করোনা চিকিৎসার ওষুধ তৈরি বাংলাদেশে

নভেল করোনা ভাইরাস (কভিড-১৯) মহামারি আকার ধারণ করেছে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে ১২ লাখ ১৫ হাজার ৬৯০ জন আক্রান্ত হয়েছেন, এতে মৃত্যু হয়েছে ৬৪ হাজার ৬৬৭ জনের। এ রোগে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে প্রায় আড়াই লাখ।

দিন দিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লেও এখনো কোনো ওষুধ বা ভ্যাকসিন তৈরি হয় নি, যা ভাইরাস মেরে ফেলতে পারে বা এর বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে। তবে গবেষকেরা বলছেন, অসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে গবেষণাকাজ এগিয়ে চলেছে। বর্তমানে ২০টির বেশি ভ্যাকসিন বা টিকার উন্নয়নে কাজ চলছে।

ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাস জনিত রোগের (কভিড-১৯) চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ তৈরি করেছে বাংলাদেশের দুই ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও বিকন ফার্মা।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, সাধারণ ঠান্ডা-সর্দির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় অ্যাভিগান নামে ওষুধটি, যেটির জেনেরিক নাম ফ্যাভিপিরাভির। জাপানি কোম্পানি ফুজি ফিল্মের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান তোয়ামা কেমিক্যাল ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসার জন্য এটি তৈরি করেছিল। এই ওষুধ ব্যবহার করে করোনা চিকিৎসায় দারুণ সাফল্য পায় বলে দাবি করে চীন। দেশটির ট্রায়ালে দেখা যায়, যাদের ওই ওষুধ দেওয়া হয়েছিল, অন্যদের তুলনায় তারা দ্রুত সেরে ওঠেন। ওষুধটি করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় বেশ কার্যকর।

অবশ্য জাপান এখনো করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসায় ওষুধটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়নি। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশে ফ্যাভিপিরাভির ওষুধটি তৈরি করে রেখেছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও বিকন ফার্মা। বেক্সিমকো শুধু ফ্যাভিপিরাভির নয়, প্রচলিত যেসব ওষুধ করোনা চিকিৎসায় ব্যবহারের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে, তার একটি বাদে সবগুলো তৈরি করছে। চাহিদা অনুযায়ী এসব ওষুধ তারা সরকারকে দেবে।

বেক্সিমকো ফার্মার প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রাব্বুর রেজা জানান, করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় সবচেয়ে কার্যকর হতে পারে আইভারমেকটিন। এটি সস্তা ও সহজলভ্য।

অস্ট্রেলিয়ার এবিসি নিউজের গতকাল শনিবারের এক খবরে বলা হয়, মোনাশ বায়োমেডিসিন ডিসকভারি ইনস্টিটিউট ও ডোহার্টি ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় জানানো হয়েছে, আইভারমেকটিন শরীরে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে পারে। যদিও বিষয়টি একেবারেই পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে।

বেক্সিমকো ফার্মার রাব্বুর রেজা বলেন, বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন ওষুধ পরীক্ষা করছে। আমরা রেমডেসিভির বাদে সবগুলোই তৈরি করে মজুত করছি। যাতে যে কোনো একটি কার্যকর প্রমাণিত হলে এবং অনুমোদন দেওয়া হলে আমরা সরকারকে সরবরাহ করতে পারি। তিনি বলেন, আইভারমেকটিনের কাঁচামালও আনা হচ্ছে। এটি তৈরি করা হবে।

বিকন ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ এমদাদুল করিম বলেন, আমরা ফ্যাভিপিরাভির ওষুধটি তৈরি করে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে দিয়েছি পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য। ওষুধটির কার্যকারিতা পাওয়া গেলে বাণিজ্যিক উৎপাদন করা যাবে।

তিনি বলেন, ওষুধটি মূলত ইবোলা ভাইরাসের চিকিৎসার জন্য জাপানের ফুজি তৈরি করেছিল। চীনারা এটি প্রয়োগ করে সুফল পায়। আমরা চীন থেকে অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যালস ইনগ্রিডিয়েন্ট এনেছি। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ওষুধ তৈরিতে মেধাস্বত্ব লাগে না।

এসব ওষুধ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়েই তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে কোম্পানিগুলো। বেক্সিমকো ও বিকনের বাইরে আরও দু-একটি কোম্পানি ওষুধগুলো তৈরির অনুমোদন নিয়েছে। এর মধ্যে একটি জিসকা ফার্মাসিউটিক্যালস।

জিসকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলাম খান বলেন, প্রয়োজন হলে আমরা ওষুধটি তৈরি করতে পারব।

ফুজি ফিল্মের এক মুখপাত্র বলেন, জুনের শেষ নাগাদ ১০০ জন রোগীর ওপর এই ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হবে। পুরো ট্রায়ালে আমরা তথ্য সংগ্রহ করব, বিশ্লেষণ করব, এরপর অনুমোদনের জন্য আবেদন করব।

তিনি বলেন, হালকা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ২০ থেকে ৭৪ বছর বয়সী রোগীদের ওপর এই ওষুধটি প্রয়োগ করা হবে। তবে প্রাণীর শরীরে পরীক্ষার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাওয়ায় অন্তঃসত্ত্বা নারীদের এই ওষুধ দেয়া হবে না।

এদিকে বিবিসি জানায়, একাধিক ধাপ পেরিয়ে মানুষের ওপর করোনা ভাইরাসের তিনটি টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে। এই পরীক্ষা চলছে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডে এবং চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে। এসব ট্রায়ালের সঙ্গে ৬৫০ জন মানুষ যুক্ত হয়েছেন।

অন্যদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, চারটি ওষুধ ও কয়েকটি ওষুধের সমন্বিত প্রয়োগ নিয়ে কাজ চলছে।

জার্মানির স্থানীয় কিছু সংবাদমাধ্যম সেদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বরাত দিয়ে খবরে জানিয়েছে, কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসার জন্য জাপান থেকে কয়েক লাখ ডোজ অ্যাভিগান কেনার পরিকল্পনা করছে জার্মানি।

আপনি আরও পড়তে পারেন