বাবা-ভাইয়ের কাঁধেই শবযাত্রা! খাটিয়াও জোটেনি; গ্রামবাসীও আসেনি

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বক্তারপুর গ্রামের ইটভাটার শ্রমিক আব্দুস সালাম (২২) করোনার উপসর্গ নিয়ে গত মঙ্গলবার নিজ বাড়িতে মারা যান। এ ঘটনার পর মরদেহ দাফনের সময় খাটিয়া না থাকার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

নিহতের পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, তারা লাশ কবরে নেয়ার জন্য খাটিয়া চেয়েও পাননি। তবে গ্রামবাসী স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলছেন, মরদেহ দাফনের জন্য খাটিয়া না পাওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মরদেহ কবরে নেয়ার জন্য একটি কফিন বক্স দেয়া হয়েছিল তারা সেটা নেয়নি। তবে নিহতের পরিরবারের সদস্যরা তার অসুস্থতা ও মৃত্যুও বিষয়টি প্রশাসনের কাছে জানানোর কারণে ক্ষিপ্ত ছিল। তাই তারা খাটিয়া কারো কাছে চায়নি।

মরদেহ দাফনের সময় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তারা তখন খাটিয়া না পাওয়ার বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেনি। এখন ছবি ভাইরাল হওয়ার সুযোগ নিচ্ছে।

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বক্তারপুর গ্রামের আব্দুস সালাম (২২) মৃত্যুর দুই সপ্তাহ আগে ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরেন। তিনি ঢাকায় দিনমজুরের কাজ করতেন। বাবা জয়বুল মিয়ার পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি মেজ। এলাকায় ফিরে হঠাৎ করেই আব্দুস সালাম সর্দি-জ্বরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ অবস্থায় গত ৭ এপ্রিল তিনি মারা যান। স্থানীয়রা করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়ায় পুলিশ ও প্রশাসনকে জানায়। পরে ওই এলাকা লকডাউন করে দেয় উপজেলা প্রশাসন। বুধবার সকালে মৃতদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। একইসঙ্গে তারা দাফনের জন্য মৃতদেহ গোসল করিয়ে দেয়। এরপরই বাধে বিপত্তি।

পরিবার থেকে মৃতদেহ বহনের জন্য স্থানীয় কান্দাপাড়া মসজিদে খাটিয়া চাওয়া হয়। কিন্তু পরিবারের অভিযোগ মসজিদের ইমাম, মুয়াজিনের অনুমতি না মেলায় তারা খাটিয়া পাননি। এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে আব্দুস সালাম মারা গেছেন জেনে প্রতিবেশী, সমাজের কেউ এ সময় এগিয়ে আসেননি।

বক্তারপুর গ্রামের মুরুব্বি আসকর আলী বলেন, মৃত্যুর ঘটনা গ্রামবাসী ও ইউপি সদস্য প্রশাসনকে জানানোর কারণে আব্দুস সালামের মা রাগান্বিত ছিলেন। তিনি শুরু থেকে প্রশাসনকে জানানো বিষয়টি বিরোধিতা করছিলেন।

তিনি বলেন, আইনের লোক আনলে কিতা হইবো আমার পুত করোনা রোগে মারা যায়নি। তারে গোছল দিয়ে লাশ দাফন করা হোক।

একই গ্রামের কাবিল আহমদ বলেন, সালামের অসুস্থতা ও মৃত্যুও বিষয় প্রশাসনকে জানানো ও কোয়ারেন্টাইন পালন করার বিষয়টি বলার পর থেকে পরিবারের সদস্যরা গ্রামের মানুষের ওপর অসন্তুষ্ট ছিলেন। মরদেহ দাফনের জন্য খাটিয়া নিতে কেউ বাধা নিষেধ করেনি।

মরদেহ নেয়ার জন্য কফিন দেয়া হয়েছিল। রাগে তারা তা ব্যবহার করেননি। কাঁধে নিয়ে মরদেহ দাফন করেছেন।

সালামের বাবা জয়বুল মিয়া বলেন, আমরা নিজের হাতে লাশ গোসল দিয়ে দাফন করার কথা বলে ছিলাম কিন্তু তারা কেউ কথা শুনেননি, গ্রামের কেউ দাফনে এগিয়ে আসেননি। পরে আমার দুই ছেলে আব্দুল খালিক ও আমি মরদেহ কাঁধে নিয়ে গিয়ে দাফন করেছি।

নিহতের মা সালেমা খাতুন বলেন, আমার পুত করোনায় মারা যায়নি। সে অসুস্থ ছিল তাই আল্লাহ তাকে নিয়ে গেছে। আমি গ্রামবাসীকে বলে ছিলাম মরদেহ গোসল দিয়ে দাফন করতে কিন্তু গ্রামের কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে বলছিলাম গ্রামের কেউ গোসল না দিলে আমার দুই ছেলে ও স্বামীর গোসল দেয়ার কথা তারা তাও মানেননি। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আমার মতবিরোধ কথাকাটাকাটি হয়েছিলো।

লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ৯ নং সদস্য মোহাম্মদ শরিফুল্লাহ বলেন, করোনাভাইরাসের ভয়ে হয়তো খাটিয়া চেয়েও কেউ পায়নি বা দেয়নি। তখন গ্রামবাসী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে আতঙ্কে ছিল।

অন্যদিকে খাটিয়া পরিবহনের জন্য চার জন লোক লাগে ছবিতে তিন জনকে মরদেহ কাঁধে নিয়ে যেতে দেখা যায়। মৃত্যুর বিষয়টি প্রশাসনকে জানানোর পর থেকে নিহতের পরিবারের সদসর‌্যা মনোক্ষুণ্ন ছিলেন। তারা গ্রামের মানুষের সঙ্গে অশোভনীয় কথাবার্তা বলেছেন। এ প্রসঙ্গে দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাশেম বলেন, মানুষ যতটা বলছে, আমার মনে হয় না ঘটনা এভাবে ঘটেছে। মরদেহ বহন করার জন্য পরিবার খাটিয়া চায়নি। চাইলে অবশ্যই মসজিদ কমিটি দিতো। মসজিদ কমিটি না দিলে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা ব্যবস্থা করতাম।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন