মুজিববর্ষ: প্রধানমন্ত্রীর চিঠি পাচ্ছে যশোরের আড়াই লাখ শিশু

মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিঠি পাচ্ছে যশোরের দুই লাখ ৬০ হাজার শিশু। প্রত্যেক শিশুকে আলাদা আলাদা চিঠি দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। যা শিশুদের অনুপ্রাণিত করবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছোট শিশুদের উজ্জীবিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদেরকে চিঠি দিয়ে একটি রেকর্ড সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছেন। যা বাংলাদেশ স্বাধীনের পর কোনো রাষ্ট্রপ্রধান করেননি। 

যশোরের আটটি উপজেলার ১২৯০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত দুই লাখ ৬০ হাজার ৮৮২ শিশু শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেকেই প্রধানমন্ত্রীর এ চিঠি পাবে। অভয়নগর উপজেলার ১১৭টি বিদ্যালয়ের ২২ হাজার ৯৯৬, কেশবপুরের ১৫৮টি বিদ্যালয়ের ২৬ হাজার ৯০৭, চৌগাছার ১৩৯টি বিদ্যালয়ের ২৬ হাজার ৭০৭, ঝিকরগাছার ১৩১টি বিদ্যালয়ের ৩০ হাজার ২০৮, বাঘারপাড়ার ১০২ বিদ্যালয়ের ২০ হাজার ৩৪২, মণিরামপুরের ২৬৭টি বিদ্যালয়ের ৪৩ হাজার ১৫৩, শার্শা উপজেলার ১২৫টি বিদ্যালয়ের ৩১ হাজার ৯৩২ ও সদর উপজেলার ২৫১টি বিদ্যালয়ের ৫৮ হাজার ৬৩৭ শিশু শিক্ষার্থী প্রধানমন্ত্রীর ব্যতিক্রমী এ চিঠি পাচ্ছে।

১৭ মার্চ মুজিববর্ষের প্রথম দিন সকাল ১১টায় স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমাবেশের মাধ্যমে শিশুদের হাতে ঐতিহাসিক এ চিঠি হস্তান্তর করা হবে। যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে রোববার (১৫ মার্চ) কঠোর গোপনীয়তায় প্রধানমন্ত্রীর এই চিঠির প্যাকেটগুলো ৮ উপজেলায় পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি সর্বোচ্চ গোপনীয়তায় করা হচ্ছে। যাতে করে ১৭ মার্চের আগে কেউ টের না পায়। গোপনীয়তা রক্ষার কারণ চিঠি বিতরণের পর শিশুরা যাতে আকর্ষিত হয়।

মুজিববর্ষ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের লোগো সংবলিত ওই চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী শিশুদের ছোট্ট সোনামণি বলে সম্বোধন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তার চিঠিতে লিখেছেন, ছোট্ট সোনামণি, আমার শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা নিও। তোমার বাবা-মাকে আমার সালাম ও ভাইবোনদের স্নেহ পৌঁছে দিও। পাড়া-প্রতিবেশীদের প্রতি শুভেচ্ছা রইলো। আজ ১৭ মার্চ। ১৯২০ সালের এদিনে বাংলার মাটিতে জন্ম নিয়েছিলেন এক মহাপুরুষ। তিনি আমার পিতা, শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশ নামের এই দেশটি তিনি উপহার দিয়েছেন। দিয়েছেন বাঙালিকে একটি জাতি হিসেবে আত্মপরিচয়ের সুযোগ। তাইতো তিনি আমাদের জাতির পিতা। দুঃখী মানুষদের ক্ষুধা-দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে নিজের জীবনের সব সুখ-আরাম বিসর্জন দিয়ে তিনি সংগ্রাম করেছেন। বারবার কারাবরণ করেছেন। মানুষের দুঃখ-কষ্ট তাঁকে ব্যথিত করতো। অধিকারহারা দুঃখী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যেকোন ত্যাগ স্বীকারে তিনি দ্বিধা করেননি। এই বঙ্গভূমির বঙ্গ-সন্তানদের একান্ত আপনজন হয়ে উঠেছিলেন-তাই তিনি ‘বঙ্গবন্ধু’।

‘২০২০ সালে আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। আজ শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অনেক দেশ এই জন্মশতবার্ষিকী অর্থাৎ ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন করছে। সকলকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। প্রিয় বন্ধু, ঘাতকের নির্মম বুলেট কেড়ে নিয়েছে জাতির পিতাকে। তাঁর নাম বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু ওরা পারেনি। ঘাতকেরা বুঝতে পারেনি বঙ্গবন্ধুর রক্ত ৩২ নম্বর বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে-বেয়ে ছড়িয়ে গেছে সারা বাংলাদেশে। জন্ম দিয়েছে কোটি কোটি মুজিবের। তাই আজ জেগে উঠেছে বাংলাদেশের মানুষ সত্যের সন্ধানে। ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। সত্যকে মিথ্যা দিয়ে দাবিয়ে রাখা যায় না। আজ শুধু বাংলাদেশ নয়, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশকে বিশ্ব চিনে নিয়েছে তাঁরই ত্যাগের মহিমায়।’

‘সোনামণি, জাতির পিতার কাছে আমাদের অঙ্গীকার, তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়বোই। আর সেদিন বেশি দূরে নয়। পিতা ঘুমিয়ে আছেন টুঙ্গিপাড়ার সবুজ ছায়াঘেরা মাটিতে পিতামাতার কোলের কাছে। তিনি শান্তিতে ঘুমান। তাঁর বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।
আমরা জেগে রইবো তাঁর আদর্শ বুকে নিয়ে। জেগে থাকবে মানুষ-প্রজন্মের পর প্রজন্ম-তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে। জাতির পিতার দেওয়া পতাকা সমুন্নত থাকবে চিরদিন।
তোমরা মন দিয়ে পড়ালেখা করবে, মানুষের মত মানুষ হয়ে দেশ ও মানুষের সেবা করবে।
জয় বাংলার জয়,জয় মুজিবের জয়, জয় বঙ্গবন্ধুর জয়। ইতি তোমারই শেখ হাসিনা।’

শিশুদের জন্যে পাঠানো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই চিঠি সম্পর্কে যশোর জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমজাদ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই চিঠির মাধ্যমে শিশুরা মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে পারবে। একইসাথে রাষ্ট্রপ্রধানের কাছ থেকে চিঠি পেয়ে শিশুরা অনুপ্রাণিত হবে। তবে, আমজাদ হোসেন প্রধানমন্ত্রীর চিঠি ১৭ মার্চের আগে দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেখ অহিদুল আলম মোবাইল ফোনে বলেন, শিশুদের উদ্দেশ্যে লেখা প্রধানমন্ত্রীর চিঠি সব উপজেলায় পাঠানো হয়েছে। ১৭ মার্চ বেলা ১১টায় সমাবেশের মাধ্যমে শিশুদের হাতে এই চিঠি দেয়া হবে। তারা সেখানে ওই চিঠি পাঠ করবে।

https://www.youtube.com/watch?v=RTYB6rIVt3g

আপনি আরও পড়তে পারেন