১৭২ বাংলাদেশি নাগরিকত্ব পেয়েছে: ভারতীয় মন্ত্রী

গত ৬ বছরে তিন প্রতিবেশী দেশ থেকে প্রায় ৪ হাজার জনকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৭২ জন বাংলাদেশি রয়েছে বলে দাবি করেছেন ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ।

রোববার (১৯ জানুয়ারি) নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিষয়ে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এ কথা বলেন বিজেপি সরকারের এ মন্ত্রী।

টাইমস অফ ইন্ডিয়া জানায়, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) প্রণয়নের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে চেন্নাইয়ে ‘প্রোগ্রাম অন সিটিজেনশিপ (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট’ শীর্ষক এক সভায় ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন এই তালিকা দেন।

অনুষ্ঠানে নির্মলা বলেন, গত ছয় বছরে পাকিস্তানের ২ হাজার ৮৩৮ জন, আফগানিস্তানের ৯১৪ জন, বাংলাদেশের ১৭২ জন শরণার্থীকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়।

তিনি জানান, নাগরিকত্ব দেওয়া তিন দেশের শরণার্থীদের মধ্যে মুসলমানরাও রয়েছে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে আসা ৫৬৬ জন মুসলমান ভারতের নাগরিকত্ব পেয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে পাকিস্তানি সঙ্গীতশিল্পী আদনান সামির নাম বলেন নির্মলা।

তিনি জানান, মানবিক কারণ দেখিয়ে ২০১৫ সালের ২৬ মে দেশটির নাগরিক হতে চেয়ে আবেদন করেন আদনান সামি। পরের বছরের শুরুতেই ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার আবেদন মঞ্জুর করে।

পূর্ব পাকিস্তান থেকে যারা ভারতে আশ্রয় নিতে এসেছিল, তাদের অনেকে এখনও শরণার্থী শিবিরে রয়ে গেছে বলেও দাবি করেন নির্মলা।

তিনি বলেন, গত ৫০-৬০ বছর ধরে তারা ক্যাম্পে থাকছে। এই সব ক্যাম্প ঘুরে দেখলে আপনি আবেগতাড়িত হবেন। শ্রীলংকার যেসব শরনার্থীরা ক্যাম্পেই জীবন যাপন করছে তাদের হালও একই রকম। তারা ন্যূনতম সুবিধাটুকুও পাচ্ছে না।

নির্মলা জানান, ১৯৬৪ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত শ্রীলংকা থেকে আসা ৪ লাখেরও বেশি তামিলকে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। মোদী সরকারের ২০১৬-১৮ সময়কালে এক হাজার ৫৯৫ জন পাকিস্তানের অভিবাসী ও ৩৯১ জন আফগানিস্তানের মুসলমান ধর্মাবলম্বীকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়।

তার দাবি, মানুষকে ভালোভাবে বেঁচে থাকার সুবিধা দিতেই নাগরিকত্ব আইনে সংশোধন আনা হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকার কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নিচ্ছে না, বরং আমরা নাগরিকত্ব দিচ্ছি।

সিএএ ও এনআরসির সঙ্গে ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার বা জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জি (এনপিআর) প্রণয়ন নিয়েও সমালোচনায় রয়েছে মোদী সরকার।

নির্মলা বলেন, ১০ বছর পর পর এনপিআর হালনাগাদ করা হয়। এর সঙ্গে এনআরসির কোনো সম্পর্ক নেই। কেউ কেউ এ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং কোনো ভিত্তি ছাড়াই মানুষকে উত্তেজিত করছে।

এদিকে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দুসহ কয়েকটি সম্প্রদায়ের মানুষকে নাগরিকত্ব দেওয়ার সুযোগ দিতে গত ডিসেম্বরে ভারতের নরেন্দ্র মোদীর সরকার নাগরিকত্ব আইনে সংশোধন আনে।

এই আইনের ব্যাখায় বলা হয়, প্রতিবেশী দেশগুলোতে ধর্মীয় সহিংসতার শিকার হয়ে কেউ ভারতে থাকার আবেদন করলে নাগরিকত্ব পাবে।

এই সংশোধনের কারণ ব্যাখ্যা করে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, হিন্দুসহ এসব ধর্মীয় গোষ্ঠীর সদস্যরা বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে বিভিন্ন সময়ে নিপীড়নের শিকার হয়েছে।

তার আগে আসামে নাগরিকপঞ্জি প্রণয়ন করা হয়, যাতে ভারতের বাংলাদেশ লাগোয়া রাজ্যটিতে নাগরিকের তালিকা থেকে বাদ পড়েন বহু মানুষ। আসামের অনেকের অভিযোগ, বাংলাদেশ থেকে গিয়ে অনেকে ওই রাজ্যে আবাস গড়েছেন।

নাগরিকত্ব আইন সংশোধন ও নাগরিকপঞ্জির বিরোধিতায় সরব ভারতের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল; তারা বলছে, এর মধ্য দিয়ে কার্যত মুসলমানদের অস্বীকৃতি জানানো হচ্ছে, যা ভারতের অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিরোধী।

আপনি আরও পড়তে পারেন