নবীনদের চেয়ে এগিয়ে প্রবীণরা

 

ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলনের বাকি মাত্র ৪ দিন। আগামী ৩০ নভেম্বর সকাল ১১টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিকে সম্মেলনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই সরগরম হয়ে উঠছে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের রাজনীতি। দলের শীর্ষ পদে আসতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন এক ডজন পদপ্রত্যাশী নেতারা। তবে শীর্ষ পদে আসতে নবীনদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে দলটির প্রবীণ নেতারা।

আ.লীগ সূত্র, আগামী ২০-২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন। অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনের অংশ হিসাবে তৃণমূলের মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলার পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের সম্মেলন শেষ করতে চায় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেজন্য দায়িত্বশীল নেতাদের নির্দেশনার সাথে সাথে সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করে দিয়েছেন তিনি।

মূলত অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনের মধ্যদিয়ে দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, বিতর্কিত ও বিশেষ সুযোগ-সুবিধা আদায়ের জন্য বিএনপি-জামায়াত থেকে অনুপ্রবেশকারী নেতাদের ছেঁটে ফেলবে বঙ্গবন্ধুকন্যা।

নেত্রী এমন নির্দেশনা বাস্তবায়ন ও সম্মেলনকে সফল করতে কাজ শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দলটির মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখার দায়িত্বশীল নেতারা আগামী ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সম্মেলন।

অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনকে সামনে রেখে দলটির শীর্ষ পদে আসতে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছে দলটির ত্যাগী, পরিশ্রমী ও ক্লিন ইমেজের নেতারা। সংগঠনের দায়িত্বশীল পদে থাকতে দলটির হাইকমান্ডের দায়িত্বশীল নেতাদের কাছে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন অনেকেই।

ওইসব পদপ্রত্যাশী ও সমর্থকদের পদচারণায় মুখরিত ধানমন্ডিস্থ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়। আসন্ন উত্তরের সম্মেলনে সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ কাদের খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ওয়াকিল উদ্দিন, শেখ বজলুর রহমান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, বনানী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম জসিম উদ্দিন।

একই সাথে সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন এসএম মান্নান কচি, হাবিব হাসান, এম সাইফুল্লাহ সাইফুল, আজিজুল হক রানা, মিজানুর রহমান মিজান।

এছাড়াও সভাপতি-সম্পাদক পদে দায়িত্ব নিতে বেশকিছু নেতা প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মহানগর উত্তরে নতুন পদপ্রত্যাশীদের পাশাপাশি ফের দায়িত্ব পেতে কাজ করছেন বর্তমান সভাপতি-সম্পাদক।

দলীয় সূত্র, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দায়িত্বশীল পদে আসতে নবীন নেতাদের চেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে প্রবীণ নেতারা। এরমধ্য রয়েছে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ কাদের খান। তিনি বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি সাথে যুক্ত রয়েছেন।

গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এই আসনে জোট শরিক দলকে ছাড় দেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর তাতে কপাল পুড়ে কাদের খানের। তবে আসন্ন সম্মেলনে সভাপতি পদে দেখা যেতে পারে তাকে।

জানতে চাইলে কাদের খান আমার সংবাদকে বলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুকন্যা আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছিলেন। আবার নেত্রীর নির্দেশে আমি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছিলাম। তিনি চাইলে এবার উত্তর আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিতে আমি প্রস্তুত আছি।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তরে যাকে দায়িত্ব দিবেন আমি তার হয়ে কাজ করব।

সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছে আরেক মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকা মহানগরী উত্তর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মো. ওয়াকিল উদ্দিন। তিনি তার দীর্ঘ জীবনে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এবার সম্মেলনে তাকে ঘিরেও বেশ আলোচনা রয়েছে।

একইসাথে উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপদি পদে বেশ আলোচনায় রয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তবে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দল ও সরকারকে আলাদা করার ঘোষণা অনেক আগেই দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যার সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলে আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে দেখা যেতে পারে।

বনানী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম জসিম উদ্দিন। তিনি ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলন করতে গিয়ে জেলও খেটেছেন। নেত্রী মুক্তিসহ জড়িত ছিলেন বিভিন্ন আন্দোলনে। ১৯৯৪ সাল থেকে তিনি গুলশান থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ২০০৪ সালে সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বও এরই মধ্যে পালন করেছেন। বর্তমানে বনানী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে রয়েছেন তিনি।

এছাড়া মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আলেচনায় রয়েছে সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি। তিনি ১৯৮৪ সালে বৃহত্তর মিরপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি, ১৯৮৬ সাথে অবিভক্ত ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ছাত্রজীবন শেষে যুক্ত হন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে।

সর্বশেষ তিনি মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। রাজনীতির এই দীর্ঘ সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোটর সরকারের সময় বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ফলে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে তার আলাদা জনপ্রিয়তা রয়েছে।

এবার সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে তাকে দেখা যেতে পারে। জানতে চাইলে তিনি আমার সংবাদকে বলেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। সেই শুদ্ধি অভিযানকে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মী সমর্থন করেছেন। নেত্রীর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য আমরা সবাই প্রস্তুত আছি।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা সবসময় দক্ষ, ত্যাগী, পরিশ্রমী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবারো বিতর্কমুক্ত নেতৃত্ব উপহার দিবেন। নেত্রী চাইলে আমি দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তু আছি বলে জানান তিনি। একই এ পদে আলোচনায় রয়েছেন আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসান। তিনিও ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় নির্যতনের শিকার হয়েছেন।

জানতে চাইলে তিনি আমার সংবাদকে বলেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বের ফলে আজ আওয়ামী লীগের এতো সফলতা। তিনি জানেন কাকে দলের দায়িত্ব দিলে দল ভালো চলবে। নেত্রী যাকে দায়িত্ব দিবেন তার সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করব।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতির সাথে যুক্ত আছি নেত্রী চাইলে আমি দায়িত্ব গ্রহণের জন্য প্রস্তুত আছি।

সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়। সম্মেলনের দীর্ঘদিন পরও কমিটি দিতে না পারায় দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাককে দক্ষিণ এবং কর্নেল (অব.) ফারুক খানকে উত্তরের কমিটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়।

পরে সম্মেলনের সাড়ে তিন বছরের মাথায় ২০১৬ সালে ১০ এপ্রিল প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মহানগর উত্তরে একেএম রহমত উল্লাহকে সভাপতি ও সাদেক খানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এ কমিটির মাধ্যমে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ভেঙে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ নামে দুটি কমিটি হয়। কমিটি ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিন বছরমেয়াদি ঢাকা মহানগরের আওয়ামী লীগের দুই অংশের কমিটির মেয়াদ পেরিয়ে গেছে অনেক আগেই।

আপনি আরও পড়তে পারেন