লকডাউন এর মধ্যে ১,৪০০ কিলোমিটার স্কুটি চালিয়ে মা ছেলেকে উদ্ধার করলো

প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চলছে লকডাউন। হঠাৎ করে এই লকডাউন জারি হয়ে যাওয়ায় অসংখ্য মানুষ নিজের ঘরবাড়ি থেকে দূরে আটকে পড়েছেন।

এমনভাবেই ভারতের তেলেঙ্গানা থেকে অন্ধ্রপ্রদেশ গিয়ে আটকে পড়ে এক কিশোর। কিন্তু ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে ত্রাতা হলেন তার মা।

এনডিটিভি জানায়, রাজিয়া বেগম নামের ওই নারী নিজের ছেলেকে উদ্ধারের জন্যে স্থানীয় পুলিশের অনুমতি নিয়ে নিজের স্কুটিতে করে অন্ধ্রপ্রদেশের নেল্লোরে যান। একাই টানা তিনদিন ১,৪০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ছেলেকে স্কুটির পেছনে বসিয়ে বাড়ি ফেরেন রাজিয়া।

ছেলেকে ঘরে ফেরানোর জন্য তিনদিনের এক যুদ্ধ জয় করে ৪৮ বছর বয়সী রাজিয়া বলেন, ‘একটি ছোট দু-চাকার গাড়িতে একা একজন নারীর পক্ষে এই সফর করা মোটেও সহজ ছিল না। তবে ছেলেকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতেই হবে, আমার এই অদম্য ইচ্ছার সামনে সব ভয় অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। আমি সাথে শুধু কয়েকটি রুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে ছিলাম। রাতে যানজট নেই, রাস্তায় কোনও লোক নেই, যদিও রাস্তাঘাট এত ফাঁকা থাকায় ভয়-ভয় করছিল, তবে আমি আমার সিদ্ধান্তে স্থির ছিলাম।’

রাজিয়া হায়দরাবাদ থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে নিজামবাদে একটি সরকারি স্কুলে চাকরি করেন। ১৫ বছর আগে তার স্বামী মারা যান। তারপর থেকে দুই ছেলেকে সাথে নিয়ে একা হাতেই জীবনযুদ্ধে লড়ে চলেছেন তিনি।

তার বড় ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক। ছোট ছেলে নিজামুদ্দিন, যাকে তিনি অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে নিয়ে আসতে গিয়েছিলেন, সে পড়াশোনা করে চিকিৎসক হতে চায়।

নিজামুদ্দিন কিছুদিন আগেই দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে এবং এখন সে এমবিবিএস পরীক্ষায় পাশ করার জন্যে বিশেষ কোচিং করছে। গত ১২ মার্চ নেল্লোরের রহমতবাদে এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছিল। তার কিছুদিন পরেই করোনার কারণে গোটা দেশে লকডাউন ঘোষিত হওয়ায় বন্ধুর বাড়িতেই আটকে পড়ে সে। সে চাইছিল বাড়ি ফিরতে, কিন্তু কোনও যানবাহন না থাকায় ফেরার কোনও উপায় ছিল না।

ছেলের এই অবস্থা দেখে রাজিয়া বেগম ঠিক করেন যে তিনি ছেলেকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনবেন। পুলিশের ভয়ে তিনি বড় ছেলেকে না পাঠিয়ে নিজেই স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন।

গত সোমবার সকালে তিনি তেলেঙ্গানার বাড়ি থেকে বের হন, পুরোদিন স্কুটি চালিয়ে পরদিন বিকালে নেল্লোর পৌঁছান। তারপর সেখান থেকে ছেলেকে সাথে নিয়ে ফের বাড়ির দিকে রওনা হন তিনি। বুধবার সন্ধ্যার দিকে বাড়িতে ফেরেন অদম্য সেই মা।

আপনি আরও পড়তে পারেন