শ্রীলঙ্কায় করোনায় মৃতদের পোড়ানোর নির্দেশ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন উপেক্ষা করে করোনাভাইরাসে মৃতদের পোড়ানোর (শবদাহ) জন্য সরকারি নির্দেশনা জারি করেছে শ্রীলঙ্কা। বায়োলজিক্যাল ঝুঁকির অজুহাতে নতুন এই নির্দেশনার গেজেট শনিবার (১১ এপ্রিল) প্রকাশ হয়েছে। এর ফলে ওই দেশের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

গেজেটে বলা হয়েছে, কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মৃত বা আক্রান্তের সন্দেহ করা হচ্ছে, এমন মৃত ব্যক্তিদের লাশ ৮০০ ডিগ্রি থেকে ১ হাজার ২০০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা পোড়াতে হবে। এ ধরনের লাশ আত্মীয়-স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা যাবে না। শবদাহ করতে পারবে এমন কর্তৃপক্ষের কাছে ওই মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। গেজেটে আরও বলা হয়েছে, করোনায় মৃতদের মরদেহ গোসল করানো যাবে না। একটি ব্যাগে ভরে তা কফিনে রাখতে হবে, যা ইসলামে লাশের গোসল করানো রীতিবিরোধী।

আজ রবিবার পর্যন্ত করোনায় মৃত কয়েকজন মুসলমানের মরদেহ দাহ করা হয়েছে। এ বিষয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সরকার। মুসলিম নেতা ও অ্যাক্টিভিস্টরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকার কথা তুলে ধরেছেন, যাতে মহামারির সময় দাফন ও শবদাহ উভয় পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে।

দেশটির প্রখ্যাত আইনজীবী আলি সাবরি ফেসবুকে এক পোস্টে কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ইসলাম ধর্মের রীতিতে শবদাহ অনুমোদিত না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও লাশ দাফনে কোনও সমস্যা পায়নি।

ইসলাম ও ইহুদি ধর্মে শবদাহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শ্রীলঙ্কায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২০৩ জন এবং মৃত্যু হয়ছে ৭ জনের। মৃতদের মধ্যে অন্তত তিন জন মুসলিম রয়েছেন। মুসলিম কাউন্সিল অব শ্রীলঙ্কার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিলমি আহামেদ আল জাজিরাকে বলেছেন, মুসলিম সম্প্রদায় এই নির্দেশকে সরকারকে জিম্মি করে চরমপন্থী বৌদ্ধশক্তির বর্ণবাদী এজেন্ডা হিসেবে দেখছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা মেনে চলা হচ্ছে ব্রিটেনসহ বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশে, সিঙ্গাপুর, হংকং এবং সব মুসলিম দেশে। শুধু শ্রীলঙ্কা ব্যতিক্রম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত বাংলাদেশ মিশন সত্যতা স্বীকার করে জানায়, তারা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল শ্রীলঙ্কা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় দাফনরীতির অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার জন্য।

অন্যান্য দেশে কি অবস্থা

পৃথিবীর অন্য কোনও দেশে করোনায় মৃতদের শবদাহ করতে হবে এমন নির্দেশনা জারি করা হয়নি। শুধু তা-ই নয়, অনেক দেশে মৃতদেহ সৎকারের বিষয়টি সহজ করা হয়েছে। ইটালিতে কর্মরত একজন বাংলাদেশি কূটনীতিক জানান, ‘আগে এখানে কবর দিতে হলে ২ হাজার ২০০ ইউরো খরচ হতো। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর কবর দেওয়ার খরচ ১ হাজার ইউরোতে কমিয়ে আনা হয়েছে।’

আপনি আরও পড়তে পারেন