অনুদান নয় মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চায় নবাবগঞ্জের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার পরিবার

ঢাকা জেলা প্রতিনিধি.
অনুদান নয় মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চায় ঢাকার নবাবগঞ্জের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান বাবুলের পরিবার। প্রতিবাদী এই মুক্তিযোদ্ধা স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৩ সালের ১৫ নভেম্বর আততায়ীর গুলিতে নিহত হন।
১৯৭১ সালের সারাদেশে যখন অহিংস আন্দোলন চলছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষনে ইঙ্গিতপূর্ণ আহ্বান সারাদেশে বাঙালির জাগরণ সৃষ্টি হয়। তখন বক্সনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বশম শ্রেণির ছাত্র হাবিবুর রহমান বাবুল তার বন্ধু মিজানুর রহমান ও শের-ই-বাংলা নগর কৃষি কলেজের ছাত্র কামরুল ইসলাম জানু একত্রিত হয়। তারা তৎকালীন ছাত্র রাজনীতির প্রবক্তা আজিজুর রহমান ফকুর কাছে যান। ঐ সময়ে ফকু স্যার নবাবগঞ্জের বদিউজ্জামান বদির নিকট নিয়ে যান। তাদের পাঠানো হয় কুমিল্লায় তৎকালীন কুমিল্লা ভিক্টোরীয়া কলেজের ভিপি, বর্তমান কুমিল্লা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওমর ফারুকের কাছে। রাস্তায় অনেক কষ্ট স্বীকার করে বক্সনগর ল ঘাট দিয়ে ফতুল্লা হয়ে নারায়নগঞ্জে পোষ্ট মাষ্টার জালাল মোল্লার বাড়িতে তিন-চারদিন অবস্থান করেন। পরে জালাল মোল্লার বড় ছেলে তৎকালীন তুলারাম কলেজ ছাত্র (বর্তমান উদীচী শিল্পী গোষ্ঠির কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি ও ২০১৭ সালে সংগীতে একুশে পদকপ্রাপ্ত) মাহমুদ সেলিমকে সাথে নিয়ে চারজন মিলে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পরে দাউদকান্দি ল ঘাট নেমে দাউদকান্দিতে কামরুল ইসলাম জান্রু এক কলেজ বন্ধুর বাড়িতে দুই দিন দুই রাত অবস্থান নেন। তারপর নৌকা যোগে ময়নামতি ক্যাম্পের পাশদিয়ে গোমতি নদী হয়ে সন্ধ্যায় সোনাইমুরী ক্যাম্পে ওমর ফারুকের কাছে পৌছান। ওমর ফারুকের নির্দেশনায় একটি চিঠি নিয়ে ওখান থেকে নৌপথে ভারতের আগরতলার তেজপুর প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে গিয়ে তাদের নাম লেখান। সর্বশেষ তেজপুর পাইকুড়া ক্যাম্পে আড়াই মাসের প্রশিক্ষণ শেষ করেন।
পরে ৭১’র ১১ নভেম্বর রাত ১০টায় তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের ছাত্রনেতা, বুয়েটের কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক ভিপি, বর্তমান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের নেতৃত্বে অদম্য সাহসী ৬৮জন যোদ্ধা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের গৈারবটিলা থেকে বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার বেতিয়ারা গ্রাম দিয়ে প্রবেশ করে। ঐ সময়ে হঠ্যাৎ করে পাকিস্তানী বাহিনী তাদের উপর আক্রমন চালায়। ঘটনাস্থলে শহীদ হন “জহিরুল হক ভূইয়া (দুদু মিয়া), শহীদুল্লাহ সাউদ, আব্দুল কাইউম, আওলাদ হোসেন, আব্দুল কাদের, মো, শফিউল্লাহ”। আহতাবস্থায় গ্রেফতার হন “নিজাম উদ্দিন আজাদ, সিরাজুম মনির জাহাঙ্গীর, বশিরুল ইসলাম (মাষ্টার)”। আহত হন ঢাকার নবাবগঞ্জের দুই মুক্তিযোদ্ধা, মোহা. নূর আলীর (বর্তমান ইউনিক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক) পায়ে ও হাবিবুর রহমান বাবুলের ঘারে গুলি লেগে আহত হয়। তাদের ভারতীয় সেনা বাহিনীর সহায়তায় আগরতলা পাঠিয়ে দেয়া হয়। -(মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বই “বেতিয়ারা” স্মারক সংখ্যা-২০১৭ থেকে সংগৃহিত)
হাবিবুর রহমান নভেম্বর মাসের শেষে সুস্থ হয়ে বীর বেশে দেশের বাড়ি নবাবগঞ্জে ফিরে আসেন। বাড়িতে শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধা ভাইদের নিয়ে মিল মেলা। এলাকায় প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ১৯৭৩ সালের ১৫ নভেম্বর বিকালে বাগমারা এলাকায় আততায়ীর গুলিতে নিহত হন হাবিবুর রহমান বাবুল। হাবিবুর রহমান বাবুলের মুক্তিযোদ্ধার ওসমানী সদস নং- ৫৩৪৮৩। মুক্তি বার্তা নম্বর-০১০২০২০০১৩। মুক্তি বার্তা ২০তম সংখ্যা নম্বর-৩১।
প্রয়াত এই বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান বাবুলের পরিবার সরকারি অনুদান নয় মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চায়। তারা চান হাবিবুর রহমান বাবুল বেঁচে থাকুক মুক্তিযুদ্ধাদের স্মৃতির পাতায়।

আপনি আরও পড়তে পারেন