ইসলাম গ্রহণ করলেন বর্ণহিন্দুদের নিপীড়নে অতিষ্ঠ ৪৩০ দলিত

বর্ণবাদী হিন্দুদের হাতে নিপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে মুসলমান হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন ভারতের তামিলনাডুর দলিত সম্প্রদায়ের ৩ হাজার মানুষ। তাদের মধ্যে সম্প্রতি আইনগতভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রগণ করলেন এক শহরের ৪৩০ জন দলিত। আরও মুসলমান হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন হাজার হাজার দলিত সম্প্রদায়ের লোক।

ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বর্ণবৈষম্য এবং অবিচার। তারা অন্যান্য হিন্দুদের মন্দিরে ঢুকে ইবাদত করতে পারে না। বর্ণ পরিচয়ের কারণে তারা দৈনিক হেনাস্থার শিকার হচ্ছেন। তাদেরকে পাবলিক বাসে উঠতে দেয়া হয় না। একজন বলেন, দলিত সম্প্রদায়ের লোকজনকে মানুষই মনে করেন না বর্ণবাদী হিন্দুরা।

দলিত সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটোর জেলার মেট্টুপাল্যাম এলাকায় দলিত সম্প্রদায়ের কেউ যাতে তার জমিতে না যেতে পারে, সেজন্য ‘বৈষম্যের’ প্রাচীর নির্মাণ করেন স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। এ যেন দক্ষিণ আফ্রিকার এপার্থাইড ওয়াল। কিন্তু ডিসেম্বরের শুরুতে অতিবৃষ্টিতে প্রাচীর ধসে পড়ে দলিত সম্প্রদায়ের ১১ নারী ও ৩ শিশুসহ ১৭ জন নিহত হন।

এ ঘটনায় ওই ব্যক্তির বিচার চেয়ে থানায় অভিযোগ করেন নিহতদের পরিবারের সদস্যরা।

ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪এ ধারায় আনা সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ওই ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও প্রভাব খাটিয়ে জামিনে মুক্তি পান সেই ব্যক্তি।

এতে হতাশা আর ক্ষোভে ফেটে পড়ে সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে মিছিল করেন দলিত সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের নিয়ে সংগঠন তামিল পুলিগাল।

কিন্তু সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর অভিযোগ দেখিয়ে সেই মিছিল থেকে সংগঠনটির সভাপতি নাগাই তিরুভল্লুয়ানকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করে পুলিশ।

শিবসুমব্রমানিয়মের বিরুদ্ধে তফসিলি জাতি ও উপজাতির নির্যাতন প্রতিরোধ আইনের ধারা অনুযায়ী মামলা রুজু করার কথা বললেও পুলিশ তা এড়িয়ে যায়।

পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা ও শুধুমাত্র দলিত হওয়ার কারণে বৈষম্য মূলক আচরণের জন্য ওই দলিত সম্প্রদায়ের মানুষেরা ঘোষণা করেছে তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে চলেছেন।

দলিতদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইলাভেনিল বলেন, ‘যে ব্যক্তি এই মর্মান্তিক ঘটনার জন্য দায়ী তাকে ২০ দিনের মধ্যে জামিনে মুক্তি দিয়ে দেওয়া হলো। কিন্তু সংগঠনের সভাপতি নাগাই তিরুভল্লুয়ান গণতান্ত্রিক উপায়ে ন্যায় বিচার চাইতে গেলে তাকে আটক করা হয়।’

বর্ণহিন্দুদের দ্বারা নিপীড়নে অতিষ্ঠ স্থানীয় দলিতরা।

ইলাভেনিল বলেন, ‘নিপীড়ন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আমাদেরকে কূপ থেকে পানি খেতে দেয় না। মন্দিরের ধারেকাছে যেতে দেয় না। রাস্তায় ধরে মারধর করে আবার মামলাও দেয়। আমাদেরকে বলা হয়েছে রাস্তায় যেন মোবাইল ফোনে কথা না বলি। কী ধরনের অমানবিক আচরণ এগুলো?’

শরৎ কুমার যিনি সম্প্রতি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন বলেন, প্রাচীর ধসে যখন আমাদের ১৭জন মারা গেলেন। তখন স্থানীয় মুসলমানেরা তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে। ঘরে জায়গা দেয়। দলিতদের প্রশ্ন কোন হিন্দু তো আমাদের জন্য এগিয়ে এল না। তখন কোথায় ছিলেন হিন্দুরা। আমাদের পাশে এসে দাড়ায়নি কোন হিন্দু।

তিনি বলেন, হিন্দুরা আমাদেরকে মন্দিরে ঢুকতে দেয় না। অথচ আমি মুসলমান হবার পর ৫ টা মসজিদে গিয়েছি, কেউ বাধা দেয় নি। বর্ণ পরিচয়ের কারণে আর আমরা বৈষম্যের শিকার হব না। মুসলিম আত্মপরিচয় নিয়ে আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচতে পারব। এটাই তাদের প্রত্যাশা।

এ বিষয়ে তামিলনাড়ুর দলিত সম্প্রদায়ের অধিকার নিয়ে কাজ করা তালিম পুলিগাল কাচির (টিপিকে) সাধারণ সম্পাদক এম ইলাভেনিল দ্য নিউজ মিনিটকে বলেন, ‘আমরা ভারতে কয়েক দশক ধরে বৈষম্যের শিকার। যে ধর্ম আমাদের সুরক্ষা দিতে পারছে না সেখানে থাকার কোনো অযুহাত দেখছি না। প্রাচীর ধসের ঘটনায় এতোগুলো প্রাণ গেল আমাদের। এরপরও বিচার পেলাম না। নিজেদের শুধু শুধু বিসর্জন দিয়ে যাওয়ার মানে হয় না। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি , আমরা এবার ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলামে দিক্ষিত হব।’

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, ‘ অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জামিনে মুক্তি দিল প্রশাসন। কিন্তু আমাদের সংগঠনের সভাপতিকে গণতান্ত্রিক উপায়ে ন্যায়বিচার চাইতে গেলে তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। এটা কেমন বিচার?’

অতীতেও বিভিন্ন সময় তারা কোনো অভিযোগ করে সুষ্ঠু বিচার পাননি বলে খেদ প্রকাশ করেন। এই ঘটনার মাধ্যমে তামিলনাড়ুর সামাজিক জাতিগত বৈষম্যের চিত্রটি আরও প্রকট হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। মাঝে মাঝেই গণহারে হিন্দু ধর্ম ছেড়ে গণহারে কনভার্ট হয়ে যাচ্ছেন। – সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে

আপনি আরও পড়তে পারেন