করোনা সম্পর্কে এখনও যা অজানা

করোনাভাইরাস এমন একটি ভাইরাস যা এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে ছড়ায়নি। ভাইরাসটির আরেক নাম ২০১৯-এনসিওভি। করোনা ভাইরাসের অনেক রকম প্রজাতি আছে, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র সাতটি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে।

বিবিসি সূত্রে জানা যায়, বিজ্ঞানীরা বলছেন ভাইরাসটি হয়তো মানুষের দেহকোষের ভেতরে ইতিমধ্যেই মিউটেড করছে। অর্থাৎ গঠন পরিবর্তন করে নতুন রূপ নিচ্ছে এবং সংখ্যা বৃদ্ধি করছে। যার ফলে এটি আরো বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

কোথা থেকে এলো ভাইরাস?
বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার ধারণা, ভাইরাসটি উৎস কোনো প্রাণী। মানুষের আক্রান্ত হবার ঘটনাটি ঘটছে চীনের উহান শহরে সামুদ্রিক মাছ পাইকারি দরে বিক্রি হয় এমন একটি বাজারে। করোনাভাইরাস ভাইরাস পরিবারে আছে, তবে এ ধরনের ছয়টি ভাইরাস আগে পরিচিতি থাকলেও এখন মানুষ যেটিতে সংক্রমিত হচ্ছে সেটি নতুন। বেশিরভাগ করোনাভাইরাসই বিপজ্জনক নয়, কিন্তু আগে থেকে অপরিচিত এ নতুন ভাইরাসটি ভাইরাল নিউমোনিয়াকে মহামারীর দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কী কী লক্ষণ দেখা যায়?
জ্বর, কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাই মূলত এর প্রধান লক্ষণ। এই ভাইরাস মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে এটি একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়। সাধারণ ফ্লু বা ঠাণ্ডা লাগার মতো করেই এই ভাইরাস ছড়ায় হাঁচি, কাশির মাধ্যমে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটি শরীরে ঢোকার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় পাঁচ দিন লাগে। প্রথম লক্ষণ হচ্ছে জ্বর তারপর শুকনো কাশি। এক সপ্তাহের মধ্যে দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট এবং তখন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।

এই ভাইরাস কত বিপজ্জনক?
এই ভাইরাস কত বিপজ্জনক তা একটি প্রশ্ন! করোনায় এখন পর্যন্ত আক্রান্তদের দুই শতাংশ মারা গেছে। হয়তো আরো মৃত্যু হতে পারে। তাছাড়াও এমন মৃত্যুও হয়ে থাকতে পারে যা শনাক্ত করা যায়নি। তাই এই ভাইরাস ঠিক কতটা ভয়ংকর তা এখনো স্পষ্ট না।

কত দ্রুত ছড়াতে পারে এই ভাইরাস?
এই ভাইরাস খুব দ্রুত ছড়াতে পারে। বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন যে, এই ভাইরাস একজনের থেকে অন্যজনের দেহে ছড়াতে পারে। এই ভাইরাসটি এখন চীনের অন্যান্য শহর এবং চীনের বাইরে থাইল্যান্ড, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া সহ ১৬৫টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। কর্তৃপক্ষের উদ্বিগ্নের কারণ হচ্ছে, চন্দ্র নববর্ষ উপলক্ষে যখন লাখ লাখ মানুষ বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ করে, সেই সময় বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকবে।

এই ভাইরাস যেন আর নতুন করে না ছড়ায় সেজন্য অনেক বিমান বন্দরেই যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে।

বাংলাদেশে সতর্কতা
আইইডিসিআর জানিয়েছেন বাংলাদেশ করোনার ঝুঁকিতে আছে। ইতমধ্যে বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্তও হয়েছে ১১জন। তাই স্বাস্থ্যকর্মীদেরও বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। বিমানবন্দরের হেল্প ডেস্কে এসব কর্মীদের পাঠানো হয়েছে। সব যাত্রীদেরি স্ক্যানিং করা হচ্ছে। সেবাদানে হটলাইন খোলা হয়েছে। কোনো সমস্যা বা লক্ষণ দেখা দিলে হটলাইনে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

এর কি কোনো চিকিৎসা আছে?
যেহেতু এই ভাইরাসটি নতুন, তাই এর কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এখনো নেই। আর এমন কোনো চিকিৎসাও নেই যা এই রোগ ঠেকাতে পারে। তবে এর প্রতিকারে ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গবেষকরা।

এর হাত থেকে রক্ষার উপায় কী?
এর হাত থেকে রক্ষার উপায় হলো, যারা ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন কিংবা এই ভাইরাস বহন করছেন তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। তাছাড়া ডাক্তাররা পরামর্শ দিয়েছেন- বার বার হাত ধোয়া, হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ না করা, ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক পরা।

আপনি আরও পড়তে পারেন