এপ্রিলেই যুব মহিলা লীগের সম্মেলন, দুই দশকের রাজত্বে বদলের আভাস

দীর্ঘ দুই দশক ক্ষমতার রাজত্ব করেছেন যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আকতার ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা অপু উকিল। কিন্তু সমপ্রতি তাদের আনুসারী ও যুব মহিলা লীগের সদ্য বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নুর পাপিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাদের দুই দশকের ক্ষমতার রদবদলের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

মূলত সংগঠনের দায়িত্বশীল নেত্রীদের নানা অপকর্মের অভিযোগের তীর এখন তাদের দিকে। এ জন্য আগামী এপ্রিলে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হতে পারে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বিষয়টি আমার সংবাদকে নিশ্চিত করেছে।

গত শনিবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা নুর পাপিয়া ও তার স্বামীসহ আরো চারজনকে আটক করে র্যাব। যুব মহিলা লীগের নেত্রী জমজমাট নারী ব্যবসাসহ ভয়ঙ্কর সব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।

সমপ্রতি ওই নেত্রীর এমন কর্মকাণ্ডের পর সব অভিযোগের তীর এখন যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আকতার ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা অপু উকিলের দিকে। মূলত তাদের অনুসারী হিসেবে বেশি পরিচিত শামীম নুর পাপিয়া।

এমন অবস্থায় গত বুধবার দুপুরে গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন যুব মহিলা লীগ সভাপতি-সম্পাদক।

এসময় প্রধানমন্ত্রী তাদের সংগঠনে শুদ্ধি অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘আমার কাছে অনেক রিপোর্ট আসছে, অনেকের নাম আছে। আমি কাউকে ছাড়বো না। রাত-দিন পরিশ্রম করে দেশের জন্য কাজ করছি। আর সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করবে? আমি কাউকে ছাড়বো না।’

এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এ ব্যাপারে আলোচনা হয়। সভায় যুব মহিলা লীগের বর্তমান কমিটি ভেঙে দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব নতুন কমিটি গঠন করার জন্য দলের সিনিয়র নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দেন। এমনকি, যুব মহিলা লীগ বিলুপ্ত করার পরামর্শও দেয়া হয় সভায়।

সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই যুব মহিলা লীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সদ্য বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নুর পাপিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর একের পর এক অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে এই সংগঠনের দায়িত্বশীল নেত্রীদের বিরুদ্ধে। ফলে যুব মহিলা লীগের বর্তমান কমিটির যত দ্রুত সম্ভব সম্মেলন করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

দলটির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, আগামী এপ্রিল সম্মেলনের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেত্রীদের সিগনাল দেয়া হয়েছে।

তথ্য মতে, সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১১ মার্চ রাজধানীর খামারবাড়ীর কৃষবিদি ইনস্টিটিউিশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের মাধ্যমে টানা সভাপতি-সম্পাদকের দায়িত্ব পান নাজমা আকতার ও অধ্যাপিকা অপু উকিল।

এর আগে ২০০২ সালে নাজমা-অপু যুগলের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে যুব মহিলা লীগ। ২০১৪ সালের ৫ মার্চ দলটির প্রথম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।

কাউন্সিলে নাজমাকে সভাপতি ও অপুকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। দলটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চে বর্তমান কমিটির মেয়ার শেষ হওয়ার কথা।

এর আগে ক্যাসিনো, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডাবাজি ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বছরের ৬, ৯, ১৬ , ২৩ ও ২৯ নভেম্বর যথাক্রমে কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ ও মৎস্যজীবী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনের মধ্যদিয়ে বিতর্কিত নেতাদের সংগঠন থেকে ছেটে ফেলেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সম্মেলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন কি-না, জানতে চাইলে যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আকতার আমার সংবাদকে বলেন, ‘আগামী মাসে আমাদের কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। সম্মেলন করার জন্য অনেক আগেই আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের জানিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সম্মেলন করার জন্য কোনো নির্দেশনা পাইনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করেছি। তিনি সংগঠন নিয়ে আমাদের অনেক দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু সম্মেলন নিয়ে কিছু বলেননি।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক আমার সংবাদকে বলেন, ‘দলের পদ-পদবি ব্যবহার করে যদি কেউ অপকর্মের সাথে যুক্ত হন, তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না।’

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ‘সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ আজ আলোকিত। তার মধ্যে কিছু কষ্ট আছে, কষ্টগুলো হলো— দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার পর কেন এই দেশে সম্রাট ও পাপিয়ার মতো দুর্নীতিবাজদের জন্ম হবে। তাদের কারণে আজ আমাদের সব অর্জন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এরশাদ ও খালেদার বিরুদ্ধে লড়াই করে রাস্তায় পুলিশের মার খেয়েছি, জেল খেটেছি। তখন কোথায় ছিলো এই দুর্নীতিবাজরা? কখনো রাসেল স্কয়ারে দেখিনি এদের।

খুঁজে বের করতে হবে এদের কে সৃষ্টি করেছে? আজ সবাই আওয়ামী লীগ হয়ে গেছে, আন্দোলনের সময় হাতেগোনা লোক দেখতাম। এদের জন্য লজ্জা আমার, আমাদের সবার।’

আপনি আরও পড়তে পারেন