কেরানীগঞ্জে একদিনে ২ মৃত্যু, লাশের পাশে শুধু মা

করোনাভাইরাস বদলে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে। বদলে যাচ্ছে মানুষের আচার-আচরণও। সংক্রমিত হয়ে প্রাণ হারানোর ভয়ে কমে যাচ্ছে মানবিক বোধও। সেজন্যই কিনা গোটা বিশ্বের নানা প্রান্তে এখন নানা হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটছে।এমন টাই ঘটলো রাজধানী ঢাকার কেরানীগঞ্জের তেঘুরীয়া ইউনিয়নের আব্দুল্লাহপুর (কান্দাপাড়া) ও রুহিতপুর ইউনিয়নের সোনাকান্দা গ্রামে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, জ্বর-কাশি নিয়ে মারা যাওয়া তানিয়া (১৪) কে গোসল দিচ্ছে তার মা ও বোন ।পানি এনে দেয়ার লোকটিও পাওয়া যায়নি কাছাকাছি। স্থানীয়রা ভয়ে যারা যার বাড়িতে অবস্থান করতে দেখা গেছে। তবে দূর থেকে অনেক কে মা মেয়ের গোসলের দৃশ্য দেখতে দেখা গেছে। মায়ের বিলাপে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে আসছিল। তাকে সান্তনা দেয়ার লোকও চোখে পড়েনি।

তানিয়া (১৪) পিতা বিল্লাল দীর্ঘ ১৮/২০ বছর ধরে বসবাস করে এই এলাকায় ইউনুস মিয়ার বাড়িতে। চার দিন জ্বরে-কাশিতে ভোগে আজ ৬ এপ্রিল রাত ৩ টায় মারা যায় তানিয়া। অভাবের সংসারে সরকারি/বেসরকারি কোন হাসপাতালে না গিয়ে একাধিক ফার্মেসি থেকে ওষুধ এনেই কোনোরকমে নিজের রোগ সারতে চাইছিলেন। তিন মেয়ে দুই ছেলের এর মধ্যে তানিয়া চতুর্থ। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে, অভাবের কারণেই পড়াশোনা ছেড়ে অন্যের বসা বাড়িতে কাজ করতো মা মেয়েরা।

সম্প্রতি তানিয়ার শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। তার জ্বর ছিলো সাথে প্রচুর কাশির কথা যানায় স্থানীয় ও পরিবারের লোক জন। এর মধ্যে সারা কেরানীগঞ্জে ছড়িয়ে পরে করোনা আতঙ্কে। লকডাউন করা হয় কেরানীগঞ্জ মডেল টাউনের প্রায় ২০০শ বাড়ি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর ডাক্তার বলেন, করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা না গেলেও প্রতিবেশী বা স্বজনরা এগিয়ে আসেননি করোনাভাইরাস আতঙ্কে। মেয়ের শোক কাটিয়ে বাধ্য হয়ে লাশ গোসল করান মা ও মেয়ে। কাঁদতে কাঁদতেই মেয়ের লাশ গোসল দেয়ার দৃশ্য সবাই প্রথম দেখেছে মনে হলো।

স্থানীয় বাসিন্দা শেখ রাসেল জানান, আমরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়েছি। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইন্সপেক্টর এসে স্থানীয় দুই ফার্মেসীর মালিকের সাথে কথা বলে জানান, সে ভমি ও পাতলা পায়খানার কারণে পানিশূন্যতায় মারা গেছে।

অন্যদিকে একই দিনে রোহিতপুর ইউনিয়নের সোনাকান্দা গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তারে ভবঘুরে ও মাদকাসক্ত ছেলে দেলোয়ারও মারা যায় জ্বর কাশি নিয়ে। তার বাড়িতে গিয়েও দেখা গেছে একই দৃশ্য। পাশে মা বসা, গোসল ও কবর দেয়ার লোক না পেয়ে খবর দেয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত দেবনাথ এর উপস্তিতিতে তার নমুনা সংগ্রহ করে আঞ্জুমান মুফিজুল ইসলামের মাধ্যমে সমাহিত করা হয় সোনাকান্দা কবরস্থানে। সেখানেও দেখা গেছে অমানবিক চিত্র।

স্থানীয় মেম্বার আব্দুল মতিন জানান, কয়েকজন উপস্থিত থাকলেও কবরস্থ করার সময় দেখা যায়নি কোন প্রতিবেশী বা আত্মীয় ও সেচ্ছাসেবীদের কে। এলাকাবাসী করোনা ধারণা করলেও ডাক্তার বলেছে তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। তার পরও আমরা লাশের নমুনা সংগ্রহ করেছি। কাল পরশু এর ফলাফল জানা যাবে।

এই খবরটি ছড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয়দের মাঝে চলছে আলোচনা সমালোচনা। আজ থেকে সাধারণ লোকজনের মাঝে করোনাভাইরাস আতঙ্কে ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখতেও দেখা গেছে।

তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মীর মোবারক হোসেন জানান, মেয়েটি রাত ৩ টার সময় মারা গেলেও আমরা সকাল ৮ টায় শুনতে পাই। এতোক্ষণ পরে নমুনা সংগ্রহ করলে কোনো উপকারে আসবেনা। তবুও আমরা আমাদের মেডিকেল টীম পাঠিয়ে তাদের কৌতূহল মিটাতে পেরেছি। তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলেই জানান এই কর্মকর্তা।

আপনি আরও পড়তে পারেন