মণিরামপুরে আমন চাষির তালিকা প্রস্তুতে অনিয়ম

যশোরের মণিরামপুরে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে আমন ধান ক্রয়ের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের ২০ নভেম্বর থেকে। সময়সীমা এক সপ্তাহ পার হলেও এখনও ক্রয় কাজের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারেননি কর্তৃপক্ষ।

এদিকে আমন সংগ্রহে কৃষি অফিসের তৈরিকৃত তালিকায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরাসরি কৃষকের দ্বারে দ্বারে গিয়ে প্রকৃত কৃষি কার্ডধারী আমন চাষিদের তালিকা তৈরির কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। কৃষকের দ্বারে না গিয়ে বিভিন্ন এলাকায় পছন্দের দুই-একজনের মাধ্যমে অনুমান ভিত্তিক তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। ফলে প্রকৃত আমন চাষিদের নাম বাদ পড়ে আমন চাষি নন কার্ডধারী এমন কৃষকের নাম তালিকায় স্থান পেয়েছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। কৃষি অফিসের প্রস্তুতকৃত তালিকায় ধান ক্রয় করা হলে প্রকৃত কৃষক বাদ পড়ে আবারও সিন্টিকেটের মাধ্যমে ধান ক্রয় হতে পারে বলে ধারণা করছেন কৃষকরা। এই তালিকা পুনরায় যাচাই বাছাইয়ের আবেদন তাদের।

এদিকে অভিযোগের বিষয়টি সরেজমিন খতিয়ে দেখার জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে তালিকা চাওয়া হলে ব্যস্ততার অজুহাতে তিনি তা সরবরাহ করেননি।

চলতি আমনের মৌসুমে ধান চাষ করতে গিয়ে কয়েক বছরের মধ্যে এবারই বেশি খরচের শিকার হয়েছেন কৃষকরা। তারপর ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে পাকা ধান মাটিতে নুইয়ে পড়ে পানিতে ডুবে যাওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে এবারই মণিরামপুর থেকে সর্বোচ্চ রেকর্ড পরিমাণ ২ হাজার ৪৭৪ মেট্রিকটন ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কেজি প্রতি ২৬ টাকা করে প্রতিমণ ধান এক হাজার ৪০ টাকায় এবারও ক্রয় করা হবে। চলতি ২০ নভেম্বর থেকে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই ধান ক্রয়ের জন্য উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে কৃষি কার্ডধারী প্রকৃত আমন চাষিদের তালিকা প্রস্তুত করতে গত ১৩ অক্টোবর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এরপর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মণিরামপুর কৃষি অফিস কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করে। উপজেলার ৬৫ হাজার কার্ডধারীর মধ্যে আমন সংগ্রহের তালিকায় ৪৫ হাজার কৃষকের নাম অন্তর্ভূক্ত করেছে অফিস। এই তালিকায় কার্ড আছে কিন্তু আমন ধান করেননি বা কার্ড নেই ধান চাষ করেছেন এমন অনেক চাষিদের নাম স্থান পেয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এই বছরই প্রথম লটারির মাধ্যমে ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটি। ইতিমধ্যে মিটিং করে সব উপজেলাকে লটারির সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ধার-দেনা শোধ করতে ইতিমধ্যে অধিকাংশ কৃষক ক্ষেতের ধান মাড়াই করে ৬১০ টাকা মণ দরে বিক্রি শুরু করেছেন। গুদাম কর্তৃপক্ষ যখন ধান নেওয়া শুরু করবে তখন অনেক কৃষকেরই ঘরে ধান থাকবে না। ফলে কর্তৃপক্ষের গড়িমশিকে আবারও সিন্ডিকেট হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আবার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান দেওয়ার সুযোগের আশায় উপজেলার বিভিন্ন মহল্লায় ক্ষমতাসীন বিভিন্ন লোক প্রলোভন দেখিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে কার্ড সংগ্রহ করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তাদের নির্ধারণ করা নামগুলো তালিকায় তুলতে উপ-সহকারীদের চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, তালিকা তৈরির জন্য আমাদের এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। এত অল্প সময়ে সঠিকভাবে তালিকা করা সম্ভব হয়নি।

মণিরামপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মামুন হোসেন খান বলেন, এবার প্রতি কৃষকের কাছ থেকে দেড় মেট্রিকটন করে ধান সংগ্রহের জন্য জেলা কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মণিরামপুরে কৃষকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এক মেট্রিকটন করে ধান নেওয় হবে। সেই হিসেবে প্রায় আড়াই হাজার কৃষক ধান দিতে পারবেন।

তিনি বলেন, ইউএনওর সাথে কথা হয়েছে। তিনি সময় দিলে দ্রুত লটারি করে ক্রয় কাজ শুরু হবে।

মণিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার বলেন, সব কৃষকের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তালিকা করা সম্ভব না। আমরা ৪৫ হাজার কৃষকের তালিকা তৈরি করে ইউএনও অফিসে জমা দিয়েছি। কৃষি কার্ড ছাড়া কেউ ধান দিতে পারবে না। যাদের নাম ক্রয় তালিকায় স্থান পাবে তাদের কারো কার্ড না থাকলে অপেক্ষমান তালিকা থেকে তার পরের ব্যক্তি ধান দিবেন। কোন নামের ব্যাপারে অভিযোগ পেলে বিষয়টি যাচাই করে দেখা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

মণিরামপুর উপজেলা ধান ক্রয় কমিটির সভাপতি ইউএনও আহসান উল্লাহ শরিফী বলেন, লটারির মাধ্যমে আগামী সপ্তাহে আমন সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু করা হবে।

 

 

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন