করোনাভাইরাস উইঘুর মজলুমদের আর্ত চিৎকারের ফল: মাওলানা নেজামী

ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী চীনে সংক্রামক ব্যাধি করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণকে জিনজিয়াং প্রদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণের ওপর অকথ্য নির্যাতনের ফল কিনা তা ভেবে দেখার জন্যে চীনা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নির্যাতীত মানুষের আর্ত চিৎকারে মহান আল্লাহর আরশ পর্যন্ত কেঁপে উঠে।

মাওলানা নেজামী বলেন, ইসলামী মূল্যবোধের সম্পূর্ণ পরিপন্থী ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ নাস্তিক্যবাদী চিন্তা-চেতনা সম্বলিত চীনা কর্তৃপক্ষের যৌননির্যাতনসহ গৃহিত বিভিন্ন অবদমনমূলক ব্যবস্থায় জিনজিয়াংয়ের সর্বত্র ধ্বনীত হচ্ছে উৎপীড়িত উইঘুর মুসলিম জনগণের আর্ত চিৎকার। ভেসে আসছে তাদের আহাজারী এবং সর্বত্র ধ্বনীত হচ্ছে ক্রন্দনরোল। ফলে চীনাদের প্রতি উইঘুর জনগণের অনাস্থা, অবিশ্বাস ও অসন্তোষ বেড়ে গেছে। এতে তারা হতাশ, হতবাক ও ক্ষুব্ধ। তাই দীর্ঘদিন ধরে নিগ্রহের শিকার উইঘুর মুসলিম জনগণ উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ১০ লাখ উইঘুর মুসলিম ‘রাষ্ট্রের শত্রু’ হিসেবে ডিটেনশন সেন্টারে। অনেককে পাঠানো হচ্ছে পুনঃ শিক্ষা কেন্দ্রে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ সংশোধন করতে। বন্ধাকরণসহ জুলুমবাজির মুখে প্রচুর সংখক উইঘুর বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এখন প্রবাসী। স্বদেশে ফিরলে এঁদের অনেকে তাৎক্ষণিকভাবে আটক হচ্ছেন। তাছাড়াও চীনের হ্যাকাররা উইঘুরদের অনলাইন কার্যক্রম হ্যাক করছে। উইঘুর মুসলমানদের জাতিগত পরিচিতিকে মুছে ফেলার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ‘ইসলামের চীনাকরণ’ সম্পন্ন করতে গিয়ে বিশ্বে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অন্যতম বধ্যভূমী জিনজিয়াংয়ে মসজিদ থেকে রেস্টুরেন্ট সর্বত্র নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। ‘হানদের সঙ্গে উইঘুরদের তথাকথিত পুনর্মিলনের লক্ষ্যে চীন উইঘুরদের বাড়ি বাড়ি প্রশাসনিক পরিদর্শন ব্যবস্থা কায়েম করেছে বলে জানা যায়। যেসব কারণে সর্বশক্তিমান আল্লাহর গজব নেমে আসে জিনজিয়াং প্রদেশসহ চীনে সেই পরিস্থিতি বিদ্যমান। তিনি আরও বলেন, উইঘুর শিশুদের ধরে নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালিত এতিমখানায় পাঠানোর মতো গভীর উদ্বেগজনক খবর পাওয়া যাচ্ছে। চীনের সবচেয়ে বড় বিভাগ জিনজিয়াংয়ে (১২টি বাংলাদেশের সমান) মূল বাসিন্দা উইঘুর মুসলমানরা ভাষায় তুর্কি। জিনজিয়াংয়ে ২ কোটি ২০ লাখের মতো জনসংখ্যা। তার মধ্যে উইঘুররা ৫৮%। চীনের সর্ববৃহৎ জিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের সংখ্যালঘিষ্ঠ জাতিতে পরিণত করার হীন চক্রান্তের অংশ হিসেবে হান বংশোদ্ভুত লোকদের সেখানে পুনর্বাসিত করা হচ্ছে। ১৯৪৯ সাল থেকে চীনের কঠোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জিনজিয়াং। তখন থেকে জিনজিয়াংয়ে হানদের পুনর্বাসিত করা হচ্ছে। ১৯৪৯ সালের আগে জিনজিয়াংয়ে চীনের ‘হান’রা ছিল ৬ শতাংশ। বর্তমানে প্রায় ৪২ শতাংশ। ‘সিল্ক রুট’-এর একেবারে কেন্দ্রে অবস্থিত মধ্য এশিয়ায় চীনের প্রবেশদ্বার ১৯৩৩ ও ১৯৪৪ সালে দুই দফায় স্বাধীন ছিল জিনজিয়াং। চীনের কয়লার ৪০ ভাগ, তরল জ্বালানির ২২ ভাগ এবং গ্যাসের ২৮ ভাগ রয়েছে প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ জিনজিয়াংয়ের মাটির নিচে।

তিনি করেনাভাইরাস সংক্রামক ব্যাধির কবল থেকে রক্ষার জন্যে মহান আদর্শের অধিপতি, কঠোর শাস্তিদাতা, ক্ষমাশীল, প্রেমময় এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালার অনন্ত অনুগ্রহ কামনা করে দোয়া করার জন্যে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। বিদ্যমান জটিল করোনাভাইরাস উৎপীড়িত উইঘুর মুসলিম জনগণের আর্ত চিৎকারের ফল এবং উইঘুর মুসলিমদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের অবধারিত কারণ, তা উপলব্ধি করতে যেন চীনা মহল স্বচেস্ট হন, সে জন্যে দোয়া করতেও আহ্বান জানান তিনি।

মুসলমানদের সাথে প্রতিহিংসামূলক আচরণ পরিহার করার কাজে চীনারা যেন ব্রতী হন। কারণ চীনাদের হিংসা-বিদ্বেষ উইঘুর মুসলমানদের জন্যে মারাত্মক হুমকি স্বরুপ। একগুয়েমী, মুক, অন্ধতা ও বধিরতা পরিহার করে চীনারা যেন মুসলিম বিরোধী অন্যায় আচরণ থেকে বিরত হওয়ার ক্ষেত্রে মনোনিবেশ করেন, এজন্যে চীন কর্তৃপক্ষকে সুবুদ্ধি এনায়েত করতে কামনা করে পরম দয়ালু আল্লাহর কাছে দোয়া করার জন্যে সকলের প্রতি আহ্বান জানান মাওলানা নেজামী।

আপনি আরও পড়তে পারেন