পাল্টাপাল্টি অভিযোগ প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী-আউয়ালের

পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল বলেছেন, আইনগতভাবে জামিন পাওয়ার অধিকার থাকলেও বর্তমান সংসদ সদস্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের হস্তক্ষেপে বিচারক প্রথমে আমার ও আমার স্ত্রীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। একই সাথে রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে দুর্নীতিরও অভিযোগ এনেছেন তিনি।

বুধবার (০৪ মার্চ) দুপুরে পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন।

আউয়াল বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন আমাদের বিরুদ্ধে যে তিনটি মামলা করেছে, তা মিথ্যা। এ মামলায় হাইকোর্টে আট সপ্তাহের জামিন নেই। এরপর শ ম রেজাউল করিম দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল দায়ের করে এবং শুনানিতে জামিন নাকচ হয়ে যায়।’

দুর্নীতির মামলায় জামিন বাতিলের চার ঘণ্টা পর জামিন; একই সঙ্গে আউয়াল দম্পতিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া বিচারক মো. আবদুল মান্নানকে তিন ঘণ্টার মাথায় বদলির ঘটনার রেশ না কাটতেই এ সংবাদ সম্মেলন করলেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম এ আউয়াল বলেন, মঙ্গলবার (০৩ মার্চ) দুদকের মামলায় আমি এবং আমার স্ত্রীর জামিন নামঞ্জুর করতে পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবদুল মান্নানকে প্রভাবিত করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। বিষয়টি নিয়ে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রীর নাজিরপুরের বাসায় গোপন বৈঠক করেন বিচারক আবদুল মান্নান। পরদিন ১ মার্চ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এস এম বেলায়েত হোসেন ও আমার আইনজীবীরা জেলা ও দায়রা জজ আবদুল মান্নানের সঙ্গে জামিনের বিষয়ে আলাপ করতে গেলে প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর নিষেধাজ্ঞার কথা স্বীকার করেন।

সাবেক এমপি আউয়াল বলেন, প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম প্রভাব খাটিয়ে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করে বিএনপি-জামায়াত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিভিন্ন স্থানে মন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করেন। এছাড়া মন্ত্রী তার ভাইদের ঠিকাদারি কাজে যুক্ত করে কয়েকশ কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন। এমনকি আলোচিত ক্যাসিনো সম্রাট জি কে শামীমের কাছ থেকে তিনটি কালো রঙের দামি গাড়ি উপঢৌকন নিয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দিয়েছেন প্রাণিসম্পদমন্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে আউয়াল বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের অংশগ্রহণের কথা মিথ্যা। শ ম রেজাউল করিম ১৯৬১ সালে জন্মগ্রহণ করেছেন। সে হিসাব অনুযায়ী ১৯৭১ সালে তার বয়স ৯ বছর। এ বয়সে তিনি কীভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন এবং কোথায় যুদ্ধ করেছেন তা আমরা জানতে চাই।

তবে বর্তমানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এ কে এম এ আউয়ালের সব অভিযোগ মিথ্যা। নিজের দোষ ঢাকার জন্য এসব কথা বলছেন আউয়াল। তার এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।

শ ম রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী হওয়ার পরে কোনও নিয়োগবাণিজ্য, কমিশনবাণিজ্য করি নাই, করবোও না ইনশাআল্লাহ। আমি আইন পেশায় নতুন নই। এ পেশা থেকে স্বচ্ছতার সঙ্গে আয় করেছি। সে আয় থেকে জমি কিনেছি। গাড়ি নেওয়ার যে কথা তিনি (এ কে এম এ আউয়াল) বলেছেন তাও মিথ্যা অভিযোগ। তিনি আরও যেসব অভিযোগ করেছেন তাও ভিত্তিহীন।’

প্রসঙ্গত, দুর্নীতির মামলায় এ কে এম এ আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীন মঙ্গলবার আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। তবে জেলা জজ আদালতের বিচারক মো. আ. মান্নান আবেদন খারিজ করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর আসামিরা মেডিক্যাল ওয়ার্ডে যাওয়ার আবেদন করেন। বিচারক তাদের চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র জমা দেওয়ার আদেশ দেন। এরমধ্যেই বিচারক পরিবর্তন হলে আসামিরা ফের জামিন পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। একেএমএ আউয়াল ২০০৮ ও ২০১৪ সালে পরপর দুইবার পিরোজপুর-১ (সদর-নাজিরপুর-নেছারাবাদ) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন। এদিকে সকালে সাবেক সংসদ সদস্য এবং পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীনের জামিন আবেদন বাতিল হলে আদালত পাড়াসহ পুরো শহরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। এ সময় উত্তেজিত নেতাকর্মীদের উপর পুলিশ আদালত পাড়াসহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় লাঠি চার্জ করে। উত্তেজনা ছড়িয়ে পরলে শহরের সকল দোকান ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। নেতা কর্মীরা সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে অগ্নিসংযোগ করায় বন্ধ হয়ে যায় যানচলাচল। এছাড়া জেলা জজের অপসারণ দাবী করে অনিষ্টকালের জন্য আদালত বর্জন করেছে পিরোজপুরের আইনজীবীগণ। এ নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে পুলিশের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।

এরপরই জেলা জজ মো. আবদুল মান্নানকে আইন মন্ত্রণালয় স্ট্যান্ড রিলিজ করে। এরপর ভারপ্রাপ্ত জেলা জজ হিসেবে দায়িত্ব পান পিরোজপুরের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক নাহিদ নাসরিন। তার আদালতে আউয়াল দম্পতি পূর্বে করা জামিন আবেদন পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তাদের দুই মাসের জামিন দেন।

এরই মধ্যে আজ পিরোজপুর সদরের সাবেক এমপি আউয়াল ও তার স্ত্রীর জামিন খারিজের পর পিরোজপুর জেলা জজ আবদুল মান্নানকে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

আপনি আরও পড়তে পারেন