্য নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরে দেশে ফেরার আকুতি জানান এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

সুমির এ ভিডিও ভাইরাল হলে তা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পরে জেদ্দার দক্ষিণে নাজরান এলাকার কর্মস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে হেফাজতে নিয়ে যায় পুলিশ। তবে সৌদি আরবে সুমির নিয়োগকর্তা তাকে দেশত্যাগের অনুমতি না দেওয়ায় আইনি জটিলতায় আটকে যায় তার দেশে ফেরা। পরে সুমিকে দেশে ফেরাতে ‘রূপসী বাংলা ওভারসিজ’কে বিমানের টিকিটসহ ২২ হাজার রিয়াল (প্রায় পাঁচ লাখ টাকা) পরিশোধ করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে গত ৫ নভেম্বর অনুরোধ করে জেদ্দায় অবস্থিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল।

এরপর জেদ্দায় বাংলাদেশ দূতাবাস শ্রম আদালতে এ বিষয়ে একটি শুনানির আয়োজন করে। দেশটির নাজরান শহরে অবস্থিত শ্রম আদালতে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে সুমি আক্তারের নিয়োগকর্তা, সুমি আক্তার ও কনস্যুলেট প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। শুনানিতে কফিলের দাবি করা ২২ হাজার সৌদি রিয়েল পরিশোধের আবেদন নামঞ্জুর হয়। পাশাপাশি কনস্যুলেটের আবেদনের কফিলকে ‘ফাইনাল এক্সিট’ দিতেও আদেশ দেন ওই শ্রম আদালত।

সুমির স্বামী নুরুল ইসলাম জানান, রূপসী বাংলা ওভারসিজের মাধ্যমে সৌদি আরবে যাওয়ার পর সুমিকে এক বাড়িতে গৃহকর্মীর চাকরি দেওয়া হয়। ওই বাড়ির মালিক তাকে ঠিকমতো খেতে দিতেন না। কথায় কথায় মারধরসহ শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। দেশে পরিবারের সঙ্গেও তাকে কথা বলতে দেওয়া হতো না। তার হাতে গরম পানি ঢেলে নির্যাতন করা হতো। নির্যাতনের কথা শুনে নুরুল ইসলাম রূপসী বাংলা এজেন্সির মালিক আক্তার হোসেনের নামে পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন