করোনা: ‘যুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ’ পরিস্থিতি জেরুজালেমে

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনা ভাইরাসে প্রতিনিয়তই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার। আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি। এরই মধ্যে বিপর্যস্ত হয়েছে বিভিন্ন দেশ। তবে ইতোমধ্যে চীনের আক্রান্ত ও মৃতের হার কমিয়ে এলেও বেড়েছে ইউরোপ মধ্যপ্রাচ্য ও আমেরিকায়।

যুদ্ধবিধ্বস্ত জেরুজালেমের রাস্তাঘাটে এখন যে জনশূন্য পরিস্থিতি, তা যুদ্ধকালের চেয়েও ভয়াবহ। শহরটির ওল্ড সিটির ট্যুর অপারেটর মুনিব আবু আসাব সংঘাতের কারণে আগেও খাঁ খাঁ সড়ক দেখেছেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রভাবে সেখানকার অভিজ্ঞতা তিনি শেয়ার করেছেন। আসাবের এই অভিজ্ঞতা আজ বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

ফিলিস্তিনি নাগরিক আসাবের বয়স ৫৬ বছর। অতীতের অনেক যুদ্ধবিগ্রহের সাক্ষী। আর সেই তিনি এখন দেখছেন করোনার প্রাদুর্ভাব। যুদ্ধ ও করোনা—এই দুই পরিস্থিতির তুলনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে খারাপ বছর ২০২০।

এদিকে করোনা ঠেকাতে ইসরায়েল ভ্রমণের ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে। এরপর থেকেই বিপদে আছেন আসাব। এখন ট্যুর বাতিল করতে করতেই তাঁর দিন যায়।

এএফপির রিপোর্টে বলা হয়, ইসরায়েলে এখন পর্যন্ত ৪৩৩ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। আর দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে শনাক্ত হয়েছে ৪৪ রোগী। এ ছাড়া হাজারো মানুষ ‘সেলফ আইসোলেশন’ অবস্থায় আছে।

প্রয়োজন ছাড়া চলাফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। সব ধরনের ভ্রমণ ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জেরুজালেমের বর্তমান পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে আসাব জানান, আগে যখন যুদ্ধবিগ্রহ হাজির হয়েছিল, তখন ব্যবসায় মন্দাভাব এসেছিল। কিন্তু তখনো কিছু আয় হতো। তবে এখনকার পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। ভয়ে কোনো পর্যটক এখানে আসছেন না। দোকানপাট, মার্কেট—সব বন্ধ। জেরুজালেমের ওল্ড সিটি খাঁ খাঁ করছে।

প্রতিবছর ৩০ লাখের বেশি লোক জেরুজালেম পরিদর্শনে আসেন। জেরুজালেমের ওল্ড সিটি পর্যটকে ভরপুর থাকে।

ওল্ড সিটির এক নারী ব্যবসায়ী জানান, ওল্ড সিটি এখন এক মৃত শহর। অতীতের ঘটনাগুলো (যুদ্ধবিগ্রহ) ছিল রাজনৈতিক। কিন্তু এখনকার ইস্যুটি স্বাস্থ্যগত। করোনা নিয়ে মানুষ অনেক বেশি ভীত।

এদিকে ইতালিতে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। মৃত্যুপুরীতে পরিণত দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৭৫ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে ইতালিতে সব মিলিয়ে মারা গেলেন ২ হাজার ৯৭৮ জন। এখন পর্যন্ত যেকোনও দেশে করোনায় একদিনে এটাই সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড।

এদিকে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় লকডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে লন্ডন। ভাইরাসটির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পদক্ষেপ জোরদার করছে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকার। এর আওতায়, শুক্রবার থেকে দেশজুড়ে সকল স্কুল বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। দেশজুড়ে মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ২০ হাজার সেনা সদস্য।

প্রসঙ্গত, গত ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব প্রথম ধরা পড়ে। পরে তা চীনের অন্যান্য প্রদেশ এবং বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ইতালিতে। ইতালি থেকে পুরো ইউরোপ এবং আফ্রিকা ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এ ভাইরাস।

আপনি আরও পড়তে পারেন