জবির প্রথম সমাবর্তন ১১ই জানুয়ারি, অপেক্ষায় ১৯ হাজার গ্র্যাজুয়েট

বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হওয়ার ১৪ বছর পর প্রথমবারের মত সমাবর্তনের আয়োজন করতে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। সমাবর্তনের স্থান ধূপখোলা মাঠে নির্মাণ করা হচ্ছে ১ লাখ ৫০ হাজার বর্গফুটের বিশালাকৃতির প্যান্ডেল। যেখানে প্রায় ১৯ হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী সমবেত হবেন আগামি ১১ই জানুয়ারি। সমাবর্তনকে ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে পুরো ক্যাম্পাসে।

সমাবর্তন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন রুপে সাজানো হয়েছে। প্রশাসনিক ভবন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ভবনের রংয়ের কাজ করা হচ্ছে।  সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য লাগানো হয়েছে ফুলের গাছ। সমাবর্তনের দিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকছে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের সঙ্গে জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী বাপ্পা মজুমদার মঞ্চ মাতাবেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩৬টি বিভাগ ও দুটি ইন্সিটিটিউটের সমাবর্তন প্রত্যাশী গ্র্যাজুয়েটদের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে। তাদেরকে সমাবর্তন বা কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই সনদ প্রদান করে আসছিলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ নিয়ে প্রাক্তন এবং বর্তমান শিক্ষার্থীরা বরাবরই ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাবর্তন দিতে হবে বলে বিভিন্ন সময় আন্দোলনও করেছেন। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের জোর আন্দোলনে টনক নড়ে প্রশাসনের।

প্রথম সমাবর্তন আয়োজনের জন্য স্থান, সময় ও পরিকল্পনাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সুপারিশ করার লক্ষ্যে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমানকে আহ্বায়ক এবং প্রশাসন ও একাডেমিক এন্ড কাউন্সিল শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে সদস্য-সচিব করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি কমিটি গঠন করে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাবর্তনের আনুষঙ্গিক বিষয়াদি নির্ধারণ করে ভিসি বরাবর সুপারিশ প্রদানের জন্য কমিটিকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

এরপর গত ১লা মার্চ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়। এবারের সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল, পিএইচডি ও সান্ধ্যকালীন ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থীরা যারা অন্তত একটি ডিগ্রি জবি থেকে অর্জন করেছে তারাই অংশগ্রহণ করছে। এর মধ্যে স্নাতক ১১ হাজার ৮৭৭ জন, স্নাতকোত্তর ৪ হাজার ৮২৯, এমফিল ১১, পিএইচডি ছয় ও ইভেনিং প্রোগ্রামের ১৫৭৪ জন অংশ নেবেনে। এর মধ্যে ছেলে ১৩ হাজার ৭৬২ ও মেয়ে ৪ হাজার ৫৫৫ জন। যারা সুযোগ পেয়েও এ বছর সমাবর্তনে অংশগ্রহণ ও আবেদন করেনি তারা আর কখনও সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।

সমাবর্তন উপলক্ষে ১৮ হাজার ৩১৭ জন শিক্ষার্থীর সার্টিফিকেট তৈরি করতে হচ্ছে। তবে সমাবর্তনে একজন শিক্ষার্থী কেবল একটি সনদের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পেরেছেন। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একাধিক ডিগ্রি অর্জনকারীরা সমাবর্তনের পর ডিগ্রির সনদ তুলতে পারবেন। সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেয়া সমাবর্তন গাউন শিক্ষার্থীদের ফেরত দিতে হচ্ছে না।

এছাড়া সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী গ্র্যাজুয়েটরা আগামী ৭, ৮ ও ৯ই জানুয়ারি অফিস চলাকালীন (সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা) সময়ে স্ব-স্ব বিভাগ হতে কস্টিউম, ব্যাগ ও গিফট সংগ্রহ করতে পারবেন। এছাড়াও গ্র্যাজুয়েটরা সমাবর্তনের দিন (১১ই জানুয়ারি) বিকাল তিনটা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত, ১২ই জানুয়ারি ও ১৩ই জানুয়ারি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত স্ব-স্ব বিভাগ হতে মূলসনদ গ্রহণ করবেন।

উল্লেখিত তারিখের মধ্যে কেউ সনদ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হলে পরবর্তীতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর থেকে মূল সনদ গ্রহণ করতে পারবে। জবির প্রথম সমাবর্তনে বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন এমিরিটাস প্রফেসর ড. অরুণ কুমার বসাক।

সমাবর্তন ঘিরে ৪ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকেও বিএনসিসি, রোভার স্কাউটদের প্রস্তুত করা হয়েছে। ১৯ হাজার শিক্ষার্থীর পদচারণায় ১১ই জানুয়ারী পুরান ঢাকায় থাকবে বাড়তি লোকারণ্য। বাড়তি চাপ সামলাতে পুরান ঢাকা এলাকায় ভারি যান চলাচল বন্ধ করতে পারে ট্রাফিক পুলিশ। এদিকে সমাবর্তন স্থলে শিক্ষার্থীদের প্রবেশের চাপ সামলাতে সকাল ৮টা থেকেই ভেন্যুতে প্রবেশ করতে পারবে আগত গ্র্যাজুয়েটরা। বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে প্রেসিডেন্ট  সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান শুরু হবে।

সার্বিক বিষয়ে ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, সমাবর্তন শিক্ষার্থীদের একটা নৈতিক অধিকার। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব সময় সচেতন। বিভিন্ন জটিলতার কারণেই এতোদিন সমাবর্তন করা সম্ভব হয়নি। তবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সহযোগীতায় একটি সফল ও পরিপূর্ণ সমাবর্তন উপহার দিতে পারবো বলে আশা করছি।

আপনি আরও পড়তে পারেন