অনিয়মিত ঘুমে বাড়ছে ৬ রোগের ঝুঁকি

জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ঘুম। ঘুম হচ্ছে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর দৈনন্দিন কাজের মাঝে বিশ্রাম নেওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যখন সচেতন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বন্ধ থাকে। ঘুমন্ত অবস্থায় উত্তেজনায় সাড়া দেবার ক্ষমতা হ্রাস পায় প্রাণীর মধ্যে ঘুমানোর প্রক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। পর্যাপ্ত ঘুম মানুষের জীবনে আনে প্রশান্তি, মন রাখে প্রফুল্ল, কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি করে। তবে বর্তমান জীবনযাত্রায় ঘুম কমে গিয়েছে অনেকেরই। অনেক রাত পর্যন্ত চলে কাজ। ফলে ঘুমের সময় ক্রমশ কমে আসছে। এর ফলেই বাড়ছে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি।

১. হার্টের সমস্যা বৃদ্ধি করে:

আমরা যখন ঘুমাই তখন আমাদের হৃদপিণ্ড এবং রক্তনালী কিছুটা হলেও বিশ্রাম পায়। কিন্তু ঘুম না হলে বা কম হলে প্রতিনিয়ত কার্ডিওভ্যস্কুলার সমস্যা বাড়তে থাকে। এর ফলে হার্টের সমস্যা বাড়তে থাকে।

২. উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বৃদ্ধি করে:

দিনে পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বা কম হলে বাড়তে পারে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা। চিকিত্সকদের মতে আমরা না ঘুমালে আমাদের শরীরের ‘লিভিং অরগানিজম’ গুলো ঠিক মতো কাজ করতে পারে না। নষ্ট হতে পারে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য। বাড়তে পারে উচ্চ রক্তচাপ, হাইপার টেনশনের মতো সমস্যা।

৩. শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে:

ঘুম মূলত আমাদের শরীরের ক্ষয়-ক্ষতি পূরণ ও শক্তি সঞ্চয়ের একটি পন্থা। যখন আমরা ঘুমোই, তখন আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য দায়ী ‘লিভিং অরগানিজম’ (Living organisms) কাজ করতে থাকে। কিন্তু আমরা না ঘুমালে এই ‘লিভিং অরগানিজম’গুলো কাজ করতে পারে না। ফলে ক্রমশ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে।

৪. ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়:

দীর্ঘদিন রাতে অনিয়মিত ঘুমানো বা কম ঘুমানোর ফলে শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন ব্যহত হয়। যার ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে।

৫. মানসিকতা নষ্ট হয়:

মস্তিষ্কে ওরেক্সিন নামের একটি নিউরোট্রান্সমিটার আছে যা মস্তিষ্ককে সচল রাখতে সহায়তা করে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ওরেক্সিন উৎপাদনের গতি মন্থর হয়ে যায়। মস্তিষ্কের কর্ম ক্ষমতা কমতে থাকে। মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম না পেলে অতিরিক্ত বিষণ্ণতা, হ্যালুসিনেশনের, স্মৃতিভ্রংশের মতো একাধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। দিনে দিনে নিজের বিচার বিশ্লেষণ করার ক্ষমতাও লোপ পেতে পারে।

৬. হজমের সমস্যা বৃদ্ধি করে:

প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বাড়তে পারে হজমের সমস্যাও। আমরা না ঘুমালে আমাদের শরীরের পাচন ক্রিয়ায় সাহায্যকারী অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে খাবার হজমে সহায়ক পাচক রসগুলো উপযুক্ত মাত্রায় নিঃসরণে বাধা পায়। তাই হজমের নানা সমস্যা শুরু হয়।

তাই ঘুম আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। আমাদের দৈহিক প্রায় সকল কার্যকলাপই ঘুমের উপরে নির্ভরশীল। কোনও রকম অবহেলা না করে নিয়মিত প্রতিদিন অন্তত ৬-৭ ঘণ্টা ঘুমানো জরুরি। যদি নিয়মিত স্বাভাবিক ভাবে ঘুম না আসে, তাহলে ইচ্ছেমতো ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

 

 

 

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন