অনশনে ঢাবির ৯ শিক্ষার্থী অসুস্থ, উপাচার্যের সংহতি

৩০ জানুয়ারির সরস্বতী পূজার কারণে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের মতো আমরণ অনশন করছেন শিক্ষার্থীরা। এতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ৯ জন। এদিকে অনশনরতদের সঙ্গে দেখা করে সংহতি প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ডা. মো আখতারুজ্জামান। শুক্রবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে যান তিনি।

এ সময় তিনি আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে ভিসি বলেন, ‘নির্বাচনের তারিখ দিনক্ষণ ঠিক করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তবে ৩০ তারিখ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করার আগে নির্বাচন কমিশন বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিত ছিল যে, এই তারিখটি কোন মূল্যবোধ, কোন চেতনার পরিপন্থী হয় কিনা। কেননা, সরস্বতী পূজা এমন একটি ধর্মীয় উৎসব যেখানে অসাম্প্রদায়িক আবেদন রয়েছে।’

ভিসি আখতারুজ্জামান আরও বলেন, ‘আবহমান কাল থেকে এই ধর্মীয় অনূভুতি একটি অসাধারণ ভূমিকা পালন করছে। ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষেরা পবিত্র সরস্বতী পূজায় অংশগ্রহণ করে থাকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এর আবেদন আরো গভীর ভাবে অনুভূত হয়।’

অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ফলে এটি তাদের (ইসি) বিবেচনায় নেওয়া উচিত ছিল। এই যে ৩০ তারিখ নির্বাচন নির্ধারণ করা হলো এটি কোন ব্যক্তি গোষ্ঠী বা জাতি থেকে আসেনি। এটি বানানো। তাই আমি মনে করি যদি আইন-আদালতের কোন ঝামেলা না থাকে তাহলে অসাম্প্রদায়িক চেতনার দিকটি বিবেচনা করে আর কালবিলম্ব না করে নির্বাচন কমিশনের এই তারিখটি পরিবর্তন করা উচিত।’

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মিহির লাল সাহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) জি এস গোলাম রাব্বানী, এজিএস সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ।

তীব্র শীত ও না খাওয়ার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়া ৯ শিক্ষার্থী হলেন, জগন্নাথ হল সংসদের ভিপি উৎপল বিশ্বাস, জিএস কাজল দাস, থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স বিভাগের অপূর্ব চক্রবর্তী, সয়েল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের অর্ক সাহা, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সবুজ কুমার, সয়েল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের জয়ন্ত বণিক, পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের সুকেশ দেবনাথ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের রবিউল আওয়াল রবি, সয়েল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের ভবতোষ চন্দ্র রায়।

৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু পঞ্জিকা অনুযায়ী ২৯ জানুয়ারি সকাল ৯টা ১৫ থেকে ৩০ জানুয়ারি সকাল ১১টা পর্যন্ত সরস্বতী পূজার আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে। আর ৩০ জানুয়ারি পঞ্চমীর আগে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া যায় না। এই পূজাটি দেশের প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হয়ে থাকে। ৩০ জানুয়ারি নির্বাচন হলে এর কয়েক দিন আগে থেকেই ভোটের কার্যক্রম শুরু হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। যাতে পূজা পালনে বিঘ্ন ঘটবে বা পূজার আচার-আনুষ্ঠানিকতা বাধাগ্রস্ত হবে। তাই নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের দাবি শিক্ষার্থীদের।

একজন আইনজীবী এ দাবিতে হাই কোর্টে গেলেও আদালত মঙ্গলবার তা খারিজ করে দেয়। ফলে ভোটের তারিখ সেই ৩০ জানুয়ারিই থাকে। এরপর মঙ্গলবার বিকাল থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা শাহবাগে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। বুধবার নির্বাচন কমিশন ভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালনকালে শাহবাগে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন তারা। পরে কয়েক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আমরণ অনশনে বসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫০ শিক্ষার্থী। তাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, টিএসসি ভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠন এবং ডাকসুর প্রতিনিধিরা সংহতি জানিয়েছেন।

অনশনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা ‘পূজার দিন নির্বাচন মানি না, মানবো না; ৩০ তারিখ নির্বাচন মানি না; আমারা সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই; পূজা করবো, নাকি ভোট দেব; সংবিধানের ৪১ নং অনুচ্ছেদের কি মূল্য নাই?; হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই, নির্বাচনটা কি পূজার দিনেই তাই?; ধর্ম আমার অধিকার, ভোট আমার অধিকার কোন দিকে যাই ইত্যাদি লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড বহন করে।

 

 

 

 

 

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন